ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২০ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ৭ ১৪৩১

ফারুক হত্যা: সা‌বেক এম‌পি রানাসহ ৪ ভাই খালাস

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪০, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৮:২৫, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ফারুক হত্যা: সা‌বেক এম‌পি রানাসহ ৪ ভাই খালাস

আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার আসামি স‌হিদুর রহমান খান মু‌ক্তি রায় ঘোষণা সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। টাঙ্গাইলের অ‌তি‌রিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালত থেকে তোলা ছবি

টাঙ্গাইলের আলোচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় কবির উদ্দিন এবং মোহাম্মদ আলী নামে দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই মামলায় টাঙ্গাইল-৩ আস‌নের সা‌বেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাইসহ ১০ জনকে খালাস দিয়েছেন বিচারক। 

ররিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সা‌ড়ে ৩টার দি‌কে টাঙ্গাইলের অ‌তি‌রিক্ত জেলা দায়রা জজ প্রথম আদাল‌তের বিচারক মাহমুদুল হাসান রায় ঘোষণা ক‌রেন। এই মামলায় ১৪জন আসামি ছিলেন। তাদের ম‌ধ্যে দুইজন কারাগারে মারা যান। তারা হলেন- আনিসুল ইসলাম রাজা ও মো. সমীর।

খালাস পাওয়া সা‌বেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ভাইরা হলেন- সহিদুর রহমান খান মু‌ক্তি, জা‌হিদুর রহমান খান কাকন ও সা‌নিয়াত রহমান খান বাপ্পা‌।

আরো পড়ুন:

অন্য খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- সানোয়ার হোসেন সানু, নূরু, বাবু, ফরিদ হোসেন, মাসুদুর রহমান, আলমগীর হোসেন চাঁনে।

রায় ঘোষণার সময় স‌হিদুর রহমান খান মু‌ক্তি আদালতে উপ‌স্থিত থাক‌লেও তার অন্য ভাইসহ বা‌কি আসামিরা অনুপস্থিত ছিলেন। 

আসামি প‌ক্ষের আইনজী‌বী অ্যাড‌ভো‌কেট না‌সির উদ্দিন খান ব‌লেন, “এই মামলায় ২৭ জ‌ন স্বাক্ষী রাষ্ট্রপক্ষ উপ‌স্থাপন ক‌রে‌ছিল। আসামিরা যে এই ঘটনার সঙ্গে জ‌ড়িত ছিল তা কেউ প্রমাণ করতে পারেননি। যখন ঘটনা দেখা‌নো হ‌য়ে‌ছিল, তখন স‌হিদুর রহমান খান মু‌ক্তি সস্ত্রীক ভার‌তে ছি‌লেন চি‌কিৎসার জন্য, তার ভাই কাকন মালয়েশিয়াতে ছিলেন, সা‌বেক সংসদ সদস্য রানা ঘাটাইলের এক‌টি অনুষ্ঠা‌নে ছিলেন এবং তা‌দের ছোট ভাই বাপ্পা ঢাকায় ছাত্রলী‌গের অ‌ফি‌সে ছি‌লেন।” 

তি‌নি আরো ব‌লেন, “রাজনৈ‌তিকভা‌বে তা‌দের‌ মিথ্যা মামলায় জড়া‌নো হ‌য়ে‌ছিল। এই রায়ের মাধ্যমে আমরা ন্যায় বিচার পে‌য়ে‌ছি।” 

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নিহত ফারুক আহমেদের ছেলে আহমেদ মজিদ সুমন ফোনে বলেন, “মামলা দায়ের থেকে তদন্ত, আদালতে অভিযোগ গঠন, সাক্ষী গ্রহণ বিভিন্ন পর্যায়ে আসামিরা বিচারপ্রক্রিয়া বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করেছেন। এই মামলার আসামিদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী নেতারা। তারা ৫ আগস্টের পর আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এই সব আইন কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। এর আগেও আসামীদের ভয়ে আইনজীবীরা স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।”

টাঙ্গাইল আদালতে রাষ্ট্রপ‌ক্ষের কৌশলী এপি‌পি সাইদুর রহমান স্বপন ব‌লেন, “আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় দুইজন‌কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এছাড়া ৫ লাখ টাকা জ‌রিমানা করা হ‌য়ে‌ছে। অনাদা‌য়ে তাদের এক বছ‌রের কারাদণ্ড প্রদান ক‌রেন বিচারক। এই মামলার আসামি সা‌বেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাইসহ ১০ জনের বিরু‌দ্ধে স‌ন্দেহাতীতভা‌বে সাক্ষ্য প্রমাণ না হওয়ায় তা‌দের‌ খালাস দি‌য়ে‌ছেন আদালত।”

তি‌নি আরো ব‌লেন, “এই মামলায় বাদীর সঙ্গে আলোচনা ক‌রে আপি‌লের বিষয়ে পদ‌ক্ষেপ নেওয়া হ‌বে।” 

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার হয়। ঘটনার তিন দিন পর নিহতের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় নাম না জানা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। 

২০১৪ সালের আগস্টে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামে দুইজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তারা আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার নাম উঠে আসে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওয়াহেদ, আবদুল খালেক ও সনি আদালতে জবানবন্দি দেন। এরপর চার ভাই আত্মগোপনে চলে যান। আমানুর রাহমান খান রানা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিন বছর হাজতে থাকার পর জামিন পান তিনি। গত বছরের ৫ আগস্টের পর তিনি আবারো আত্মগোপনে  যান। অপর দুই ভাই ২০১৪ সাল থেকে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। 

গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফিজুর রহমান ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। বিচার চলাকালে দুই আসামি আনিছুর রহমান ওরফে রাজা ও মোহাম্মদ সমির কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। গত ২৬ জানুয়ারি ফারুক হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়।

এক নজরে ফারুক হত্যা মামলা-
*২০১৪ সালে ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজ পাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে ফারুক আহমেদের লাশ উদ্ধার।
* তিনদিন পর (২১ জানুয়ারি) নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদি হয়ে নাম না জানা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা।
* হত্যায় তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার ভাইদের জড়ির থাকার কথা উল্লেখ করে ২০১৪ সালের আগস্ট আনিছুল ইসলাম রাজা ও  মোহাম্মদ আলীর আদালতে জবানবন্দি প্রদান।
* ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযোগপত্র জমা।
* ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু।
* ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার স্বাক্ষ্য গ্রহণ।
* গত ২৬ জানুয়ারি মামলার যুক্তিতর্ক শেষ।

ঢাকা/কাওছার/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়