ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ভাঙন আতঙ্কে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দারা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৩, ২১ জুন ২০২৫   আপডেট: ১৮:২৬, ২১ জুন ২০২৫
ভাঙন আতঙ্কে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দারা

ঘর বিলীনের আতঙ্কে রয়েছেন ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের বাসিন্দারা

ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমতে শুরু করলেও গাইবান্ধার নদী বেষ্টিত কয়েকটি গ্রামে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। আতঙ্কে ঘরসহ গৃহপালিত পশু সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিচ্ছেন এলাকাবাসী। হুমকির মুখে পড়েছে স্কুল, মসজিদ-মাদরাসাসহ ফসলি জমি।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ঘেঁষা একটি ইউনিয়ন উড়িয়া। এখানকার শতাধিক পরিবারের মানুষ ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। প্রশাসন থেকে ভাঙন রোধে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। 

আরো পড়ুন:

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ফুলছড়ির উড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর উড়িয়া থেকে কটিয়ারভিটা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে এই ইউনিয়নের কটিয়ারভিটা, উত্তর উড়িয়া, কালাসোনা, জোড়াবাড়ি, কাবিলপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রাম।

কাটিয়ারভিটা গ্রামের বৃদ্ধা জমিলা বেগম বলেন, “প্রত্যেক বছর বানের পানি আসে আর হামরা ঘরবাড়ি নিয়্যা দৌঁড়াদৌঁড়ি করি। যতগুল্যা আবাদি জমি ছিল, ভাঙতে ভাঙতে সগি (সব) শ্যাষ। এখন মানষের জাগাত যায়া ঘর তুলি থাকি।” 

উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য হায়দার আলী বলেন, “গত বছরও ভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এবারও সেই পুরোনো আতঙ্ক ফিরে এসেছে। এরই মধ্যে কাটিয়ারভিটা এলাকার দড়িয়ার পাড়ায় প্রায় ১৫০ ফুট নদীর পাড় ভেঙে গ্রামের ভিতরে প্রবেশ করেছে। নদীর তীব্র স্রোতে কটিয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উড়িয়া কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ কালিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দড়িয়ার ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক বসত বাড়ি, একটি বাজার, কবরস্থান, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও আবাদি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘বারবার নদী ভাঙনে এলাকার অনেকের ঘর ও ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। আবারো ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরকে জানানো হয়েছে। তারা এখনো কাজ শুরু করেনি।”

কটিয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা মজিবুর মুন্সি বলেন, “বৃষ্টি আর উজানের ঢলে এই এলাকায় আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। বিদ্যালয়টি এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে যেকোনো সময় বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”

একই ইউনিয়নের হাজিরহাট গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা নদী পাড়ের মানুষ খুব অসহায়। নদী পাড়ে একটা দোকান দিয়েছিলাম। হঠাৎ করেই ভাঙন শুরু হওয়ায় দোকানটি সরিয়ে নিয়েছি।”

উড়িয়া ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহসিন মাস্টার বলেন, “প্রতিবছর নদী ভাঙনে ভিটে হারানোর আতঙ্কে পড়েন ফুলছড়ি উপজেলার হাজার হাজার ব্রক্ষপুত্র তীরবর্তী মানুষ। স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙনের কবলে পড়ে একসময় হয়তো অনেক গ্রাম বিলুপ্ত হয়ে যাবে।”

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, “ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের কাটিয়ারভিটাসহ কয়েকটি গ্রাম ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। আগামীকাল রবিবার (২২ জুন) থেকে ডাম্পিং শুরু করা হবে। ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।” 

তিনি আরো বলেন, “গাইবান্ধার সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। কয়েকদিন আগে পানি বৃদ্ধি শুরু হলেও, আবার তা কমতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি নিয়ে আপাতত চিন্তার কিছু নেই।” 

ঢাকা/মাসুম/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়