ঢাকা     বুধবার   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ২ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

একনেকে মানসিক হাসপাতালের উন্নয়নে প্রকল্প পাসে খুশি পাবনার মানুষ

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৪, ২২ অক্টোবর ২০২৫   আপডেট: ১৯:০২, ২২ অক্টোবর ২০২৫
একনেকে মানসিক হাসপাতালের উন্নয়নে প্রকল্প পাসে খুশি পাবনার মানুষ

অবহেলা, অযত্ন ও গাফিলতিতে সু-চিকিৎসা পাচ্ছিলেন না দেশের প্রায় সোয়া চার কোটি মানসিক রোগী। তবে এই সব মানসিক রোগীদের সুচিকিৎসা ও গবেষণার জন্য যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য গত সোমবার (২০ অক্টোবর) জাতীয় অর্থনেতিক নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এই প্রকল্প অনুমোদনের খবরে পাবনার মানুষ খুশি হয়েছে। 

এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাবনা মানসিক হাসপাতাল আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তর হবে। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাবনা মানসিক হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৫০০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এক হাজার হবে। সঙ্গে থাকবে গবেষণা, কেস স্টাডি ও মানসিক রোগীদের পুর্নবাসন। 

আরো পড়ুন:

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের উদ্যোগে প্রায় দুই বছর আগে এই প্রকল্প নেওয়া হয়। অজ্ঞাত কারণে একনেকে অনুমোদনের আগে তা স্তিমিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং একনেকে প্রকল্পটি উত্তোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

পাবনা মানসিক হাসপাতাল সূত্র জানায়, দেশে জনসংখ্যার প্রতি চারজনে একজন মানসিক রোগী রয়েছে। সেই হিসাব অনুযায়ী ১৭ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশে প্রায় সোয়া চার কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে মানসিক রোগে আক্রান্ত। বিপুল এই জনগোষ্ঠীর চিকিৎসায় পাবনা মানসিক হাসপাতাল ও ঢাকার মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ছিল মূল ভরসা। ২০২৫ সালের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মানসিক স্বাস্থ্য একটি সার্বজনীন মানবাধিকার’। এই প্রতিপাদ্য ছিল স্তরে স্তরে উপেক্ষিত।

পাবনা মানসিক হাসপাতাল সূত্র আরও জানায়, এই সোয়া চার কোটি মানুষের মধ্যে নারী ও পুরুষ মিলে প্রাপ্ত বয়স্করা ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং শিশু-কিশোররা ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ রোগী। পাবনা মানসিক হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৫০০। এর মধ্যে ৩৫০টি জেনারেল বেড এবং ১৫০টি পেয়িং বেড। সব বেডে রোগীতে ভর্তি থাকে সারা বছর। দেশের বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসাও অপ্রতুল। ঢাকার মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে ১০০ মানুষ চিকিৎসা নিতে পারে। ফলে চিকিৎসা সেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে অধিকাংশ রোগী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, একজন মানসিক রোগীর জন্য দিনে ১০ প্রকারের ঔষধ প্রয়োজন হয়। অর্থভাবে সেখানে মাত্র ৩ প্রকারের ঔষধ দেওয়া হচ্ছে। খাবার নিয়ে রয়েছে নানা সমস্যা। নিম্নমানের খাবারের ফলে রোগীরা প্রোটিনের অভাবে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া অন্তত সাতজন রোগী সুস্থ হওয়ার পরও দীর্ঘ ৪০ থেকে ৫০ বছর হাসপাতালে রয়েছেন।

সারা দেশের মানসিক রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে পাবনা শহরের শীতলাই হাউজে অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয় পাবনা মানসিক হাসপাতাল। এর দুই বছর পর ১৯৫৯ সালে পাবনা শহরের অদূরে হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালটি। প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ছিল ৬০টি। সময়ের চাহিদায় যা বৃদ্ধি করা হয় ৫০০ শয্যায়। শয্যা সংখ্যা বাড়লেও সেই তুলনায় বাড়েনি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চিকিৎসকের পদ। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। স্বল্পসংখ্যক কর্মচারী দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের বহিঃবিভাগে রোগী দেখার সময় সীমা ও হাসপাতাল চত্বরের যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে রয়েছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের অভিযোগ।

বর্তমানে এই হাসপাতালে ৩১টি চিকিৎসকের পদে কর্মরত রয়েছেন ২২ জন। ১১৯টি তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর পদের বিপরীতে ৭২ জন আর ১৭০টি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর পদের বিপরীতে কর্মরত আছে মাত্র ৬১ জন।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সেলিম মোরশেদ বলেন, ‘‘একজন মানসিক রোগীর জন্য মেডিসিন, সেবা ও শারীরিক প্রোটিন অপরিহার্য। কিন্তু তা মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না। একনেকে এই প্রকল্প পাসের মাধ্যমে দেশের মানসিক রোগীদের চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হবে।’’ 

পাবনা মানসিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. এহিয়া কামাল বলেন, ‘‘হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১২০০ তে উন্নীত করার কথা থাকলেও ১০০০ শয্যা করা হয়েছে। এটাই সুখবর। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের আরো বেশি মানসিক রোগী চিকিৎসা পাবে।’’ তবে শয্যা সংখ্যার পাশাপাশি যেন জনবলও সেই হারে বাড়ানো হয় সেই দাবি জানান তিনি।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস তার ভেরিফাইড ফেসবুকে লেখেন, ‘‘আলহামদুলিল্লাহ, দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত ‘মানসিক হাসপাতাল, পাবনাকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রূপান্তর প্রকল্প’ আজ একনেকে অনুমোদন পেয়েছে।’’ 

পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এই প্রকল্প অনুমোদনের মধ্যে দিয়ে এই সরকার পাবনাবাসীর কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’’ তিনি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও শিমুল বিশ্বাসের চেষ্টার কথাও স্মরণ করেন। 

ঢাকা/শাহীন/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়