ঢাকা     বুধবার   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ২ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

যে পুকুরে ভেসে উঠত সোনার চালুনী

মঈনুদ্দীন তালুকদার হিমেল, ঠাকুরগাঁও || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১০, ২৩ অক্টোবর ২০২৫   আপডেট: ১৫:১২, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
যে পুকুরে ভেসে উঠত সোনার চালুনী

সোনাচালুনী পুকুর

অলৌকিক গল্প আমরা প্রায়ই শুনি কিন্তু কোনো কোনো গল্প যেন সময়ের স্রোত পেরিয়েও জীবন্ত হয়ে থাকে মানুষের বিশ্বাসে। একসময় আহ্বান জানালেই পুকুরের পানিতে ভেসে উঠতো সোনার চালুনী। সেই চালুনীতে থাকতো বিয়ের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সোনার গয়না পর্যন্ত! 

এই আশ্চর্য কাহিনীকে কেন্দ্র করে পুকুরটির নাম রাখা হয় ‘সোনাচালুনী’। আর সেই পুকুরের পাশে গড়ে ওঠে একটি বিদ্যালয়, যার নামও রাখা হয় সোনাচালুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। 

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ি ইউনিয়নের শান্তিপূর্ণ গ্রাম বিষ্ণপুর। সবুজে ঘেরা শান্ত এই গ্রামেই রয়েছে এক রহস্যময় ইতিহাস ‘সোনাচালুনী পুকুর’। প্রথমে মাছ চাষের জন্য খনন করা হলেও, পরে এটি পরিণত হয় এক অলৌকিক গল্পের পটভূমিতে।

জনশ্রুতি আছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যখন বিয়ে বা বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন, তখন তারা এই পুকুরে আহ্বান জানাতেন। আর অদ্ভুতভাবে পানির ওপর ভেসে উঠতো সোনার চালুনী। সেই চালুনীতে থাকতো বিয়ের আসবাবপত্র, বাসনপত্র এমনকি সোনার অলংকারও। অনুষ্ঠান শেষে সব কিছু আবার পুকুরে ফিরিয়ে দিলে, সেগুলো পানির সাথে ভেসে অদৃশ্য হয়ে যেত। তবে অনেকের বিশ্বাস- পুকুরে কোনো দেবতা রয়েছে।

স্থানীয়দের মতে, ব্রিটিশ আমলে পুকুরটি খনন করেছিলেন তৎকালীন জমিদার দিননাথ মোহন। পুকুরটি মাছ চাষের জন্য খনন করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এটি ঘিরে গড়ে ওঠে এক অলৌকিক কাহিনি— যা আজও মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। 

বিষ্ণপুরের স্থানীয় বাসিন্দা শ্রী ডাবলু চন্দ্র বর্মন জানান, তাদের পূর্বপুরুষরা এই অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন বলে শুনেছেন তারা। একসময় পুকুরে আহ্বান জানালে সোনার চালুনী ভেসে আসতো। কিন্তু একদিন, এক ব্যক্তি অনুষ্ঠান শেষে সোনার সম্পূর্ণ জিনিসপত্র ফিরিয়ে না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন। তারপর থেকেই রহস্যময়ভাবে বন্ধ হয়ে যায় সেই ‘সোনার চালুনী’র ভেসে ওঠা। কথিত আছে, সেই জিনিসপত্র যিনি নিজের কাছে রেখেছিলেন, পরবর্তীতে তিনি ও তার পরিবার নানা দুর্ভাগ্যের শিকার হন।

১৯৭০ সালের দিকে পুকুরটির মালিক হন নফিজ উদ্দিন ও তার ছেলে ওয়াজেদ চৌধুরী। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে তারা পুকুরের পাশের জমি বিদ্যালয়ের জন্য দান করেন। সেই থেকেই পুকুরের নাম অনুসারে বিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় সোনাচালুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সোনাচালুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শেফালী রাণী শর্মা বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি, এই পুকুরে সোনার চালুনী ভেসে আসতো। সেই কারণেই বিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় সোনাচালুনী। এখন যদিও এটি কল্পকথা হয়ে গেছে। তবে ঘটনাটি খুব বেশি সময় আগের না। এইতো একশ’ বছর হতে পারে। তাই স্থানীয়দের মনে বিষয়টি এখনও তরতাজা। বয়ষ্কদের অনেকেরই পিতা-মাতা নিজেরা এই ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন। তাই আমরা এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।”

সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেছে অলৌকিক সেই দৃশ্য, কিন্তু এখনো এই পুকুরকে ঘিরে ভেসে বেড়ায় রহস্যের ছায়া। সময় বদলেছে, প্রজন্ম পাল্টেছে, কিন্তু সোনাচালুনীর গল্প এখনো বেঁচে আছে মানুষজনের বিশ্বাসে, তাদের মুখের কথায়।

ঢাকা/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়