ঢাকা     বুধবার   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ২ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সাপে কাটা রোগীদের জন্য রামেক হাসপাতালে বিশেষায়িত ওয়ার্ড

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫১, ২৩ অক্টোবর ২০২৫  
সাপে কাটা রোগীদের জন্য রামেক হাসপাতালে বিশেষায়িত ওয়ার্ড

শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত একটি ওয়ার্ড চালু করল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। এটি দেশের কোনো হাসপাতালে সাপা কাটা রোগীদের জন্য প্রথম বিশেষায়িত ওয়ার্ড। এর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সীমিত পরিসরে স্নেকবাইট ক্লিনিক চালু করা হয়েছিল। সাপের দংশনে মৃত্যুর হার কমাতে রামেক হাসপাতাল বিশেষায়িত ওয়ার্ডটি চালু করা হলো।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ এ ওয়ার্ড উদ্বোধন করেন। হাসপাতালের পুরনো ক্যানটিনের জায়গায় ১২ শয্যার হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) মানের এ ওয়ার্ড করা হয়েছে। সাপে কাটা রোগীদের শ্বাসকষ্ট হয়, হার্ট ফেইল করার ঝুঁকি থাকে। এসব সমস্যারও চিকিৎসা হবে এ ওয়ার্ডে।

হাসপাতালে আসা সাপে কাটা সব রোগীই চিকিৎসা পাবেন। তবে, শয্যা পাবেন ৮ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী। ওয়ার্ডের ফোকাল পারসন হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু শাহীন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তিনি বর্তমানে রাসেলস ভাইপার সাপের বিষের ওপর পিএইচডি করছেন, যা শেষ পর্যায়ে আছে।

রমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২০৫ জন সাপে কাটা রোগী এসেছেন এ হাসপাতালে। তাদের মধ্যে ২৬০ জন বিষধর সাপের কামড় খেয়ে এসেছিলেন। বাকিদেরকে নির্বিষ সাপ দংশন করেছিল। হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে ৩০ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয় রাসেলস ভাইপারের কামড়ে। বাকিরা কালাচ বা কেউটে ও গোখরা সাপের কামড়ে মারা গেছেন। 

মৃত্যুহার কমিয়ে আনার জন্য ডেঙ্গু, করোনা ও নিপাহ ভাইরাসের মতো সাপে কাটা রোগীদের জন্যও বিশেষায়িত ওয়ার্ড করার সিদ্ধান্ত নেন রমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ। এজন্য আগে চিকিৎসক ও নার্স বাছাই করা হয়। তাদের স্নেকবাইট ন্যাশনাল গাইডলাইন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়।

ওয়ার্ডের ফোকাল পারসন ডা. আবু শাহীন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেছেন, “২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত হাসপাতালে রাসেল ভাইপারের কামড়ে মৃত্যুহার ছিল ২৭ শতাংশ। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এ হার এখন অনেক কমে এসেছে। নতুন বিশেষায়িত ওয়ার্ডে সমন্বিত চিকিৎসা (ইন্টিগ্রেটেড ট্রিটমেন্ট) দেওয়া যাবে। সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধান থাকবেন রোগীরা। পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনমের মজুত রাখা হবে। ফলে, মৃত্যুহার আরো কমবে।”

তিনি জানান, সাপে কাটা রোগীদের অ্যান্টিভেনমের প্রতিটি ডোজের দাম প্রায় ১৩ হাজার টাকা। একটি ডোজে ১০ ভায়াল অ্যান্টিভেনম লাগে। কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে একাধিক ডোজ প্রয়োজন হয়। রোগীরা রমেক হাসপাতাল থেকেই পুরোপুরি বিনামূল্যে এ ওষুধ পাবেন। রোগী ওয়ার্ডে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার চিকিৎসা শুরু হবে। এক মিনিটও বিলম্ব হবে না।”

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেছেন, “সাপে কাটা রোগীরা এমনিতেই দেরি করে হাসপাতালে আসেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাসপাতালেও চিকিৎসা শুরু হতে একটু দেরি হতো। দেখা যেত, বড় একটা ওয়ার্ডের এক কোণায় রোগীরা থাকতেন। এখন ভালো হলো। এটা একেবারেই মেডিকেল ইমার্জেন্সি ইউনিট। এইচডিইউ সুবিধাও থাকছে। এখানে ২৪ ঘণ্টাই ডাক্তার থাকবেন। নার্সরা তো থাকবেনই।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়