ঝিনাইদহ-৪
রাশেদ খান মনোনয়ন পাওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা
শাহরিয়ার আলম সোহাগ, ঝিনাইদহ || রাইজিংবিডি.কম
রাশেদ খানকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে শুক্রবার কাপনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল করে কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা
ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ-সদরের আংশিক) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন গণঅধিকার পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, বহিরাগত কোনো প্রার্থীকে তারা মানতে পারছেন না।
রাশেদ খানকে মনোনয়ন দেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। গত শনিবার রাতে তিনি এ ঘোষণা দেন।
আরো পড়ুন: রাশেদ খানকে মনোনয়ন দেওয়ায় নির্বাচনি কর্মশালা প্রত্যাখান ছাত্রদলের
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে তিনজন চেষ্টা করেছেন মনোনয়ন পেতে। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা সদস্য মুর্শিদা জামান নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন। নেতাকর্মীদের হামলা-মামলা দেখভাল করেছেন। অথচ, ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করে কালীগঞ্জে যার একটা বাড়িও নাই তাকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।
তারা জানান, জোর করে চাপিয়ে দিলে কালীগঞ্জের মানুষ বহিরাগতকে মানবে না। রাশেদ খান কোনদিন কালীগঞ্জে আসেননি। তাকে কেউ চেনেও না। রাশেদ খান ঝিনাইদহ-২ আসনে গণসংযোগ করেছেন দীর্ঘদিন। কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশে থাকার কোনো অবদান তার নেই।
গত বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রাশেদ খানের নাম ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর থেকেই ক্ষোভ বাড়তে থাকে নেতাকর্মীদের মধ্যে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। গত শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও মুর্শিদা জামান পপির সমর্থকরা। এ সময় অনেক নেতাকর্মীকে কাঁদতে দেখা গেছে।
রাশেদ খান
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন রাশেদ খান। একইদিন তিনি ঝিনাইদহ সদর থেকে কালীগঞ্জে ভোটার স্থানান্তরের জন্য নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব বরাবর আবেদন করেন।
কালীগঞ্জ পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক জুয়েল রানা বলেন, “বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে আমরা কখনো রাশেদ খানকে পাশে পাইনি। তিনি কালীগঞ্জের বাসিন্দাও না। তিনি ঝিনাইদহ সদরের বাসিন্দা। ভোট হয়ে গেলে ঝিনাইদহ চলে যাবেন। কালীগঞ্জে যারা বিগত দিনে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন এমন কাউকে মনোনয়ন দিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
আরো পড়ুন: কান ধরে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা যুবকের
উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সুজাউদ্দিন পিয়াল বলেন, “ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তারা সবাই যোগ্য। বহিরাগত রাশেদকে আমরা মানতে পারছি না।”
কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াস রহমান মিঠু বলেন, “কালীগঞ্জের তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা হতাশায় ভুগছেন। দলের দুর্দিনের কান্ডারিরা বঞ্চিত হয়েছেন। সাধারণ ভোটাররা ক্ষুব্ধ। তারা কালীগঞ্জবাসীর বিপদে-আপদে পাশে থাকা নেতাদের ভোট দিতে চায়। দল যেহেতু নিবেদিত প্রার্থীদের মূল্যায়ন করেনি, সেহেতু সাধারণ ভোটাররাই তাদের সিদ্ধান্ত নেবেন। দলের হাজারো কর্মী আজ ব্যথিত।”
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মুর্শিদা জামান বেল্টু বলেন, “আমরা কালীগঞ্জের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত। আমার স্বামী এখানকার চারবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। আমরা কোনো বহিরাগত ব্যক্তিকে চাই না। দ্রুতই বিএনপির কাউকে মনোনয়ন দিতে হবে। কালীগঞ্জের মাটি ধানের শীষের ঘাঁটি। চক্রান্ত করে এই ধানের শীষকে হারিয়ে ফেলা হচ্ছে।”
গত শনিবার এক সমাবেশে বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী হামিদুল ইসলাম বলেন, “কালীগঞ্জে মানুষ কী চায়, সেই সেন্টিমেন্ট বুঝতে হবে। তার ওপরে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনো অবস্থায় আমরা কোনো পক্ষে মন্তব্য করব না। ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, “ছাত্রজীবন থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শ ধারণ করে বিএনপির রাজনীতি করেছি। এই আসনে বিএনপির তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কাউকে দেওয়া হয়নি। যাকে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে তিনি বিএনপির কেউ না।” দলের নেতাকর্মীদের দাবিতে আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন বলেও জানান তিনি।
ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রাশেদ খান রবিবার দুপরে সাংবাদিকদের বলেন, “তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যারা বিএনপি করেন তাদের সেই সিদ্ধান্ত অবশ্যই মানতে হবে। ২০২২ সাল থেকে বিএনপির সঙ্গে গণঅধিকারের যুগপৎ আন্দোলনের সম্পর্ক। আমরা একসঙ্গে লড়াই সংগ্রাম করেছি। ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করলে আমার জন্য ভালো হবে। ঝিনাইদহ অঞ্চলটি বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। ধানের শীষে ভোট করলে জয়লাভ করা যাবে সেজন্য আমি বিএনপিতে যোগদান করেছি।”
ঝিনাইদহ-৪ আসনটি কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও সদরের ৪টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১২০টি ভোটকেন্দ্রে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৬১ হাজার ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৬ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ২০০ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন পাঁচজন।
ঢাকা/মাসুদ