ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রান্না এবং বিয়ে

আনিকা তাসনিম সুপ্তি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০০, ২২ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৪:৫১, ২২ অক্টোবর ২০২০
রান্না এবং বিয়ে

রান্না অত্যন্ত শৈল্পিক একটি বিষয়। অনেক এটিকে শখ বা বাধ্য হয়ে পেশা হিসেবেও গ্রহণ করেন। তবে সর্বতোভাবে এটি বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় একটি অনুসঙ্গ। আমরা বাঁচার প্রয়োজনে খাই আর খাওয়ার প্রয়োজনে রান্নার সঙ্গে যুক্ত হই। রান্নাকে অনেক সময় গবেষণার একটি অংশও বলা যায়। 

কারণ, রন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কি কি প্রয়োজন, কতটুক প্রয়োজন, কীভাবে করা প্রয়োজন, তা নিয়ে যত নিবিড় গবেষণা করা যায়, রান্না ততই মুখরোচক কিংবা অসাধারণ তৃপ্তির হয়ে থাকে। আর যেকোনো ধরনের গবেষণাতেই আগ্রহ এবং ধৈর্য্যের প্রাধান্য সবার আগে। তবে, বর্তমান যুগের পরিপ্রেক্ষিতে রান্নাকে স্বাবলম্বী হওয়ার একটি মাপকাঠি হিসেবে বিচার করলে খুব বেশি ভুল হবে বলে মনে হচ্ছে না। এ ব্যাপারে পরে আলোচনা করছি। 

এবার আসি বিয়ের কথায়। বিয়ে ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ধর্মীয়ভাবে বিয়ে বাধ্যতামূলক আর সামাজিকভাবে এটি একটি প্রথা। কিন্তু সবার আগে বিয়ে হচ্ছে দুটি পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পর্ক। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বিয়ে হচ্ছে দুইজন মানুষের অত্যন্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, যাতে সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত নগন্যই বলা যায়। 

একটি বিয়ের ভেতরের সব ধরনের আচার-আচরণ বা নিয়মনীতিতে সবসময় সমাজের নাক গলানোর তেমন কোনো প্রয়োজন নেই। বিয়ে নামক বিষয়টির উদ্দেশ্য কি কি অথবা বিয়ের জন্য কি কি যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন, তা নিয়ে আলোচনায় যাচ্ছি না। তবে এটি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, কিছু মানুষ যেকোনো কারণেই হোক বিয়েকে দিন দিন সুন্দর প্রথার চাইতে অতি পরিমাণে সামাজিক করে তোলার কাজে ব্যস্ত। তবে রান্নার সঙ্গে আসলে বিয়ের সম্পর্কটা কোথায়, তা নিয়ে যথেষ্টই সন্দেহ আছে। 

আমাদের প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় মেয়েদের বিয়ে করার জন্য রান্না জানতেই হবে, এমন একটি ধারণা খুব জোড়ালোভাবে প্রচলিত। সঙ্গে আরও একটি ধারণা প্রচলিত, যা ছেলেদের রান্না জানার কোনো প্রয়োজন নেই ও ছেলেদের রান্না করা একটি অত্যন্ত অসম্মানের কাজ! রান্না না জানার কারণে বা নিখুঁতভাবে রান্না করতে না পারার কারণে অনেক সময় মেয়েদের লাঞ্চনা, গঞ্জনা সহ্য করাটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি রান্না করতে না পারার কারণে মেয়েদের অন্য অনেক অর্জন ঢাকা পড়ে যাওয়ার ঘটনাও এই সমাজে স্বাভাবিক! 

আবার কোনো ছেলে নিজের প্রয়োজনে বা শখের বশে অথবা অন্য কোনো কারণে রান্না করলে তথাকথিত সমাজের কাছে তা অত্যন্ত অস্বাভাবিক মনে হয়! যদিও এসব ধারণা কিছু ক্ষেত্রে বদলাচ্ছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে তা আগের মতোই সমাজে গেঁড়ে বসে আছে! তবে ব্যক্তিগতভাবে এসব চিন্তাধারা আমার অত্যন্ত অমূলক বলেই মনে হয়। রান্না একটি সার্বজনীন প্রক্রিয়া, রান্না আর যাইহোক, কোনোভাবেই বিয়ের যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে না।

রান্না এমন কোনো কঠিন বিষয় নয়, যা বিশাল আয়োজন করে শিখতে হবে ও সমাজকে মাইকিং করে জানাতে হবে যে ‘আমি রান্না পারি’! এটি সত্য যে, রান্নার কিছু ধরণ আছে, যা হাতেকলমে দীর্ঘ দিন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিখতে হয়। তবে তা সম্পূর্ণ ব্যক্তির ইচ্ছা অথবা পেশাদারি প্রয়োজনে হতে পারে। বেঁচে থাকার জন্য রান্না শিখার প্রয়োজন হলে সময়মতো কিছু দিন রন্ধন প্রক্রিয়া চলাকালীন রান্নাঘরে উঁকি দেওয়াই যথেষ্ট! পরবর্তী সময়ে না হয় নিজের মতো গবেষণা করা যাবে! 

রান্নাকে স্বাবলম্বী হওয়ার মাপকাঠি বলেছি, কারণ নিজের উদরপূর্তির জন্য খাবার প্রস্তুতের যোগ্যতা প্রত্যেক মানুষেরই থাকা উচিৎ। যোগ্যতা না থাকলেও নিজের উদরপূর্তির ব্যবস্থা জীবনের কিছু পর্যায়ে গিয়ে নিজেকেই করতে হয়। কিন্তু পারিবারিক জীবনে একসঙ্গে একাধিক মানুষ থাকার সময় কার রান্না জানা বাধ্যতামূলক, আর কার রান্না না জানলেও চলবে, তা সম্পূর্ণ সেই মানুষগুলোর ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধা আর সমঝোতার উপর নির্ভর করছে। এই বিষয়টির জন্য কোনোভাবেই সমাজের গদবাঁধা নিয়মনীতির উপর গণহারে নির্ভর করা চলে না ও এসব ব্যক্তিগত সমঝোতায় সমাজের অযাচিত হস্তক্ষেপকে গুরুত্ব দেওয়াটাও বোকামি! 

সবশেষে বলা যায়,রান্না করতে পারা যেমন গর্বের কোনো বিষয় নয়। আবার রান্না করতে না পারাটাও  তেমন কোনো দোষের নয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

কুবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়