ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কেন এত বিবাহ বিচ্ছেদ?

খুরশিদ জামান কাকন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৭, ১২ নভেম্বর ২০২০  
কেন এত বিবাহ বিচ্ছেদ?

সম্প্রতি পত্রপত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবেশ করলেই দেখা মেলে বিবাহ বিচ্ছেদের খবর। বিনোদন পাতায় ঘটা করে ছাপা হয় তারকাদের সংসার ভাঙার খবর। আর এমনটা শুনতে শুনতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে ওঠেছি। এখন আর বিবাহ বিচ্ছেদকে কোনো দুর্ঘটনা মনে হয় না। অন্য আর আট দশটা ঘটনার মতো বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাকে খুবই স্বাভাবিক মনে হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ২০০৬ সালে যেখানে বাংলাদেশে প্রতি হাজারে বিচ্ছেদের হার ছিল শূন্য দশমিক ৬ জন। পরবর্তী সময়ে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ১ জন। বিচ্ছেদের আবেদনকারীদের মধ্যে যারা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন, তাদের সংখ্যাই বেশি (হাজারে এক দশমিক ৭ জন)। আর অশিক্ষিতদের মধ্যে এই হার হাজারে শূন্য দশমিক ৫। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে বিচ্ছেদের হার যেখানে হাজারে এক দশমিক ৩ শতাংশ আর শহরে এই হার হাজারে শূন্য দশমিক ৮ জন। দেখা যায় যে, বিবাহবিচ্ছেদের জন্য ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আবেদন করছেন।

বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে মাদক, শারীরিক দুর্বলতা, মনোমালিন্য, ধৈর্যের অভাব, পরকীয়া, অর্থলিপ্সা, সংসারের প্রতি উদাসীনতাসহ আরও বেশকিছু উল্লেখযোগ্য কারণ দেখানো যেতে পারে। এক হাতে যেমন তালি বাজে না, তেমনি বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য নারী বা পুরুষ কাউকেই আপাতদৃষ্টিতে ঢালাউভাবে দোষারোপ করা ঠিক হবে না। উপরে বিবাহ বিচ্ছেদের যে কারণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, সেই কারণগুলো অতীতেও ছিল এখনো আছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ কী? কেন এখনকার নবদম্পতিদের দাম্পত্যজীবনে এত কলহ? এর প্রধান উৎসটাই বা কী?

স্বাভাবিকভাবে বিবাহ একটি বৈধ বন্ধন। এই বন্ধনে আবদ্ধ হয়েই একজন নর ও নারী একত্রে বসবাস করে। নিজেদের দাম্পত্যজীবন শুরু করে। এর কিছু দিন পরেই অনেক নবদম্পতির মধ্যে কলহ দেখা যায়। একজনের আরেকজনের প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি হয়। এভাবেই দূরত্বের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সেটা বিচ্ছেদে রূপ নেয়। অনেকেই বলবে বিচ্ছেদ হওয়া মানুষটি তার জন্য উপযুক্ত ছিল না। কোনোভাবেই মানুষটি তার সঙ্গে যায় না। কিন্তু সে নিজেই কি তার উপযুক্ত ছিল? কিংবা ছিল কি তার মনের মতো? 

সেই মানুষটির থাকতে পারে কোনো দোষত্রুটি। হতে পারে সে একটু অন্য প্রকৃতির। কিন্তু কখনো সে কি তাকে বোঝতে চেষ্টা করেছে? তার ভুলত্রুটিগুলো কি শুধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে? হয়তো করেনি, আর এমনটা করার প্রয়োজনীয়তাও মনে করেনি। সোজাসাপ্টা বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে নিজের মুক্তির পথ খুঁজে নিয়েছে।

ধরুন, আপনি বিয়ে করলেন। সংসার করলেন। সন্তানের জনক/জননী হলেন। কিন্তু একপর্যায়ে মনে করলেন আপনার সঙ্গী/সঙ্গিনী আপনার জন্য উপযুক্ত নয়। তখন কি বিবাহ বিচ্ছেদই হবে আপনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত? আপনার কথা নাহয় বাদ দিলাম। কিন্তু আপনার সন্তানের জীবনে কি এর প্রভাব পড়বে না? মাতৃস্নেহ বা পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত একজন সন্তান কি পরিপূর্ণরূপে বেড়ে উঠবে? নিজেকে আদর্শ সন্তান হিসেবে কি গড়ে তুলতে পারবে? যার বাবা-মায়ের সম্পর্কেই চিড় ধরা, সে কীভাবে বুঝবে রক্তের সম্পর্কের গুরুত্ব! পরবর্তী সময়ে সেই কেনই বা বিবাহের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেবে? আর কেনই বা এই বন্ধনের পবিত্রতা বজায় রাখবে। 

বিবাহ বিচ্ছেদের যথার্থ কারণ থাকতেই পারে। তাই এর প্রয়োজনীয়তাও আছে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিতে কার্পণ্য করছে না এখনকার নবদম্পতিরা। তাই আজকালকার যুগে বিবাহ বিচ্ছেদ যেন একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। যখন যাকে ইচ্ছে পরিবারের মতে অথবা অমতেই হোক বিয়ে করে সংসার পাতছে। আবার সামান্য মনোমালিন্য হলেই যেন পরিসমাপ্তি ঘটাচ্ছে পবিত্র এই সম্পর্কের।

কথায় আছে, সংসার সুখী হয় রমণীর গুণে। আগেকার সময়ে বিশেষত নারীরা হাজারো ঝড়ঝাপটা সহ্য করে ধৈর্যের সঙ্গে সংসার করেছে। নিজেদের দাম্পত্য জীবনে সুখ ফিরিয়ে আনার জন্য কতই না চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখনকার নারীরা সে তুলনায় কতটাই বা ধৈর্যশীল? আর আগেকার পুরুষের তুলনায় এখনকার পুরুষেরা কতটাই বা দায়িত্বশীল? 

আসলে বিবাহ নামক এই পবিত্র বন্ধনের প্রতি এখনকার তরুণরা আদৌ কি শ্রদ্ধাশীল হতে পেরেছে? এই বন্ধনটাকে অটুট রাখার জন্য কতটাই বা চেষ্টা করছে? প্রত্যেকটা সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে একে-অপরের আস্থার প্রতিদান ও ভালো বোঝাপড়ার কারণে। বিবাহ এর বাইরে নয়। কখনো কখনো একজন আরেকজনকে বুঝতে হয়তো কিছু সময় লাগে। পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠতেও দেরি হয়। এ কারণে এখনকার নবদম্পতিদের আবেগের বশে বিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কেননা, একটি ভুল সিদ্ধান্তই হতে পারে সারাজীবনের কান্নার কারণ।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়