ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

জার্মানিতে যে কারণে পড়তে যাবেন

ক্যাম্পাস ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৯, ২৭ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৫:০৫, ২৭ নভেম্বর ২০২০
জার্মানিতে যে কারণে পড়তে যাবেন

ইউরোপে উচ্চশিক্ষার জন্য পৃথিবীজুড়ে স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দ জার্মানি। শিক্ষা ও গবেষণার উন্নত মান, নামমাত্র টিউশন ফি, শিক্ষাবৃত্তির সুবিধাসহ নানা কারণে শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে থাকে জার্মানি। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও দিন দিন ঝুঁকছেন দেশটিতে শিক্ষাগ্রহণের প্রতি।

দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারব্যবস্থা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, অ্যাডভান্সড অনকোলজি, যোগাযোগ প্রযুক্তি, শক্তি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ব্যাংক ব্যবস্থা, আণবিক বিজ্ঞান, বিভিন্ন ভাষা বিষয়ে পড়াশোনা, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, কম্পিউটার বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও জীববিজ্ঞানসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় পড়ার সুযোগ আছে। তবে দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা অন্য অনেক দেশের চাইতে আলাদা। এই দেশে পড়তে শিক্ষার্থীদের তুমুল আগ্রহের পেছনেও আছে নানা কারণ।

জার্মানিকে বলা হয় ‘ল্যান্ড অব আইডিয়াস’। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পৃথিবীতে চর্চা হওয়া জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যতম তীর্থস্থান জার্মানি। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বিখ্যাত বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে পৃথিবী বিখ্যাত মনীষীদের অনেকের জন্মভূমি ও কর্মস্থল জার্মানি। এছাড়া বর্তমান বিশ্বে যত রকমের প্রযুক্তি আছে, তার অনেকগুলোরই গবেষণা ও উন্নয়ন হচ্ছে জার্মানিতে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ জার্মানি। এর বিশেষ কারণ হচ্ছে, জার্মানিতে পড়াশোনার জন্য কোনো খরচ নেই বললেই চলে। ধরতে গেলে সম্পূর্ণ বিনা খরচে এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান করা হয়। এমনকি পরীক্ষার জন্যও শিক্ষার্থীদের কোনো অর্থ দিতে হয় না। শিক্ষার্থীকে শুধুই তাঁর বাসস্থানের ও দৈনন্দিন খরচ জোগাতে হয়, যা কিনা খণ্ডকালীন চাকুরি করেই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিকে ধরা হয় সবচেয়ে কম খরচে উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যতম পছন্দের দেশ।

জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্রেডিং সিস্টেম বাংলাদেশের চাইতে আলাদা। সিজিপিএ-১ সে দেশের সবচেয়ে ভালো গ্রেড। অন্যদিকে, সিজিপিএ-৪ হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ। সিজিপিএ-৫ কে সেখানে ফেল বলে গণ্য করা হয়।

সাধারণত, জার্মানির সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য চাহিদা থাকে সর্বোচ্চ সিজিপিএ-২.৫। অর্থাৎ, কোনো শিক্ষার্থীর জার্মান হিসেবে সিজিপিএ-২.৫ এর কম হলেই প্রাথমিকভাবে তিনি ভর্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

জার্মান স্কেলে নিজের সিজিপিএ কত তা ইন্টারনেটে ঘুরলেই জেনে নেওয়া সম্ভব।

জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স সম্পন্ন করতে লাগে চার সেমিস্টার (দুই বছর), যার মধ্যে তিন সেমিস্টারে বিভিন্ন বিষয়ের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক পাঠদান করা হয়। বাকি একটি সেমিস্টারে থাকে উচ্চতর গবেষণার জন্য। এক্ষেত্রে পছন্দের নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রফেসর নির্বাচন করে তাঁর অধীনে ছয় মাসের থিসিস করে যেকোনো একটি বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান লাভ করা হয়। ভবিষ্যতে চাকরি বা ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য ওই বিষয়ই বেছে নিতে হয়।

থিসিস চলাকালে অনেক প্রফেসর তাঁর শিক্ষার্থীকে পারিশ্রমিকও দিয়ে থাকেন, যার পরিমাণ শহর ও ফান্ডভেদে ২০০ থেকে ৯০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। স্নাতকোত্তর শেষ করে পাওয়া যায় ফুলটাইম চাকুরি। সেক্ষেত্রে জার্মান ভাষার দক্ষতা মোটামুটি ভালো হতে হবে।

বাংলাদেশে যেকোনো অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার বছরের ব্যাচেলর শেষ করেই জার্মানিতে স্নাতকোত্তরের আবেদন করা যায়। আবেদন করার আগে প্রথম কাজ হচ্ছে নিজেকে যাচাই করা। এ ক্ষেত্রে দমিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিচার করতে হবে। দেখতে হবে আন্তর্জাতিক মানের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য নিজে কতটুকু যোগ্য এবং সেখানকার ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা কতটুকু আছে।

যেমন, ব্যাচেলরের রেজাল্ট যদি ক্লাস সিস্টেম হয়, এ ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণি (ফার্স্ট ক্লাস) থাকা আবশ্যক। সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৬৫ শতাংশ নম্বর হলে সুযোগ পাওয়া সহজ হয়। যদি গ্রেডিং সিস্টেমের রেজাল্ট হয়, তাহলে ন্যূনতম সিজিপিএ-৩.০ (৪.০) হলে সুযোগ পাওয়া সহজ হয়। ব্যাচেলরের পাঠদানের মাধ্যম ইংরেজি হলে ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতা থাকলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। তারপরও নিজে চর্চা ও আইইএলটিএসের ফল ভালো হলে এই সমস্যা কাটিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়

লেখক: মাহবুব মানিক, গবেষক (প্রফেসরশিপ), মার্সেবুর্গ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স, হালে, জার্মানি।

ঢাকা/নোবেল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ