ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

স্কুল খুলে দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের  

আবু সালেহ শামীম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৫:৫২, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০
স্কুল খুলে দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের  

করোনার কারণে প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিছু দিন গুঞ্জন ছিল স্কুল করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তবে, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে স্কুল কতটুকু দায়ী, তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনো কেউ তুলে ধরতে পারেননি। 

ইউএসনিউজে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রে ১০ মাস ধরে পরিচালিত ৬০ পৃষ্ঠার একটি জরিপ বলছে, স্কুলই করোনা সংক্রমণের প্রধান কারণ, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

এদিকে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনিসেফ বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি স্কুল পুনরায় খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা দাবি করেছে যে, স্কুলগুলো সংক্রমণের প্রধান কারণ না হওয়ার প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও, স্কুল বন্ধের মুখোমুখি হওয়া শিশুদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

জাতিসংঘের এই সংস্থাটি জানায়, ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখের তথ্য অনুযায়ী বৈশ্বিকভাবে প্রতি পাঁচজন স্কুলগামী শিশুর মধ্যে একজন অর্থাৎ ৩২ কোটি শিশু স্কুলে যাচ্ছে না। এর মাধ্যমে একমাসে আরও প্রায় ৯ কোটি শিক্ষার্থী স্কুলে না যাওয়ার তালিকায় যুক্ত হয়েছে।

ইউনিসেফ জানাচ্ছে, ১৯১টি দেশ থেকে উপাত্ত নিয়ে চালানো এক বৈশ্বিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, সমাজে স্কুলের পরিস্থিতি ও কোভিড-১৯’-এর সংক্রমণের হারের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। সংস্থাটি জানায়, করোনা সংক্রমণের হার বাড়ানোর দায় স্কুলগুলোর খুব সামান্য। দৃশ্যত অনেক বেশি সংখ্যক স্কুল অপ্রয়োজনীয়ভাবে বন্ধ রয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তারা বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি স্কুল আবার খুলে দেওয়ার পাশাপাশি সেগুলোকে নিরাপদ রাখার জন্য সম্ভাব্য সবধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।

ইউনিসেফের বৈশ্বিক শিক্ষা প্রধান রবার্ট জেনকিন্স বলেন, আমরা একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি যে, বিভিন্ন দেশের সরকার আরও একবার স্কুল বন্ধ করাকে শেষ অবলম্বন হিসেবে নয় বরং প্রথম অবলম্বন হিসেবে বেছে নিচ্ছে। 

শিশুরা অব্যাহতভাবে তাদের শিক্ষা, মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা ও নিরাপত্তার উপর মারাত্মক প্রভাবের মুখোমুখি হচ্ছে। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, এর ক্ষতিকর প্রভাব প্রজন্মান্তরে চলতে থাকবে।

ভিডিওবার্তায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও ম্যানুয়েল দে অলিভেরা গুতেরেস বলেন, মধ্য জুলাইয়ে ১৬০টিরও বেশি দেশের স্কুল বন্ধ ছিল৷ এতে ১০০ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়েছে৷ 

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, করোনার কারণে দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় বিশ্বের মোট শিক্ষার্থীর ৯৪ ভাগই কোনো-না-কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ক্ষতিগ্রস্তদের শতকরা ৯৯ ভাগই নিম্ন বা নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের৷

জাতিসংঘ মহাসচিব এ কারণে মানবজাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এমন এক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যার প্রভাব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পড়তে পারে, যা মানবজাতির অন্তর্গত সম্ভাবনা নষ্ট করতে পারে। বিগত দশকগুলোর উন্নতির ধারাকেও ব্যাহত করতে পারে৷ শিক্ষাগ্রহণ প্রক্রিয়ায় লম্বা সময়ের ব্যাঘাতের কারণে শিশুদের পুষ্টিহীনতা, বাল্যবিবাহ ও লিঙ্গ বিষম্য বেড়ে যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি৷

ভিডিও বার্তায় বিভিন্ন দেশের সরকারকে শিশুদের স্কুলে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এ বিষয়ে সহায়ক একটি নীতিমালাও উপস্থাপন করেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস৷

ঢাকা/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়