ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা  

ঝংকার মাহবুব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৩, ৩১ মার্চ ২০২১  
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা  

বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীরা নানা দিকে মনোযোগী হওয়া শুরু করেন। কেউবা গায়ে বাতাস লাগিয়ে বেড়ান কেউবা প্রথম থেকেই জীবনে অনেক বেশি সিরিয়াস থাকেন। জীবনে যদি সফল হতে চান প্রতিটি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের পাঁচটি কাজে গুরুত্ব দিতে হবে। যদি সেগুলোতে মনোযোগ দিয়ে লেগে থাকা যায়, তাহলে আশা করা যায় আপনি বাকিদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে থাকবেন। 

প্রথম বর্ষের পাঁচটি কাজ

১. আপনি কোটিপতির সন্তান হলেও আপনাকে আয় করার চেষ্টা করতে হবে। এতে আপনার দায়িত্ব নেওয়ার, অন্যকে সেবা করার, টাকা পয়সা হ্যান্ডেল করার অভিজ্ঞতা তৈরি হবে। আর আয় করা শুরু করলে সব একসঙ্গে খরচ করে ফেলার মানসিকতা তৈরি হবে না। বরং অন্য ব্যাংকে আলাদা অ্যাকাউন্ট খুলে ২০ শতাংশ সঞ্চয় করে রাখবেন।

২. প্রেম করেন আর নাই করেন, কিছু বন্ধু বাড়াতে চেষ্টা করবেন। সুযোগ পেলে শুধু বন্ধু হয়ে থাকবেন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুরাই আপনার সারা জীবনের ভালো বন্ধু।

৩. প্রথম থেকেই ইংরেজিটা ভালো করে শেখার চেষ্টা করবেন। আপনি জীবনে যাই করতে চান না কেন, ইংরেজি জিনিসটা আপনাকে পদে পদে এগিয়ে রাখবে।

৪. অন্তত একজন ফ্যাকাল্টি/সিনিয়র কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার চেষ্টা করবেন। যার কাছে ব্যক্তিগত সমস্যা, পড়ালেখার ঝামেলা, ফিউচার নিয়ে কনসার্ন বিষয়ে আলোচনা করতে পারবেন। তিনি মূলত আপনার মেন্টর/গাইড/কোচ হিসেবে থাকবেন।

৫. ক্লাসে যেহেতু যেতেই হবে। তাই ক্লাসে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। পড়ালেখায় ভালো হতে পারলে ভালো, তবে অন্তত মাঝামাঝি লেভেলে রাখার চেষ্টা করবেন। 

দ্বিতীয় বর্ষের পাঁচটি কাজ

১. পড়ালেখা সিরিয়াসলি না করলে, পড়ালেখার বাইরে এমন কিছু একটা করার চেষ্টা করবেন, যেটাতে আপনি আশেপাশের অন্য সবার চাইতে ভালো। সেটা হতে ওয়েবসাইট বানানো, পোস্টার ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, এনিমেশন, পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন, প্রোগ্রামিং, লেখালেখি বা অন্য কিছু। এটা পরবর্তী সময়ে প্রফেশনাল এক্সপেরিয়েন্স বা এক্সট্রা কোয়ালিফিকেশন হিসেবে চাকরি পেতে সাহায্য করবে। 

২. আপনাকে স্টেজে উঠতেই হবে, অন্ততপক্ষে ৫০ জন মানুষের সামনে দাঁড়াতেই হবে। সেটা বক্তৃতা দিতে হোক কিংবা উপস্থাপনা, নাচ, গান/নাটক, কবিতা বা আবৃত্তি করতে হোক। এতে আপনার মানুষের সামনে দাঁড়ানোর ভয় কেটে যাবে। 

৩. কখনোই ভিডিও গেমসের জগতে প্রবেশ করবেন না। তবে অবসর সময় পেলে কিছু ভালো মুভি দেখে ফেলবেন। পাঠ্য বইয়ের বাইরের জগতে হানা দেবেন, সেটা হতে পারে কিছু বিখ্যাত বই; বাংলা কিংবা ইংরেজি।

৪. পড়ালেখা ঠিক রেখে কোনো একটা অর্গানাইজেশনে যোগ দেবেন। অন্ততপক্ষে একটা অর্গানাইজেশের সব ইভেন্টে যাবেন। কমিটি মেম্বার হওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে আপনার লিডারশিপ স্কিল ডেভেলপ হবে, যেটা আপনার সিভিতে লেখার মতো একটা বিষয় যোগ হবে। 

৫. কোথাও না কোথাও লেখা ছাপানোর চেষ্টা করবেন। সেটা গল্প-কবিতা, ইংরেজি আর্টিকেলের বাংলা অনুবাদ বা অন্য কিছু হতে পারে।

তৃতীয় বর্ষের পাঁচটি কাজ 

১. তৃতীয় বর্ষে উঠে আপনি যে ফিল্ডে কাজ করতে চান, সেই ফিল্ডের কমপক্ষে ১০ জন প্রফেশনালের সঙ্গে কানেকশন ডেভেলপ করবেন। সেটা হতে পারে ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র, দেশি বা বিদেশি ভার্সিটির প্রফেসর। তাদের রিপ্লাই না পাওয়ার আশা নিয়েই ই-মেইল করবেন। অর্থাৎ আপনি একটু একটু করে নেটওয়ার্কিং শুরু করবেন।

২. তৃতীয় বর্ষে থাকতে থাকতেই আপনাকে একটু একটু করে রেজুমি বা সিভি বানানো শুরু করে দিতে হবে। তাহলে আগে থেকেই বুঝতে পারবেন যে কোথায় কোথায় গ্যাপ আছে এবং সেই গ্যাপগুলোর এরিয়াতে ইমপ্রুভ করে ফেলার যথেষ্ট সময় পাবেন।

৩. আপনি যে সাবজেক্টেই পড়েন না কেন, সেই সাবজেক্টের যে কোনো একটা এরিয়াতে টেক্সট বইয়ের/ ক্লাসের পড়ার বাইরে বেশি জানার চেষ্টা করবেন। গুগলে সার্চ দিয়ে আর্টিকেল বের করে নিজের ভেতরে কিউরিসিটি গ্রো করার চেষ্টা করবেন। তাহলে এটাই হবে হায়ার স্টাডিতে এপ্লাই করার সময় আপনার এরিয়া অব ইন্টারেস্ট। 

৪. কয়েকজন মিলে ডিপার্টমেন্টে একটা নিউজলেটার বা দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করে ফেলবেন। নিজেরাই মিলেমিশে বিভিন্ন আর্টিকেল জোগাড় করে লিখে দেবেন।

৫. ক্লাসমেটদের সঙ্গে মিলে গ্রুপ এক্টিভিটিস করবেন। সম্ভব হলে বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, বান্দরবন, সুন্দরবন, কাঁটাবন ঘুরতে যাবে। এতে আপনার টিমওয়ার্ক ও সেলফ অ্যাওয়ার্নেস ডেভেলপ হবে। 

চতুর্থ বর্ষের পাঁচটি কাজ

১. বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সেমিনার, ক্যারিয়ার ক্লাব, ভলান্টিয়ারিং, ফ্রি ইন্টার্নশিপ, পার্টটাইম জব, প্রদর্শনীর সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ, কোনোটাই বাদ দেবে না, সম্ভব হলে সবগুলোতে যাবে। এতে আপনার কমিউনিকেশন স্কিল উন্নত লেভেলে উঠে যাবে।

২. বিভিন্ন চাকরিতে অ্যাপ্লাই করা শুরু করে দেবেন। প্রত্যেকটা চাকরির জন্য সিভি কাস্টমাইজ করে তারপর দেবেন। তাতে কিছু ইন্টারভিউ দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে। 

৩. আপনাকে একটা না একটা ইভেন্ট অর্গানাইজ করার গুরু দায়িত্বে থাকতে হবে। সেটা ইফতার পার্টি, বৈশাখী মেলা, ফেয়ারওয়েল পার্টি, জব ফেয়ার, অ্যালামনাই রিউনিয়ন, যেটাই হোক না কেন। এতে শিখতে পারবেন কিভাবে বিভিন্ন ধরনের মানুষকে পরিচালনা করতে হয়। কিভাবে বাজেট প্ল্যানিং করতে হয় ও মানুষের কাছ থেকে সাহায্য আদায় করে নিতে হয়।

৪. পাস করে বের হওয়ার আগেই আপনাকে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনি দেশে চাকরি করবেন নাকি বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাবেন, বিসিএসের চেষ্টা করবেন, নাকি ব্যবসা। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আপনার বর্তমান অবস্থা ও পরিবারের অবস্থা সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

৫. পরিবারের সঙ্গে সবসময় কানেকশন রাখবেন। কী করতে চাচ্ছেন, কিভাবে করার চেষ্টা করছেন, মনোযোগী হবেন। আপনি ভালো করেন, আর খারাপ করেন, এক বছরের জায়গায় তিন বছর ব্যর্থ হয়ে পিছিয়ে থাকেন না কেন, পরিবারই আপনার নিশ্চিত আশ্রয়। খোলা মনে সাহস রেখে তাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। তারা সবসময় আপনাকে আগলে রাখবেন।

মনে রাখবেন, ভার্সিটি একটা প্ল্যাটফর্ম। এখানে ভালো করার সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি জীবন ধ্বংস করার অপশনও রয়েছে অহরহ। তাই একটু খেয়াল করে জীবন ঠিক রাখতে পারলে শিক্ষাজীবন অনেক বেশি গোছালো ও আনন্দদায়ক হয়ে উঠবে।

ঢাকা/সাব্বির/মাহি  

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়