ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মুক্তির পরও ভালো নেই জবি শিক্ষার্থী খাদিজা

জবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২১, ৩ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৯:২৭, ৩ জানুয়ারি ২০২৪
মুক্তির পরও ভালো নেই জবি শিক্ষার্থী খাদিজা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় বিনাবিচারে প্রায় ১৫ মাস কারাগারে আটক থাকার পর চলতি বছরের ২০ নভেম্বর মুক্তি পান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা। কারামুক্ত হলেও নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকটা কষ্টেই দিন পার করছেন তিনি। এখনও ঠিক হয়নি মানসিক অবস্থাও। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে নিয়মিত হয়েছেন তিনি। স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করতে শিক্ষকরাও দিয়েছেন পাশে থাকার আশ্বাস।

খাদিজার পরিবারের সদস্যরা জানান, দীর্ঘদিন কারাভোগের ফলে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন খাদিজা। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই কিডনিতে পাথরসহ মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগছেন তিনি। কারামুক্তির পর দফায় দফায় ডাক্তার দেখানো হয়েছে। চিকিৎসা অব্যহত থাকলেও এখনও শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। তবে খাদিজাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা।

এ বিষয়ে খাদিজার বড় বোন সিরাজুম মুনিরা বলেন, খাদিজার কিডনিতে পাথর রয়েছে। সিস্ট ব্যাকবোনও সোজা হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে সে শারীরিকভাবে অনেক অসুস্থ। আমরা ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা চালাচ্ছি। মানসিকভাবেও সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি।

খাদিজার সহপাঠী ও বন্ধুবান্ধবদের জানান, কারামুক্তির দিনই সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় বসেছিলেন খাদিজা। এরপর দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের সব পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি। তার তাত্ত্বিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। পড়াশোনাসহ সব বিষয়েই খাদিজাকে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা। স্বাভাবিক পরিবেশ গড়ে তুলে খাদিজাকে মানসিকভাবে শক্ত করে তুলতেও সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

নাসরিন নাইমা নামের খাদিজার এক বান্ধবী বলেন, খাদিজা এখন দ্বিতীয় বর্ষের সঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছে আর আমরা তৃতীয় বর্ষে আছি। আমাদের সব বন্ধু-বান্ধবই তাকে সহযোগিতা করছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বই, শিটগুলো সংগ্রহ করে দিচ্ছি। আমরা তাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেওয়ারও চেষ্টা করছি। সবকিছু যাতে তার কাছে স্বাভাবিক মনে হয় সেই পরিবেশ রাখার চেষ্টা করছি।

এদিকে বিভাগের শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও খাদিজাকে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। একাডেমিক বিভিন্ন সমস্যাসহ যেকোনো প্রয়োজনে খাদিজার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তারা। খাদিজার স্বাভাবিক শিক্ষা জীবন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে বিভাগের পক্ষ থেকে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থাও করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর বলেন, খাদিজা সবগুলো পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তার বাকি থাকা মিডটার্ম পরীক্ষাগুলো নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাকে শিক্ষকরা যেকোনো প্রয়োজনে সহযোগিতা করছেন। তাকে স্বাভাবিক শিক্ষা জীবনের পরিবেশে ফেরাতে বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে।

এ বিষয়ে খাদিজার বড় বোন সিরাজুম মুনিরা বলেন, খাদিজার পরীক্ষা মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। ভাইভা বাকি আছে। নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হলে ক্লাসে অংশ নিবে।

এর আগে, অনলাইনে সরকার বিরোধী বক্তব্য প্রচার এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজাতুল কুবরার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় পৃথক দুটি মামলা করে পুলিশ।

২০২২ সালের মে মাসে পুলিশ দুই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। সেই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল খাদিজাতুল কুবরার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর খাদিজাতুল কুবরাকে গ্রেফতার করে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। এরপর থেকে কারাগারে ছিলেন খাদিজা।

ওই মামলায় বিচারিক আদালতে জামিন আবেদন নামঞ্জুরের পর তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। পরে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন। এ জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ। ধারাবাহিতকায় বিষয়টি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।

গত ১৬ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৬ সদস্যের আপিল বেঞ্চ খাদিজার হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখেন। পরে দীর্ঘ ১৫ মাস কারাভোগের পর ২০ নভেম্বর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

/লিমন/মেহেদী/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়