ঢাকা     বুধবার   ১৬ জুলাই ২০২৫ ||  শ্রাবণ ১ ১৪৩২

মা যখন শিক্ষিকা

উম্মে হাফছা, তিতুমীর কলেজ সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫২, ১১ মে ২০২৫  
মা যখন শিক্ষিকা

সন্তান ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহকারী অধ্যাপক মমতাজ মহল নীলা

মা ও শিক্ষিকা- এই দুইটি পরিচয়ই নারীজীবনের দুটি পবিত্রতম ও মহত্তম ভূমিকাকে প্রতিনিধিত্ব করে। একজন মা তার সন্তানের জন্য যেমন নিরাপদ আশ্রয়, ভালোবাসার উৎস এবং নৈতিকতার পথ প্রদর্শক। তেমনি একজন শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের পথে প্রেরণা, সহানুভূতির প্রতীক এবং ভবিষ্যৎ নির্মাণের কারিগর।

এই দুইটি ভূমিকাকে সমান দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করছেন তিতুমীর কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ মহল নীলা।

মমতাজ মহল নীলা বলেন, “একজন মা যেমন সন্তানের যত্নে সর্বদা ব্যস্ত, তেমনি একজন শিক্ষিকাও তার শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশে দায়িত্ববান। আমি এই দুই পরিচয়কেই উপভোগ করি এবং এটিই আমার জীবনের স্বার্থকতা।”

আরো পড়ুন:

মা হওয়ার অভিজ্ঞতা তার শিক্ষকতার ধরণেও পরিবর্তন এনেছে। তিনি মনে করেন, মা হওয়ার পর আত্মবিশ্বাস, সহনশীলতা, এবং আন্তরিকতা অনেক বেড়েছে। একটি শিশু যেমন নির্ভর করে তার মায়ের ওপর, শিক্ষার্থীরাও চায় একজন ভালো শ্রোতা ও দিকনির্দেশক।

তার মতে, একজন মায়ের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হওয়া উচিত মানবিকতা। শিশুর ভাষা শেখা থেকে শুরু করে তার মূল্যবোধ, নৈতিকতা, সহমর্মিতা এবং আচরণ গঠনের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু পরিবার। আর সেই কেন্দ্রের প্রাণ হচ্ছে মা। এই বিবেচনায় একজন মা কেবল জন্মদাত্রী নন, বরং একজন অনন্য নৈতিক রূপকার।

শিক্ষিকা ও মা এই দুই চ্যালেঞ্জিং পরিচয়ের মাঝে সময় ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নীলা বলেন, “আমি ২৪ ঘণ্টাকে ৮-৮-৮ ভাগ করি। আট ঘণ্টা চাকরি, আট ঘণ্টা সন্তানদের জন্য এবং বাকি সময় প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ও ব্যক্তিগত কাজের জন্য। যদিও এটি সবসময় সহজ হয় না। তবে সন্তানের মুখের হাসিই সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।”

তিনি বলেন, “দুটো ভূমিকারই আলাদা আলাদা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সন্তান যেমন মায়ের কাছ থেকে ভালোবাসা ও শিখন পায়, তেমনি শিক্ষার্থীরাও শিক্ষিকার কাছ থেকে জ্ঞান ও মূল্যবোধ গ্রহণ করে। আমার সন্তান আমাকে সারাজীবন ‘মা’ বলে ডাকবে। আর আমার শিক্ষার্থীরাও আমায় জীবনভর মনে রাখবে এক দিশারীর মতো।”

নীলার জীবনের অন্যতম আবেগঘন মুহূর্ত ছিল তার মায়ের 'রত্নগর্ভা পুরস্কার' প্রাপ্তি। তিনি বলেন, “মা দিবসে আমার মা এই সম্মাননা পান, যা আমাদের পুরো পরিবারের জন্য ছিল গর্বের। মা হিসেবে তার আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের স্বীকৃতি পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি সুন্দর উপলক্ষ পেয়েছি।”

মা দিবসের প্রেক্ষাপটে নীলা বলেন, “এই দিনটি কেবল উদযাপনের নয়, বরং মায়েদের আত্মত্যাগ, ভালোবাসা ও মানবিক ভূমিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি উপলক্ষ। আমি নিজেও একজন মা হিসেবে বুঝি, একজন সন্তানের জীবনে মা কী অসীম প্রভাব রাখে। আমার সন্তান এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার বার্তা থাকবে ‘বি দ্য বেস্ট ভার্সন অফ ইউরসেল্ফ’। প্রতিদিন নিজেকে একটু করে উন্নত করো, আত্মনির্ভর হও, মানবিক হও, আর সমাজের জন্য একজন দায়িত্বশীল মানুষ হয়ে ওঠো। এই চেতনাই হোক মা দিবসের প্রকৃত শিক্ষা।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়