ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

এডিবির প্রতিবেদন: প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব, তবে...  

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৭, ৩০ এপ্রিল ২০২১  
এডিবির প্রতিবেদন: প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব, তবে...  

করোনার মধ্যেও চলতি  (২০২০-২১) অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) হার ৬ শতাংশ হতে পারে আভাস দিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)।  আবার আর্থিক সংস্থাটি এও বলছে, সব কিছু নির্ভর করছে  করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ওপর।  আর অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই  প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। তবে, করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক থাকলে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন কিছুটা হলেও সম্ভব হতে পারে।  

এদিকে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু করোনার ঊর্ধ্বগতির কারণে পরে তা ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নিয়ে আসে সরকার। তবে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাথমিক হিসেব বলছে, প্রবৃদ্ধির হার হতে পারে,  ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। চূড়ান্ত হিসেবে সেটি আরও কমবে বলে জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

 এডিবির সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের আভাস নিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই লক্ষ‌্যমাত্রা অর্জন সময়ে অসম্ভব।  এই বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমি আজ পত্রিকায় পড়েছি। প্রবৃদ্ধি নিয়ে এডিবি কিসের ভিত্তিত্তে বলেছে, সেটা ভালো করে বুঝতে পারিনি। আমার কাছে একটু আশাবাদী (অপটিমেস্টিক) মনে হয়। করোনার এই দ্বিতীয় ধাক্কাটা না এলেও এই ধরনের প্রবৃদ্ধি হওয়ার লক্ষণ, অর্থাৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ  প্রবৃদ্ধি অর্জন আমরা কোনো সূচকেই দেখিনি। মানে প্রবৃদ্ধির সরাসরি তথ্য তো নেই কিন্তু  প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পৃক্ত যে সমস্ত তথ্য আছে, রপ্তানি, আমদানি, ঋণ প্রবাহ রেভিনিউ কালেকশন; এগুলোতে সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশের লক্ষণ দেখা যায়নি। এক্সপোর্ট এখন পর্যন্ত ৯ মাসের ডাটায় দেখা গেছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বাড়েনি। বরং সামান্য কম।’ 

ড. জাহিদ বলেন, ‘এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা দ্বিতীয় ধাক্কা ধরতে পারেনি। তারা বলেছে, এই জরিপ মার্চ মাসের দিকে করা হয়েছিল। তাই দ্বিতীয় ধাক্কার বিষয়টা তারা আমলে নিতে পারেনি। দ্বিতীয় ধাক্কার ইম্পেক্ট যদি আমলে নেয়, তাহলে প্রবৃদ্ধির প্রোস্পেক্ট আরও কমে যায়। যদি এটা অর্জন করা হয়, সেটা তো খুব ভালো অর্জন হবে। কিন্তু  তারা এমন কী দেখছে, যাতে আশা করতে পারি, এই সাড়ে ৫ বা ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন?  আমার মনে হয় না এই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব।’ 

জানতে চাইলে প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘গতবছর করোনার প্রথম ধাক্কার পর দেশে এক্সপোর্টও ভালো হয়েছে। সেগুলো যুক্ত হবে। আমাদের নিটওয়্যারে গ্রোথ হয়েছে। এক্সপোর্টে গ্রোথ হয়েছে। ইনপোর্টে ততটা গ্রোথ হয়নি।’ তিনি বলেন,  ‘প্রবৃদ্ধি ধরতে হবে পুরো অর্থবছরের। অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি যদি গত জুলাই থেকে ধরা হয়, তাহলে মাঝের কয়েক মাসের পরিস্থিতি একদম স্বাভাবিক না হলেও এক্সপোর্ট করা গেছে। মানুষের হাতে রেমিটেন্সের মাধ্যমে অর্থ এসেছে। সেই টাকা দিয়ে জিনিসপত্র কিনেছে মানুষ। কলকারখানা চালু ছিল ওই সময়ে।’

এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ‘স্বাভাবিক অবস্থায় গেলে এই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৮ থেকে ৯ শতাংশ হওয়ার দরকার ছিল। আর গতবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি কম হয়েছিল। তাই বেইজটাও কিন্তু কম। ২০১৮-১৯-এর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে  প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে। এই বছরের করোনার মাঝখানের সময়টা সব কিছুই চালু ছিল। এডিবির ঘোষণা করা সাড়ে ৫ থেকে এ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব।’

ড. নাজনীন বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।  এ কারণেই সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ হবে। আমি মনে করি, এটা সম্ভব। তবে সরকারের প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে টার্গেট, সেটা হয়তো অর্জন হবে না। ৭ শতাংশের ওপরে  প্রবৃদ্ধি যাবে না। এক্সপোর্ট ইন্ডাস্ট্রি যেহেতু এখনো চলছে, আগামী জুন মাসের মধ্যে যদি মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন না হয়, তাহলে এডিবির দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী  প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব।’ 

ঢাকা/ হাসিবুল/এনই/ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়