ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নবীন শিল্পীদের প্রতিভা বিকাশে সহায়ক ত্রিবেণী: ড. আলিফ লায়লা

এম মাহফুজুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১২, ১৬ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১০:১৪, ১৬ মার্চ ২০২১
নবীন শিল্পীদের প্রতিভা বিকাশে সহায়ক ত্রিবেণী: ড. আলিফ লায়লা

কণ্ঠশিল্পী ড. আলিফ লায়লা

ড. আলিফ লায়লা। একজন কণ্ঠশিল্পী। সংগীতের একজন শিক্ষক। জন্ম আর বেড়ে ওঠা জামালপুর সদরে। ছোটবেলা থেকেই গান ধরেছেন। নজরুল সংগীত তার পন্দের শীর্ষে। নিয়মিত গান গাইছেন বিভিন্ন টেলিভিশনে। অংশগ্রহণ করেছেন গানের প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। শিক্ষকতা করছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে।

সম্প্রতি ড. আলিফ লায়লা দেশের শীর্ষ অনলাইন সংবাদমাধ্যম রাইজিংবিডির কার্যালয় ঘুরে গেছেন। গান গেয়েছেন রাইজিংবিডির জনপ্রিয় শো ত্রিবেণীতে। একান্ত সাক্ষাৎকারে শুনিয়েছেন তার শিল্পী হওয়ার গল্প। জানিয়েছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। 

রোববার (১৪ মার্চ, ২০২১) রাইজিংবিডির কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এম মাহফুজুর রহমান। সাক্ষাৎকারটি সংক্ষেপে রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

রাইজিংবিডি: রাইজিংবিডিতে আপনাকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। কেমন আছেন আপনি?

ড. আলিফ লায়লা: ধন্যবাদ আপনাকে। রাইজিংবিডির প্রতি কৃতজ্ঞতা। শিল্পীর জীবন যেভাবে কাটে সেভাবেই কেটে যাচ্ছে। ভালো আছি। গানে গানে জীবনকে উপভোগ করছি। সংগীত শেখা, শেখানোই এখন আমার কাজ।

রাইজিংবিডি: যতটা জেনেছি অনেক দিন ধরেই গান করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি চর্চা করেছেন গান। একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে গানের শিক্ষক আপনি। কত দিন ধরে গানের সঙ্গে আছেন? কী ধরনের গান করছেন?

ড. আলিফ লায়লা: হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। ছয় বছর বয়স থেকে গান চর্চা করছি। সেই যে গান ভালো লেগেছে আর ছাড়িনি। গানই এখন জীবনের অনুসঙ্গ। নজরুলের গান আমার সবচেয়ে প্রিয়। এছাড়া ফোক, লালনগীতি আর আধুনিক গানেরও তালিম নিচ্ছি। সব কিছু ছাপিয়ে গানই কেন যেন ভালো লেগে গেল!

রাইজিংবিডি: গানে কীভাবে আসলেন? আপনার গানের শিক্ষকদের সম্পর্কে জানতে চাই।

ড. আলিফ লায়লা: গানের হাতি খড়ি ছোট বেলায়। আমার বাবা এবং নানা দুজনই গান করতেন। তাদের কাছেই শুরু গানের তালিম নেওয়া। আনুষ্ঠানিকভাবে গান শিখেছি জামালপুর শিল্পকলা একাডেমিতে। প্রায় ৪ বছর গান চর্চা করেছি এই একাডেমিতে। গান শিখেছি কণ্ঠশিল্পী অরূপ কাহালী, মহিউদ্দীন শ্রীপুরী এবং রুমি আজনবী’র কাছে। এছাড়া প্রফেসর ড. অসিত রায়, ওস্তাদ রবিউল হোসাইন এবং ড. পদ্মীনি দে’র কাছে গানের তালিম নিয়েছি। যে দরদ নিয়ে গান শিখিয়েছেন এ জন্য তাদের প্রতি আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।

রাইজিংবিডি: সংগীত বিষয়ে আপনার পড়াশোনা-অধ্যাপনা নিয়ে বিস্তারিত বলুন।

ড. আলিফ লায়লা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। এর পর ২০১০ সালে এমফিল করেছি একই বিভাগ থেকে। ২০১৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছি ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের ওপরে। আমার পিএইচডি’র বিষয় ছিলো ‘লালনের গান ও রাগ সংগীত’। এছাড়া নজরুল ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষক হিসেবে ট্রেনিং নিয়েছি এক বছর মেয়াদি বিশেষ কোর্সে।

রাইজিংবিডি: গানের জগতে আসতে কার উৎসাহ বেশি পেয়েছেন? নারী শিল্পী হিসেবে কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন?

ড. আলিফ লায়লা: দেখুন, আমি আমার চারপাশকে সবসময় খুব পজিটিভলি দেখি। নারী হিসেবে গানের জগতে আমি এখনো তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি। বরং আমি মনে করি, আমাদের সামনে এখন অনেক সুযোগ। গান চর্চায় কিংবা নিজেকে উপস্থাপন করতে অনেক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। আছে বিভিন্ন ইনস্টিটিউট। আমরা সেসব ব্যবহার করে সামনে এগিয়ে যেতে পারি সহজেই। আমি খুবই আশাবাদী। আমার মায়ের আগ্রহেই সংগীত জগতে আসতে উৎসাহ পাই। মা সবসময় উৎসাহ-উদ্দীপনা যোগাতেন।

রাইজিংবিডি: কোথায় গান গাইছেন? গানে আপনার পুরস্কার বা অর্জন নিয়ে কিছু বলুন।

ড. আলিফ লায়লা: গানের চর্চা করছি। যেখানে গান গাওয়ার সুযোগ পাই সেখানেই গান গাই। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য কয়েকটি টিভিতে গাইছি নিয়মিত। সংগীতে ৮ বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। এর মধ্যে ৪ বার পেয়েছি স্বর্ণপদক। পুরস্কৃত হয়েছি ১৯৯৫ সালে বিটিভি আয়োজিত ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতায়। বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের প্রতিযোগিতায় পরপর তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত বেঙ্গল বিকাশ প্রতিভা অন্বেষণে লোকসংগীত বিভাগে সফল মান হয়েছি। এছাড়া ২০০৮ সালে চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ প্রতিযোগীতায় ছিলাম সেরা দশে।    

রাইজিংবিডি: আপনি জানেন রাইজিংবিডিতে গানের একটি বিশেষ শো চলছে। যেটি লেখক, সাংবাদিক, উপস্থাপক ও করপোরেট ব্যক্তিত্ব উদয় হাকিমের উপস্থাপনায় ও সার্বিক তত্ত্ববধানে পরিচালিত হচ্ছে। বিনোদমূলক এই অনুষ্ঠানটি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

ড. আলিফ লায়লা: এটি একটি দারুণ অনুষ্ঠান। শিল্পী ও সংগীত-সংস্কৃতির স্বার্থে অসামান্য ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ত্রিবেণীতে গেয়েছি আমিও। রাইজিংবিডির স্টুডিও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তিতে সাজানো। এখানে কোনো কিছুর অভাব নেই। এর সবথেকে বড় বিশেষত্ব হলো প্রবীণদের পাশাপাশি নবীন শিল্পীরাও গান গাইতে পারছেন। নবীন শিল্পীদের প্রতিভা বিকাশের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে ত্রিবেণী। উদয় হাকিম একজন সৃজনশীল মানুষ। এসব প্রতিভাবান মানুষের কাছ থেকেই এমন অনুষ্ঠান আশা করা যায়।

রাইজিংবিডি: আগামীর পরিকল্পনা জানতে চাই।

ড. আলিফ লায়লা: দেখুন, সবকিছুর ওপরে একজন মানুষ হতে পারাই কাম্য হওয়া উচিৎ। আমরা সবাই ভালো শিল্পী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি আরও কত কী হতে চাই! কিন্তু ভালো মানুষ হতে চাই ক’জন? গানের চর্চার পাশাপাশি আমি একজন ভালো মানুষ হতে চাই। মৌলিক গান নিয়ে কাজ করবো। জামালপুরে একটি গানের একাডেমি গড়ে তোলা আমার বড় স্বপ্নগুলোর একটি। সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি।

রাইজিংবিডি: আপনাকে ধন্যবাদ।

ড. আলিফ লায়লা: রাইজিংবিডিকেও ধন্যবাদ।

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়