ঢাকা     শনিবার   ২২ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ৯ ১৪৩১

মারা গেছেন ‘আমি বাংলার গান গাই’ খ্যাত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়

কলকাতা ব্যুরো || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ১৪:৪৫, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মারা গেছেন ‘আমি বাংলার গান গাই’ খ্যাত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়

প্রতুল মুখোপাধ্যায়

বরেণ্য গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় মারা গেছেন। ৮৩ বছর বয়সী এই সংগীতশিল্পী গুরুতর অসুস্থ হয়ে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই সময় তার নাক দিয়ে আচমকাই রক্তক্ষরণ হয়েছিল। অতিরিক্ত সংক্রমণের প্রভাব পড়ে তার কিডনি ও ফুসফুসে। সম্প্রতি অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দীর্ঘসময় ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। কয়েকদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেন সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে। 

দুইবাংলার সঙ্গীত জগতের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা শিল্পী ছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। ১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে জন্ম প্রতুলের। বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। মা বাণী মুখোপাধ্যায় প্রতুলকে নিয়ে দেশভাগের পরে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। থাকতে শুরু করেন চুঁচুড়ায়। অল্প বয়স থেকেই কবিতায় সুর দিতেন প্রতুল। কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতা দিয়ে শুরু। নিজেও গান লিখতেন। অথচ প্রথাগত কোনও সঙ্গীতশিক্ষা তিনি নেননি। হৃদয় নিঃসৃত আবেগকেই সুর ও কথার মেলবন্ধনে বেঁধে ফেলতে শিখেছিলেন।

আরো পড়ুন:

তার কণ্ঠে ‘আমি বাংলায় গান গাই’ আজও শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে। পাশাপাশি, ‘ডিঙা ভাসাও সাগরে’ও অত্যন্ত পছন্দ অনুরাগীদের। গান গাওয়া, লেখা, সব কিছুতেই নিজের প্রতিভার জাত চিনিয়েছেন। কিছুটা সরু, রিনরিনে কণ্ঠস্বর ছিল তার। গানের সময় সঙ্গে থাকে না কোনও যন্ত্র। কেবলই গলার মডিউলেশনকে ব্যবহার করে আশ্চর্য ‘এফেক্ট’ তৈরি করে নিতেন। প্রয়োজনে তুড়ি দিতেন। 

যেভাবে আদিম মানব সহজাত ভঙ্গিতে গুহার নিঃসীম অন্ধকারে সুরের সাম্পানে পাড়ি দিত অচিন দেশে, সেভাবেই আজীবন প্রতুল নিজের হৃদয়ে জ্বালিয়ে রেখেছিলেন গানের প্রদীপ। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও চিকিৎসকদের ‘আমি বাংলায় গান গাই’ শোনাতেন তিনি। তবে এই একটি গানই নয়, প্রতুল সারা জীবন ধরে অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গেছেন। বাংলা আধুনিক গান থেকে জাপানি গান, আবার হিন্দি সিনেমার গান থেকেও উপাদান সংগ্রহ করেছেন। 

‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’ (১৯৮৮) তার জীবনের প্রথম অ্যালবাম। তবে এটা তার একক অ্যালবাম নয়। প্রতুলের প্রথম একক অ্যালবাম ‘যেতে হবে’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে। এরপর  ‘ওঠো হে’ (১৯৯৪), ‘কুট্টুস কাট্টুস’ (১৯৯৭), ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ (২০০০), ‘তোমাকে দেখেছিলাম’ (২০০০), ‘স্বপনপুরে’ (২০০২), ‘অনেক নতুন বন্ধু হোক’ (২০০৪), ‘হযবরল’ (২০০৪), ‘দুই কানুর উপাখ্যান’ (২০০৫), ‘আঁধার নামে’ (২০০৭)। আর ২০১১ মুক্তি পায় তার সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যালবাম আমি বাংলায় গান গাই। তার শেষ অ্যালবাম ‘ভোর’ (২০২২)।

পেশার তাগিদে কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। আবার ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ সিনেমাতে নেপথ্য শিল্পী হিসেবেও কাজ করেন। একাকীত্ব বরাবর পছন্দ ছিল শিল্পীর। তার প্রয়াণের খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সঙ্গীত জগতে।

ঢাকা/ সুচরিতা/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়