ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রাজনীতি বনাম রুপালি পর্দা: সফলতা-ব্যর্থতার দীর্ঘপথ, বিজয় কী পারবেন?

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৫, ২৭ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১৭:৪৯, ২৭ আগস্ট ২০২৫
রাজনীতি বনাম রুপালি পর্দা: সফলতা-ব্যর্থতার দীর্ঘপথ, বিজয় কী পারবেন?

তামিল সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক জোসেফ বিজয় চন্দ্রশেখর; যাকে সবাই থালাপাতি বিজয় নামেই চেনেন। রুপালি পর্দার ক্রেজ নিয়েই রাজনীতির মাঠে যাত্রা শুরু করেছেন তিনি। ফলে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন এই নায়ক।

ফিল্মি কায়দায় নির্মিত রাজনৈতিক মঞ্চ, সেই মঞ্চে নায়কোচিত এন্ট্রি; বিজয়কে ঘিরে ভক্ত-অনুরাগীদের মাতামাতি চোখে পড়ার মতো। মানুষের উন্মাদনার ঢেউয়ে ভাসছেন বিজয়। রুপালি পর্দার তারকা খ্যাতি আর রাজনৈতিক ময়দানের দর্শকপ্রিয়তা বা ভোট ব্যাংক এক নয়—এ কথা হরহামেশাই শোনা যায়। এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা করলে, রাজনৈতিক মাঠে বিজয়ের জয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কেবল তাই নয়, তার পূর্বসূরি মেগাস্টার চিরঞ্জীবীর রাজনৈতিক ইতিহাসও উদাহরণ হিসেবে সামনে চলে আসে। প্রশ্ন উঠে—চিরঞ্জীবীর মতো মেগাস্টারও যেখানে ব্যর্থ হয়েছেন, সেখানে বিজয় কতটা সাফল্য পাবেন?

২০০৮ সালে রুপালি পর্দার নায়ক চিরঞ্জীবী ‘প্রজা রাজ্যম পার্টি’ নামে রাজনৈতিক দল ঘোষণা করেন। তার শুরুটা বিজয়ের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি উন্মাদনার মাধ্যমে সূচনা হয়েছিল। চিরঞ্জীবীর শুরুটা হয়েছিল এক বিন্দু জল থেকে, যা অল্প সময়ের মধ্যে রূপ নিয়েছিল প্রবল বন্যায়। রাজনৈতিক দল লঞ্চিং অনুষ্ঠানের দিন মানুষের স্রোত বয়ে গিয়েছিল। 

অনুষ্ঠানস্থলের দিকে যাওয়ার রাস্তাগুলো কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যানজটে রূপ নিয়েছিল। প্রায় ১০ লাখ মানুষ একে অপরের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে জায়গা করে নিচ্ছিলেন, অসংখ্য চোখ তাকিয়ে ছিল প্রস্তুত মঞ্চের দিকে, যেখানে তাদের প্রিয় নায়ক যেকোনো মুহূর্তে হাজির হবেন। আর চিরঞ্জীবী যখন এলেন, তখন একপ্রকার হুড়োহুড়ি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। নায়ক মঞ্চে উঠে ‘দুধ আর মধু’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

চিরঞ্জীবীকে ভালোবেসে সবাই ‘চিরু’ নামে ডাকেন। তার ‘প্রজা রাজ্যম পার্টি’ খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। পার্টি উদ্বোধনের সময় যে দশ লাখ মানুষ হাজির হয়েছিলেন, তারা ভোটের সময় চিরুর পতাকা বহন করেননি। তার অনুরাগীরা, যারা তার নির্দেশে রক্ত দিতেও দ্বিধা করতেন না, ভোটের সময়ে তারা তাদের নায়ককে নিরাশ করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ‘প্রজা রাজ্যম পার্টি’; পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসে মিশে যায়।

গত বছর চিরঞ্জীবীর ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটান বিজয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিনেমা ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন বিজয়। এ ঘোষণার ৮ মাস পর প্রথমবার নিজের দলের জনসভায় ভাষণ দেন। গত বছরের ২৭ অক্টোবর, তামিলনাড়ু রাজ্যের বিক্রবান্দি শহরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ জনসভায় ‘তামিলাগা ভেটরি কাজাগম’ (টিভিকে) নামে রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন এই নায়ক। 

এ জনসভায় তারকা বিজয়কে দেখতে আসা মানুষেরা উচ্ছ্বাস নিয়ে তাকে শুনেন। কীভাবে অন্যরা তার রাজ্যকে লুটে নিচ্ছে, কীভাবে তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ গড়বেন, আর কেন গরিব, প্রান্তিক ও বঞ্চিতদের তাকে ভোট দেওয়া উচিত। তবে চিরঞ্জীবীর তুলনায় এই ভিড় ছিল অনেক কম। চিরঞ্জীবীর জনসভায় ১০ লাখ মানুষ উপস্থিত ছিলেন আর বিজয়ের জনসভায় উপস্থিত ছিলেন কয়েক লাখ মানুষ।

গত ২১ আগস্ট, তামিল নাড়ুর মাদুরাইতে অনুষ্ঠিত হয় বিজয়ের রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় জনসভা। সেদিন সেখানে তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সব উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন। কলেজ শিক্ষার্থী, গৃহিণী, যুবক-যুবতীসহ নানা পেশার নানা বয়সি মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয় সমাবেশস্থল। কেউ কেউ ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েও জনসভায় যোগ দেন। তবে এ জনসভায় মানুষের যে উপস্থিতি ছিল, সেটাও চিরঞ্জীবীর জনসভার মানুষের চেয়েও কম।

থালাপাতি বিজয়ের বড় সংখ্যক ভক্ত-অনুরাগী রয়েছেন। শুধু তামিল নাড়ুতেই ৮৫ হাজার ফ্যান ক্লাব রয়েছে। অতীতে ভক্ত-অনুসারীদের রাজনীতির মাঠে কাজে লাগানোর ইতিহাসও দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে। ষাটের দশকে রাজনীতিতে পা রাখেন অভিনেতা এম. জি. রামাচন্দ্রন। এ অভিনেতা তার ফ্যান ক্লাবকে রাজনৈতিক মাঠে কাজে লাগাতে সফল হয়েছিলেন। পরে কয়েক দশক রাজ্য শাসন করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সুপারস্টার রজনীকান্ত, কমল হাসানেরও ফ্যান ক্লাব গড়ে উঠেছিল। তবে এ সংগঠনগুলো এনজিও এর মতো হয়ে ওঠে।

মাদুরাই পূর্ব আসন থেকে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিজয়। নির্বাচনে কোনো জোটে যাবেন না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে বিজয়ের ভক্ত-অনুরাগীরা অভিনেতা এম. জি. রামাচন্দ্রনের অনুসারীদের মতো হবেন, না কি ভোটের সময়ে চিরঞ্জীবীর ভক্ত-অনুরাগীদের মতো আচরণ করবেন, তার জবাব সময়ই দেবে।

ঢাকা/শান্ত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়