ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আম ব্যবসা: এ লড়াই টিকে থাকার

সাইফুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ৮ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
আম ব্যবসা: এ লড়াই টিকে থাকার

দেশব্যাপী খ্যাতি রয়েছে রাজশাহীর আমের। আর রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জ আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষা এই দুই ঋতুতে আমের ফলন হয়। গোপালভোগ, হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ নানা প্রজাতির আম সারাদেশেই বিক্রি হয়।

কিন্তু আমগুলো ফরমালিনমুক্ত নাকি যুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকে অনেকের। তাই সারাদেশে ফরমালিনমুক্ত আম সরবরাহের উদ্যোগ নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ উদ্যোক্তা জুয়েল মামুন। উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে কথা বলেন তিনি।
 


বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আমি খুবই হতাশ হয়ে পড়ি। শুরুতে প্রচুর লড়াই করতে হয় নিজের সঙ্গে। এ লড়াই ছিল টিকে থাকার লড়াই। বিভাগের এক বড় ভাইয়ের (ফাহিম ভাইয়া) সঙ্গে পরিচয় হলে তিনি আমার জন্য একটা শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করে দেন। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কিন্তু দুই বছর পর আমার বৃত্তিটা বন্ধ হয়ে যায়। টিউশন করে যে টাকা পেতাম তা দিয়ে নিজের খরচ বহন করাই কঠিন ছিল। সেসময় পরিবারেও বেশ সংকট ছিল। পরিস্থিতি এমন ছিল যে, পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারলে ভালো হয়।

ভাবতে থাকি, ঠিক এই মুহূর্তে কী করা যায়? পরে ফেসবুক পাতায় ‘রাজশাহীর আম সারাদেশে সরবরাহ করলে কেমন হবে?’ এমন একটি পোস্ট দেই। তখন আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, ভাই, বন্ধু, শিক্ষকসহ অনেকেই প্রেরণা দিয়েছেন। সেই চিন্তা থেকেই আমি পূর্ণ উদ্যমে কাজ করতে শুরু করি। প্রথম বছরেই আমাদের এই উদ্যোগ মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। পরের বছর সঙ্গে নেই আমার ছোট ভাই আলমগীরকে। সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগে পড়াশোনা করে।
 


কাজ শুরু করার পর আমাদের সাথে যুক্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে আমাদের একটা ভার্চুয়াল মার্কেট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।  আমরা সবসময় বাছাইকৃত বিশুদ্ধ আম সরবরাহ করার চেষ্টা করেছি। এজন্য একজন ক্লায়েন্টের কাছ থেকে অনেকবার অর্ডার পেয়েছি। অল্প পরিসরে লিচু সরবরাহের কাজও করেছি। তবে লিচু খুবই সেনসেটিভ ফল। এটা নিয়ে কাজ করা খুবই ঝুকিপূর্ণ।

আমরা দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশেও আম পাঠিয়েছি। এ বছরেও সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে আম পাঠানোর চিন্তা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সবকিছু এলোমেলো করে দিলো। বিগত বছরগুলোতে দেশের সব জেলায় আম পৌঁছে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। সেই সঙ্গে যারা আমাদের কাছ থেকে আম নিয়েছেন তারাও সন্তুষ্ট। সব মিলিয়ে আমাদের চমৎকার অভিজ্ঞতা। এখানে শেখার অনেক কিছু আছে। নিয়মিত শেখার চেষ্টা করছি।
 


গত বছর সারাদেশে প্রায় ২৫-২৬ হাজার কেজি আম সরবরাহ করেছি। এবার পরিস্থিতি ঠিক থাকলে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি আম সরবরাহ করতে পারবো বলে আশা করছি। এই করোনাকালে আমরা স্বাস্থ্য বিধি মেনেই কাজ করবো। নতুন করে আমাদের ওয়েবসাইট লঞ্চ করেছি। সবার আস্থা আর ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের প্রোডাক্টের মান ঠিক রেখে আমরা সামনের দিনগুলোতে আরও দৃঢ়ভাবে কাজ করতে চাই।

শুরুতে আমি একাই এই উদ্যোগটি গ্রহণ করি। যা এখন ডালপালা মেলেছে। এখন রাজশাহীতেই আমাদের সাথে কাজ করেন ৪/৫ জন। সারাদেশ থেকে ৬/৭ জন আমাদের মার্কেটিং সেক্টরে কাজ করছে। হোম ডেলিভারিতে কাজ করে ২ জন। আস্তে আস্তে অনেকের কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আমরা এটাকে আরও প্রসারিত করতে চাই। আমরা নিজেরা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য কাজ করছি এবং একই সাথে উদ্যোক্তা তৈরির চেষ্টাও করছি।
 


এখানে সফলতা পেলে কৃষিতে বিনিয়োগ করবো। যাতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আমাদের মতো তরুণ উদ্যোক্তাদের হাত ধরে হয়। গ্রামের মানুষ যাতে বসে না থাকে। কাজের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষে আমরা আমাদের প্রয়াস চালিয়ে যেতে চাই। আমরা অলরেডি গরু নিয়ে কাজ শুরু করেছি। গরু লালন-পালন এটাও বেশ লাভজনক কাজ। কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হলে এটাকে আমরা আরো বড় করতে চাই।

তরুণ উদ্যোক্তা আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা দুই ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। পরিবার থেকে পুরোপুরি আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই ভাবলাম, এই বিজনেসটা করা যায়। এই ব্যবসা করার আরেকটি কারণ হচ্ছে, ঢাকায় রাস্তার পাশে বড় বড় আমের মেলা বসে। সেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা থাকে ‘সাতক্ষীরা, রাজশাহী/চাপাই নবাবগঞ্জের ফরমালিনমুক্ত আমের মেলা’। কিন্তু সেই আম ফরমালিন ও কার্বাইডমুক্ত বলে মনে হয়নি। অথচ প্রতি কেজি আম ১৩০-১৮০ টাকা পর্যন্ত তারা বিক্রি করছে। তাই আমি ভাবলাম, যদি কাস্টমারকে ফরমালিন ও কার্বাইডমুক্ত আম খাওয়াতে পারি, তবে আমরা অনেক বেশি আম বিক্রি করতে পারবো। এছাড়া সবচেয়ে বড় কথা, আমরা কৃষক এবং ক্লায়েন্টের কথা ভেবেই আমের দাম নির্ধারণ করি। আমরা আমাদের কোয়ালিটি সবসময় ধরে রাখতে চাই।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

রাবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ