ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

৮ হাজার টাকার ব্যবসায়ী এখন লাখপতি  

সাজেদুর আবেদীন শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪১, ৬ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১১:৪২, ৬ অক্টোবর ২০২০
৮ হাজার টাকার ব্যবসায়ী এখন লাখপতি  

যশোরের মেয়ে নাশিদ নিকিতা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছেন। পড়াশোনা শেষ করেই ঢাকায় একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি রাজধানীর ধানমণ্ডিতে থাকেন। 

সম্প্রতি নাশিদ নিকিতা তার ব্যক্তিজীবন, ক্যারিয়ার ও উদ্যোক্তা জীবনের গল্প বলেছেন রাইজিংবিডির ক্যাম্পাস পাতার লেখক ও ঢাকার বঙ্গবন্ধু কলেজের শিক্ষার্থী সাজেদুর আবেদীন শান্তর কাছে।  

নিকিতা বলেন, চাকরি-ব্যক্তিজীবন সবকিছু মিলিয়ে দিব্যি জীবন কেটে যাচ্ছিল। একদিন যুক্ত হলাম ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ উই’তে। দেখলাম এখানে এক অন্য দুনিয়া। যেন এক উদ্যোক্তাদের মেলা। গ্রুপের সবার পোস্ট পড়তে পড়তে ‘উই’কে বুঝতে শুরু করলাম। মনের মধ্যে কোথাও যেন একটা আশার আলো উঁকিঝুঁকি দিল আর আমাকে বললো ‘তুমিও পারবে’। কিন্তু আমার এত সময় কোথায়? এসব অনেক ঝামেলার কাজ। আমি কি পারবো? 

আমি হুজুগে বাঙালি টাইপের নই। কিছু দেখলাম আর নিজেই শুরু করে দিলাম এগুলো, আমার হয় না। আমি অনেক প্র্যাকটিকাল চিন্তা করি। এরপর নিজের মতো একটা প্ল্যান সেট করলাম, কি কি সমস্যা আসতে পারে তার লিস্ট বানালাম, সময় ভাগ করে নিলাম। এরপর আসলো ইনভেস্টমেন্টের পালা। সিদ্ধান্ত নিলাম অল্প টাকা ইনভেস্ট করবো, সবার রেসপন্স দেখব, বাকিটা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা।

জুন মাসের ৬ তারিখে কারিগর খুঁজে মাত্র ৮ হাজার টাকার অল্প কয়েকটা শাড়ি বানিয়ে আনলাম, সাথে সাথে খুলে ফেললাম ফেসবুক ‘কাব্য কন্যা’। কিন্তু এই শাড়ি প্রমোট করবো কীভাবে? এত বিক্রেতাদের ভিড়ে আমাকে তো কেউই চিনেন না। ঠিক আছে আমার ব্র্যান্ডিং আমি নিজেই করবো। আমার শাড়ির মডেল আমি নিজেই হবো। কিন্তু সারাদিন অফিস করে অনেক ক্লান্ত থাকতাম, রাত জেগে শাড়ি পরে পরে ফটোশুট করতাম, কারণ এছাড়া সময় বের করতে পারছি না। অফিস যে দুইদিন অফ থাকে, সেই দুদিন কারিগরদের পেমেন্ট, হিসাব, নতুন শাড়ি স্টক এগুলো করতেই পার হয়ে যায়। আর আমার পরিবার আমাকে সবসময় সব কাজে সাপোর্ট দিয়ে গেছে, কোনও কিছুতে মানা করেনি আরও উৎসাহ দিয়েছে। 

যেদিন ‘উই’তে প্রথম শাড়ির ছবি পোস্ট করলাম, সেদিন থেকেই এত এত রেসপন্স আসলো যে, ৮ হাজার টাকার সেই শাড়িগুলো ২ দিনেই শেষ হয়ে গেলো, মনে হচ্ছিলো স্বপ্ন দেখছি কোনো। অর্ডার আসতে থাকলো কিন্তু শাড়ি তো সব শেষ। সেল করার সব টাকা দিয়ে সাথে আরও কিছু টাকা যোগ করে এবার বেশি করে শাড়ি বানিয়ে আনলাম। গ্রুপে আবার পোস্ট দিলাম। আবার সেই অর্ডারের ঝড়। শুরু হলো কাস্টমারদের একটার পর একটা ভালো ভালো রিভিউ। আবার অনেকগুলো শাড়ির অর্ডার পেলাম। ‘উই’ এবং ‘উই’র বাইরে প্রতিদিনই অর্ডার আসতে থাকলো। বুঝলাম এভাবে কষ্ট করে লেগে থাকতে পারলে আমাকে সবাই আস্তে আস্তে চিনবে। সেই থেকে শুরু হলো একটিভ থাকা। আর অন্যদিকে অর্ডার নেওয়া, শাড়ি স্টক করা, ডেলিভারি, কুরিয়ার এসবের প্রেসার তো আছেই। 

এভাবে আস্তে আস্তে সেল বাড়তে থাকে, প্রথম ২০ দিনে মোট ১ লক্ষ টাকার শাড়ি সেল হয়ে যায়, আরও পরিশ্রম বাড়িয়ে দিলাম, আরও শাড়ি আনলাম। এখন ৩ মাস পর এসে সেল আপডেট দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ লাখ টাকা, মানে এই ৩ মাসে প্রায় ছয় লাখ টাকার উপরে শাড়ি বিক্রি করেছি। সত্যি বলি, আমার অনেক অনেক কষ্ট করতে হয়েছে এই পর্যন্ত আসতে। কে কী বললো, কে কী করলো, কার কত সেল হলো এগুলো নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিনি। ফোকাস ছিল আমার ব্র্যান্ডিং, আমার শাড়ি, আমার নিজের পরিচিতি তৈরি করা নিয়ে। চাইলেই স্বপ্ন পূরণ করা যায়, লাগবে শুধু ধৈর্য্য আর কাজের প্রতি একাগ্রতা।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়