ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

এক বছরে দীপার ১৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি

সাজেদুর আবেদীন শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৯, ৮ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:৫৭, ৮ নভেম্বর ২০২০
এক বছরে দীপার ১৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি

দীপা বনিকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফেনীতে। ফেনী সরকারি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে একটা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে চাকরি করতেন দীপা। ২০১৩ সালে বিয়ে হওয়ার পর কুমিল্লায় আসেন তিনি। স্বামী প্রবাসী হওয়ায় বাচ্চা-সংসার সামলিয়ে চাকরি করা হয়ে ওঠেনি আর। 

দীপার দুই সন্তান দেখাশোনার পাশাপাশি ২০১৯ সাল থেকে ফেসবুক ভিত্তিক অনলাইন পেজ ‘দীপান্বিতা’র মাধ্যমে কুমিল্লার খাদি ও বাটিকের শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, বেডকাভার বিক্রি করছেন। তার এই সংগ্রামী ও সফল জীবনের গল্প বলেছেন রাইজিংবিডির ক্যাম্পাস লেখক সাজেদুর আবেদীন শান্তর সঙ্গে।

দীপার সবসময়ই ইচ্ছা ছিল নিজের মতো করে কিছু করার। কিন্তু বাচ্চা, সংসার সামলে সম্ভব হচ্ছিল না। পারিবারিক বিভিন্ন কারণে চরম হতাশা ঘিরে ধরে তাকে। হঠাৎ করে তার এক বান্ধবী তার জন্য কিছু পণ্য কিনতে বলেন। পণ্য কিনে বাসায় এসে ভাবেন, আমি তো ঘরে বসে এ ব্যবসাটাই করতে পারি। এরপর দেরি না করে নিজেই দীপান্বিতা নামে একটা ফেসবুক পেজ খোলেন। তার যেহেতু বাচ্চাদের রেখে বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই অন্য চিন্তা না করে ই-কমার্সকেই বেছে নেন। 

দীপা বলেন, ‘আমি চাইলে বাবা, মা কিংবা স্বামীর কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারতাম, কিন্তু যদি লস হয়ে যায়, তাই নিজের জমানো ১৪ হাজার টাকা দিয়েই শুরু করলাম। প্রথমে বন্ধুদের সহযোগিতায় শুরু করি, কিন্তু এর কিছু দিন পর ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স গ্রুপ ‘উই’তে যুক্ত হই। এখানে দেখলাম আর ১০টা গ্রুপের চেয়ে এই গ্রুপটি আলাদা। এখানে সেল পোস্ট, লাইভ, ভিডিও শেয়ার করা যায় না, এখানে নিজের পণ্য ও ই-কমার্স ব্যবসা সম্পর্কে সবাই লেখালেখি করে, এই ব্যাপারটা খুব ভালো লেগে যায় আমার। এরপর শ্রদ্ধেয় রাজীব স্যারের দিকনির্দেশনায় আমার কাজগুলো আরও সহজ হয়ে যায়। এই এক বছরে নিজের পেজ আর উই গ্রুপ মিলিয়ে মোট ১৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করি।’ 

‘আমরা যারা দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করি, তাদের জন্য উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) একটি স্বপ্নের জায়গা। দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে এই গ্রুপের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা ওঠে আসছে। এর মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অর্ডার পাচ্ছি’, বলেন তিনি। 

উদ্যোক্তা জীবন মানেই চ্যালেঞ্জে ভরপুর আর নারী হলেতো কথাই নেই। নারী হিসেবে প্রচুর বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে দীপার। একটা মেয়ে হয়ে ব্যবসা করবে, এই সমাজ তা মেনে নিতে পারে না। যেহেতু শুরু থেকে প্রোডাক্ট প্রোসেসিং, প্যাকেজিং, কাস্টমার, ডেলিভারি সবকিছু একা ম্যানেজ করতে হয়, সেক্ষেত্রে দীপার মতো নারী উদ্যোক্তাদের জীবন ভীষণ চ্যালেঞ্জিং হয়। 

দীপা আরও বলেন, ‘আমার উদ্যোগ আমার কাছে স্বপ্ন। আমার এই স্বপ্নের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। আমার ব্যবসা নিয়ে আমার কিছু পরিকল্পনা আছে। এরমধ্যে ভবিষ্যতে নিত্য নতুন,  সুন্দর সুন্দর সৃষ্টি দিয়ে খাদিকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার চিন্তাভাবনা। ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন খাদি কাপড়ের পোশাককে প্রাধান্য দেয়, সেজন্য নতুন কিছু করার চেষ্টা করছি। আর সেই কাজটা সহজ হচ্ছে ‘উই’ গ্রুপের জন্য। আমার পরে অনেকেই খাদি কাপড় নিয়ে কাজ শুরু করেছে। খাদিতে এই সুদিন ধরে রাখতে আমরা যারা খাদির উদ্যোক্তা আছি, তাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে।’ 

‘সবাই একই জিনিস নিয়ে পড়ে না থেকে খাদি কাপড়ে নতুনত্ব আনতে পারি, সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। এখন বেশির ভাগ উদ্যোক্তাই তরুণ। তারা যদি একটু মাথা খাটিয়ে কাজ করে, তাহলে ক্রিয়েটিভ আইডিয়া দিয়ে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি সম্ভব। এতে দেশীয় ঐতিহ্যকে যেমন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব, তেমনি ভিন্নভাবে নিজের আত্মপরিচয় গড়ে তোলা সম্ভব’, বলেন তিনি। 

লেখক: শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু কলেজ। 

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়