ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

এটা উদ্যোক্তা কান্তার গল্প

সাজেদুর আবেদীন শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২০  
এটা উদ্যোক্তা কান্তার গল্প

কান্তা চক্রবর্ত্তী বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার চাঁপাপুর ইউনিয়নের মেয়ে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে কান্তাই বড়। ২০১৪ সালে লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে তার বাবা মারা যান। 

কান্তা সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন। অনার্স পর্যন্ত পড়াশোনার খরচ টিউশন করে নিজেই চালাতেন। তার পড়াশোনায় তার বিভাগের শিক্ষকরা যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। বই দিয়ে, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফি মওকুফ করে সহযোগিতা করেছেন। মাস্টার্স শেষ করে জেলা অফিসে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কম্পিউটার ইন্সট্রাক্টর পদে চাকরিতে জোগদান করেন কান্তা। চাকরি, সংসার সামলিয়ে পাশাপাশি উদ্যোক্তা বনে গেছেন তিনি।  

২০১৫ সালে পড়াশোনার পাশাপাশি কান্তা কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন কিন্তু সেখানে সাফল্যের দেখা পাননি। এরপর ২০১৬ সালে শুরু করেন হাতের তৈরি বিভিন্ন রকম মুখরোচক খাবারের ব্যবসা, সেখানেও তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি। 

ব্যবসা করার নিয়ম-কানুন জানার অভাব ও পরিবারের সাপোর্ট ছিল না বিধায় কান্তা সফল হতে পারেননি। তাই শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন তিনি। তবে হাল ছাড়েননি। ২০১৭ সালে ব্লক-বাটিকের প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি মেয়েদের পোশাক রিসেলিং করেন ও একই সঙ্গে ধাপে ধাপে ২০ জন মেয়েকে ব্লক-বাটিকের প্রশিক্ষণ দেন। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন নিজে কাজ করছেন। 

কান্তা বলেন, ‘রিসেলিংয়ে মানসিক তৃপ্তি পাচ্ছিলাম না। তারপর ২০১৯ সালে শুরু করি হাতে তৈরি গহনার কাজ। মাত্র ১৮’শ টাকা মূলধন নিয়ে আমি আমার গহনার উদ্যোগ শুরু করি। শেখানোর কেউ ছিল না, কোনো মাধ্যমও পাইনি। তাই বাজার থেকে হাতে তৈরি গহনা কিনে সেগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি, খুলে খুলেও দেখেছি।’ 

তিনি বলেন, ‘এছাড়া সম্বল ছিল ইউটিউব আর মুক্তা নামে একজন আপু। তিনি নিজেও একজন ক্রাফটার। আপুর সঙ্গে অনলাইনেই পরিচয় হয় আমার। তিনি দূরে থেকেও আমাকে যথেষ্ঠ সহযোগিতা করেছেন। বেশ ভালোই চলছে আমার হাতে তৈরি গহনার কাজ। বর্তমানে আমার মূলধন ১৮’শো টাকা থেকে দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার টাকায়।’

খাবারের প্রতি নেশার কথা জানিয়ে কান্তা বলেন, ‘‘ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স গ্রুপ উইতে জয়েন্ট হওয়ার পর মনের ইচ্ছেটা আবার জেগে ওঠে। তাই আমি আবার খাবার নিয়ে কাজ শুরু করি চলতি ২০২০ সালের রমজানে। সেই সময় থেকে এখনো বেশ সাড়া পাচ্ছি। এখনো কাজের পাশাপাশি বেশ কিছু নারীকে উদ্যোক্তা তৈরির উদ্দেশ্যে হাতে-কলমে গহনা তৈরি ও ব্লক-বাটিকের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আমি চাই, প্রত্যেকেই স্বাবলম্বী হোক। 

সুযোগের অভাবে নিজে অনেক কিছু করতে পারিনি। তাই সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পারছি অন্যদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি ও এটা করেই যাবো। প্রতিভা সবার মাঝেই আছে, শুধু প্রয়োজন একটু সুযোগ, তাহলেই সেই প্রতিভা বিকশিত হবে। 

আর আমি মনে করি, প্রতিভা বিকাশের অন্যতম সেরা প্ল্যাটফর্ম হলো উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)। যেখানে এসে নিজে যেমন কাজ করার সাহস পেয়েছি, তেমনই অনেককে ঘুরে দাঁড়াতে দেখেছি। যেকাজই করতে যাই না কেন, শেখার বিকল্প নেই। তাই ই-কমার্স নিয়েও শিক্ষা নিচ্ছি উই ও ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ গ্রুপ (ডিএসবি) থেকে। এটি আমার উদ্যোক্তা জীবনসহ ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক বেশি সহযোগী ভূমিকা পালন করছে। ’’

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়