ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

দেশি পণ্য আর দেশপ্রেম একই সুতোয় বাঁধা 

সালাউদ্দীন আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪২, ১০ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৯:৩৪, ১০ জানুয়ারি ২০২১
দেশি পণ্য আর দেশপ্রেম একই সুতোয় বাঁধা 

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশীয় পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিতকরণ আবশ্যক। আমাদের এই সোনার বাংলায় আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বহু দেশীয় পণ্য। যেগুলো হয়তো অনেকেই চিনি না বা জানি না। দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত পণ্যগুলো যখন নিজ দেশের হবে, তখনই সমগ্রদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো পরিবর্তন হবে।

যদি বিগত বছরের অর্থনৈতিক জিডিপির দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাবো মহামারির মধ্যেও দেশীয় পণ্য উৎপাদনে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। স্থিরমূল্যে এই জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। যা মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে ২০৬৪ ডলারে উঠেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২০-এর আগস্ট মাসে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক এই তথ্য প্রকাশ করেছে। করোনাভাইরাস কালের এই কঠিন সময়ে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ‘খুবই আনন্দের ও আশাব্যঞ্জক’ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়।

দেশের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার জন্য দেশীয় শিল্পের বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু আমরা যদি দৈনন্দিন পণ্য ক্রয় ও ব্যবহারের সময় খেয়াল না রাখি যে, আমরা কাদের উৎপাদিত পণ্য কিনছি, তাহলে দেশীয় শিল্পের বিকাশে তা অন্যতম বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে অনেকে দেশীয় পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। কিন্তু আমরা যদি আমাদের উৎপাদিত পণ্য প্রথম থেকেই বর্জন করি, তাহলে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদনে দক্ষতা ও ব্যয় কুশলতা কীভাবে অর্জন করবে? 

শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কলকারখানার যন্ত্রপাতি কেনা ও ভবন নির্মাণ বাবদ প্রথমেই বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে হয়। ফলে প্রথম পর্যায়ে পণ্যের গড় উৎপাদন খরচ বেশি থাকে, যা উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে। এদিকে বড় বড় বিদেশি কোম্পানি দীর্ঘ দিন ধরে ওই পণ্যের ব্যবসা করায় তাদের গড় উৎপাদন ব্যয় অনেক কমে আসে। ফলে তারা কম দামে ভালো পণ্য বিক্রি করতে পারে। 

এমন অবস্থায় যদি আমরা ভোক্তারা পণ্যের গুণাগুণের দোহাই দিয়ে শুধু বিদেশি পণ্য ব্যবহার করতে থাকি, তবে আমাদের নিজেদের শিল্প কখনোই শক্তিশালী অবস্থানে যেতে পারবে না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সব পণ্যের ক্ষেত্রে না হোক, অন্তত যেসব শিল্প উৎপাদনে বাংলাদেশের সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব পণ্য ব্যবহারে যাতে আমরা সচেতন হই।

আমাদের দেশের উৎপাদিত পণ্যগুলো যদি নিজেরা ব্যবহার করতে না শিখি, তবে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকে মারাত্মকভাবে ধ্বংস করা হবে। পণ্যের গুণগত মানের দোহাই দেওয়া যেনো আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আর যে কারণে আমরা বিদেশে পণ্যের দিকে ঝুঁকছি। অথচ বিদেশি পণ্যের তুলনায় দেশীয় পণ্যের গুণগত মান অনেক এগিয়ে।

দেশীয় পণ্যকে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে মূখ্য ভূমিকা পালন করছে ই-কমার্স সেক্টর। ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে দেশীয় পণ্যের সম্ভাবনা অনেক বেশি। গত বছর করোনাকালীন সময়ে দেশীয় পণ্যের ই-কমার্স উদোক্তারা দেশের অর্থনীতিতে অসামান্য ভূমিক রেখেছে, যা কিনা দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে দারুণভাবে কাজ করছে।

ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে দেশীয় পণ্যকে এগিয়ে নিতে এখন আমাদের প্রচার ও প্রসার বাড়াতে হবে। বিদেশি পণ্য ছাড়াই যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পেরেছি, সেটা জানানোর সময় হয়েছে। দেশীয় পণ্যকে এগিয়ে নিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তৃনমূল পর্যায়ের গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা শহর কেন্দ্রিক এটার প্রচারণা বৃদ্ধি করতে হবে।

দেশের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে দেশীয় পণ্যের ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাতে সবাইকে নিজের নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বিধিতে দেশীয় পণ্যকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। নিজের দেশকে এগিয়ে নিতে নিজের দেশের প্রতি নিজের দায়িত্বকে কখনো অবহেলা করার সুযোগ নেই। দেশি পণ্যকে ব্যবহার করা মানে নিজের দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করা।

দেশীয় পণ্যকে সহজতর করে দিয়েছে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি। এখন সহজেই এক জেলার পণ্য অন্য জেলায় পাওয়া যায়। কৃষিজ পণ্যগুলো উৎপাদনও করা যায়। কাজেই ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির হাত ধরে দেশীয় পণ্য বহুদূর এগিয়ে যাবে। সেজন্য নিজেকে একজন দেশীয় পণ্যের ভোক্তা হিসেবে তৈরি করতে হবে।

লেখক: স্বত্বাধিকারী, বিডিম্যানগ্রোভ.কম।

ঢাকা/সিনথিয়া/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়