ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

দেশি পণ্যের প্রসারে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন

নিগার ফাতেমা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০২, ১২ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৮:০৩, ১২ জানুয়ারি ২০২১
দেশি পণ্যের প্রসারে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন

বাংলাদেশের পণ্য আমাদের ঐতিহ্য আমাদের গৌরব। দেশীয় পণ্যের সিলেবাস তৈরি করতে গিয়ে এই দেশের অনেক পণ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছি। বাংলাদেশর ৬৪ জেলায় অনেক অনেক পণ্য রয়েছে। যেগুলো আমাদের দেশের জন্য অনেক শক্তিশালী সম্পদ। প্রচারের অভাবে মানসম্মত পণ্যগুলো অনেকের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। 

বর্তমানে ই-কমার্সের জন্য দেশি পণ্যের প্রচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক নতুন উদ্যোক্তা গর্বের সঙ্গে দেশি পণ্য নিয়ে নিজের উদ্যোগ শুরু করছেন। প্রত্যন্ত অনেক অঞ্চল আছে, যেখানে নারীরা বিভিন্ন দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। এই আয়ের ফলে তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে।

দেশীয় পণ্য নিয়ে বেশ কিছু উদ্যোক্তা এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু স্বল্প প্রচারের জন্য অনেকেই সে বিষয়ে জানে না। ক্রেতা বা যারা দেশের জনসাধারণ আছেন, তাদের এই পণ্যগুলো সম্পর্কে তেমন জ্ঞান নেই বলে দেশীয় পণ্যের ক্রেতার সংখ্যা কম। অনেক অঞ্চলে ডেলিভারি সার্ভিসের ভালো ব্যবস্থা নেই। ৫-১০ মাইল পথ এসে তারপর একজন উদ্যোক্তাকে তার পণ্য ডেলিভারি দিতে হচ্ছে। তাও সেখানে নিশ্চিয়তা থাকছে না তার কাস্টমার পণ্যটি সঠিক সময় পাবেন কি-না। 

একজন নারী ঘরে বসে অনলাইনভিত্তিক সেবা দিতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এখনো অনেক অঞ্চল আছে, যেখানে ইন্টারনেট সেবা সেভাবে পৌঁছায়নি। ফলে একটি উৎপাদিত পণ্যের এলাকা থেকে একজন দেশি পণ্যের উদ্যোক্তা তার উদ্যোগ নিয়ে যথাযথভাবে এগিয়ে আসতে পারছেন না।

এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে দেশি পণ্য নিয়ে অধ্যায়ন চালু করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেশি পণ্য নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সেমিনারের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে হবে। দেশি পণ্য নিয়ে জানতে ও ভবিষ্যতে নিজেদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে তাদের আগ্রহী করে গড়ে তুলতে হবে। 

যেসব অঞ্চলের পণ্য সম্পর্কে আমরা অবগত নই, বিভিন্ন মিডিয়ায় তা প্রচার করতে হবে। যেন একজন নাগরিক নিজের দেশের পণ্য সম্পর্কে জানতে পারেন। ফেসবুক ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমরা এসব প্রচারণা বৃদ্ধি করতে পারি। ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো নিয়ে বিভিন্ন ডকুমেন্টারি তৈরি করে বিভিন্নভাবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তুলে ধরতে পারি। বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের কাজের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলো আবার ফিরিয়ে আনতে পারি।

গ্রামীণ নারীদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও তাদের আর্থিক সহযোগিতা করতে হবে। অর্থনীতিতে নারীদের ভূমিকা নিশ্চিত করতে পারলে তা শুধু সমৃদ্ধি বয়ে নিয়ে আসবে না বরং দেশের মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পাবে। 

প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ডেলিভারি সেবা নিশ্চিত করতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। এর জন্য সরকারকে তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সরকারি সহযোগিতা ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ দেশি পণ্যের প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। 

ভালো ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে জোড়াল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেন একজন দেশি পণ্যের উদ্যোক্তা দেশের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, তিনি যেন নিজের উদ্যোগ এগিয়ে নিতে আগ্রহ না হারান, সে দিকে নজর দিতে হবে।

দেশি পণ্য নিয়ে যারা কাজ করছেন, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে, তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে করে তারা তাদের জ্ঞান বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশি পণ্যকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারেন। নিজের উদ্যোগে কি কি প্রয়োজন, সে সম্পর্কেও জানতে পারেন।

২০২০ সাল ছিল মহামারির একটি বছর, যেখানে পুরো দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো নড়েচড়ে বসেছিল, সেখানে দেশীয় পণ্যের ই-কমার্স সেক্টর অর্থনৈতিক ভূমিকায় অসামান্য অবদান রেখেছে৷ গত বছর দেশে দেশীয় পণ্যের অনেক উদোক্তা তৈরি হয়েছে, যা আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক। গ্রাম পর্যায় থেকেও মানুষ এখন ই-কমার্স সেক্টরে কেনাকাটা করতে শুরু করেছে। 

এক জেলার পণ্য অন্য জেলায় সহজেই পাওয়া যায় ই-কমার্স সেক্টরের কারণে৷ তবে কিছু বাঁধা ও সমস্যা উদোক্তাদের নানামুখী চিন্তায় ফেলে। দেশীয় পণ্যের উদোক্তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলতে সরকারকে আহ্বান জানাবো। সেইসঙ্গে কিছু স্ট্যার্টআপ কোম্পানিকে আর্থিকভাবে ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাহলে এই সেক্টর দারুণভাবে এগিয়ে যাবে। তাছাড়া ২০২১ সালে দেশীয় পণ্যের ই-কমার্স সেক্টরের সম্ভাবনা অনেক। যে কারণে এদিকে সুনজর দেওয়ার আহ্বান জানাই।

একটি দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে সে দেশের নিজ পণ্যের প্রচার ও প্রসার সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে হাজার হাজার দেশি পণ্য রয়েছে, এই পণ্যগুলোকে যদি ভালোভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করা যায়, তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতিতে দেশি পণ্য প্রধান ভূমিকা পালন করবে।

লেখক: স্বত্বাধিকারী, আরিয়া’স কালেকশন।

ঢাকা/সিনথিয়া/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়