ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘মনমোহিনী’কে নিয়ে মোহিনীর পথচলা

রেজাউল ইসলাম রেজা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৫, ২১ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৬:২১, ২১ জানুয়ারি ২০২১
‘মনমোহিনী’কে নিয়ে মোহিনীর পথচলা

‘চোখের ভেতর স্বপ্ন থাকে, স্বপ্ন দেখায় জীবনটাকে।’ স্বপ্ন দেখতে ক্ষতি কি! জীবন রুপালী পর্দার কোনো গল্প নয়। বরং জীবনের গল্পই রুপালী পর্দায় স্থান পায়। এই জীবনের পেছনেও থাকে নানা রকমের অজানা গল্প। থাকে মনোবাসনা পূরণের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, অনুপ্রেরণা। 

আজ এমনি এক তরুণীর কথা বলবো, যিনি প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও উদ্যোমে তার লালিত স্বপ্ন পূরণের জন্য এগিয়ে চলছেন। তিনি মোহিনী মজুমদার।  কদিন আগেই স্নাতক শেষ করেছেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ থেকে। কৃষি নিয়ে পড়লেও সবসময় লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজে কিছু করার চেষ্টা করতেন। করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এই দীর্ঘ সময় বসে না থেকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। একের পর এক বাঁধা তাকে জর্জরিত করলেও বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন। 

কথা হয় মোহিনী মজুমদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা পেশায় একজন ব্যবসায়ী। করোনাকালীন সময়ে টানা বাসায় থাকায় বাবার ব্যবসায়িক টানাপোড়েন শুরু হয়। মেয়ে হয়েও আমি বাবার ঘাড়ে বসে থাকতে কখনোই চাইনি। অনেক আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করার। কিন্তু বাবা নিজে ব্যবসায়ী হলেও কখনো চাননি আমি ব্যবসা করবো। 

বাবা সবসময় আমাকে পড়াশোনার জন্য উৎসাহিত করেছেন। তার কষ্ট আমাকে বুঝতে দেননি। কিন্তু আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছি। সত্যি কথা বলতে ছোট থেকে রান্না করতে খুব পছন্দ করতাম। বিশেষ করে বেকিংয়ের কাজে আমার দক্ষতা ছিল। তাই বেকিং নিয়ে কাজ করার খুব ইচ্ছে হয়। কাজও শুরু করি, তবে বিভিন্ন প্রতিকূলতার জন্য সেটা হয়ে ওঠেনি। উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের নাম লেখানোর শুরুতেই হোঁচট খাই। তবে আমি দমে যাইনি। ঘুড়ে দাঁড়িয়েছি। আবার নতুনভাবে শুরু করতে হবে। এরপর থেকে রোজ রাত জেগে ইন্টারনেটে সার্চ করতাম। কী করা যায়। তারপর অনেক কষ্টে বাবাকে আবার রাজি করালাম। আমি কাজ করছি বিভিন্ন ধরনের দেশি শাড়ি, থ্রিপিস, কুর্তি, পাঞ্জাবি নিয়ে। 

আজকালকার দিনে সবকিছুতেই অনেক বেশি প্রতিযোগিতা। তাই পণ্যের গুণগতমান থেকে শুরু করে পণ্যের দাম নির্ধারণ সবকিছুতেই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নজর রেখেছি। আমি ক্রেতা হলে পণ্যটি কত টাকা দিয়ে কিনতাম, তার উপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করেছি। খুবই অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু হয় আমার যাত্রা ‘মনমোহিনী’কে নিয়ে। ফেসবুক পেজের নাম নির্ধারণ করা নিয়ে হয়রান ছিলাম দুই রাত। কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিলাম না। অতঃপর মনে হলো আমার নামের সাথেই তো জুড়ে দিতে পারি। সেই থেকেই ‘মনমোহিনী’র যাত্রা শুরু হয়।

এই ব্যবসা সামলাতে গিয়ে অনেক বাঁধার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ সমাজের মানুষ এখনো ভাবতে পারে না, মেয়ে হয়ে আমি ব্যবসা করবো। এখনো অনেকের বদ্ধমূল ধারণা যে, পড়াশোনা করলে আর ব্যবসা করা যাবে না। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে তো এটা আরো প্রকট।

কিন্তু সব বাঁধা পেরিয়ে আমি আজকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি সফলতার সঙ্গে। একা সবকিছু সামলাতে গিয়ে হাঁপিয়ে গিয়েছি, কিন্তু থেমে থাকিনি। তাছাড়া মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা, কাছের কিছু মানুষ ছিলেন, যারা সর্বদা আমাকে সাহস যুগিয়েছেন। চোখ বুজে সাপোর্ট করে গেছেন আর বলেছেন, ‘মোহিনী তুমি পারবে’ এই একটা কথাই আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করেছে।’

মোহিনী মনে করেন, মেয়ে হয়েছি বলে পিছিয়ে থাকতে হবে কেন? বর্তামানে মেয়েরাও ছেলেদের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে চলছে। তিনি স্বপ্ন দেখেন একদিন তার এই মনমোহিনী একটা ব্র্যান্ড হিসেবে এদেশে পরিচিতি পাবে। নিজস্ব ডিজাইনের পোশাক তৈরি করে দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে সহায়তা করবেন তিনি।

লেখক: কৃষি অনুষদ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

পবিপ্রবি/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়