ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

শখ থেকেই সফল রঙিন মাছ চাষি রেজোয়ান

তাসলিমা পারভীন বুলাকী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ০৯:৪০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
শখ থেকেই সফল রঙিন মাছ চাষি রেজোয়ান

সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছাদে যাওয়ার জন‌্য অস্থির হয়ে ওঠেন রেজোয়ান। ফ্রেস হয়েই ছুটে যান ছাদে। সেখানে গেলেই রঙিন হয়ে ওঠে তার চোখমুখ। হবেই না বা কেন? চৌবাচ্চা ভরা রঙিন মাছের খেলা আর ছুটোছুটি করার দৃশ্য দেখলে যে কারো চোখ কেন মনও রঙিন হয়ে উঠবেই।

বলছিলাম গোপালগঞ্জ মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেক্সটাইল বিভাগের ৪‍র্থ সেমিস্টারের ছাত্র রেজোয়ান আহমাদ চৌধুরীর কথা। রেজোয়ানের জন্ম গোপালগঞ্জ শহরের ইসলামপাড়ায়। সেখানেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। শখের বসে মাছ পালতে গিয়ে তিনি এখন একজন সফল রঙিন মাছ চাষি।

রেজোয়ান আহমাদ চৌধুরী বলেন,  ‘রঙিন মাছ আমার খুব ভালো লাগতো। আমি ছোটবেলা থেকেই রঙিন মাছ বাসায় রাখার শখ করতো আমার। করোনা শুরুর সময় কলেজ বন্ধ থাকায় হাতে তেমন কাজ ছিলো না। তাই সময় কাটানোর জন্য আর কিছুটা সখের বশেই গতবছর জুনের ৭ তারিখে বাবার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে গাপ্পি ১৫ পিছ আর ব্ল্যাক মলি ১৫ পিছ কিনে আনি। এরপর একদিন দেখলাম সেই মাছগুলো বাচ্চা দিয়েছে। এটা আমাকে বেশ আনন্দ দেয়। কিছুদিন পরপরই মাছগুলো বাচ্চা দিতো। এভাবে ধীরে ধীরে আমার মাছ বাড়তে শুরু করে। এটা দেখে রঙিন মাছের ফার্ম করার স্বপ্ন বুনতে শুরু করি। বলতে গেলে রঙিন মাছের পালার নেশায় পরে যাই আমি। ধীরে ধীরে এই নেশা আমাকে একটা রঙ্গিন মাছ চাষে আগ্রহী করে তোলে।’

রেজোয়ান আহমাদ চৌধুরী আরও বলেন,  ‘আমার এমন কিছু করা ইচ্ছা ছিল যেখানে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। আমি দেখলাম, রঙিন মাছ চাষ আমাকে আনন্দ ও অর্থ দুটোই দিচ্ছে। আর লেখাপড়ার পাশাপাশি এটা করতে আমার তেমন কষ্ট হচ্ছে না। তাই বৃহৎ পরিসরে শুরু করার জন্য চেষ্টা করি। একাজে ছোট ভাই-বোন আমাকে সহায়তা করে। বলতে গেলে অনেকটা খেলার ছলেই এই ফার্ম চলছে।’

এই মুহূর্তে প্রজেক্টে ৫০-৫৫ হাজার টাকার সেটআপ আছে জানিয়ে  রেজোয়ান আহমাদ চৌধুরী বলেন,  ‘ আমার খামারে বর্তমানে অরেন্ডা গোল্ডফিশ, কমেট, কইকার্প, ফাইটার, মিক্সড গাপ্পি, স্নেক স্ক্রিন গাপ্পি, ব্ল্যাক মলি, হোয়াইট মলি, গোল্ডেন মলি, গোলডাস্ট মলি এবং ফাইটার আছে। এখানে আরও ইনভেস্ট করার পরিকল্পনা আছে।’

রঙিন মাছের খাবার ও পরিচর্চার বিষয়ে রেজোয়ান আহমাদ চৌধুরী জানান, রঙিন মাছকে সাধারণত একুরিয়াম ফিশ ফিড খাওয়ানো হয়। এছাড়া মাঝে মাঝে আলু সিদ্ধ, শসা, গাজর সিদ্ধ খাওয়ানো হয়। সঠিক নিয়মে পালন করলে রোগ খুব কম হয়। আর রোগ হলে বিভিন্ন মেডিসিন এবং ট্রিটমেন্ট দিতে হয়। প্রতি মাসে রঙিন মাছ থেকে তার ১২-১৫ হাজার টাকা আয় হয়। এই কাজে ছোট ভাইয়েরা সহায়তা করে এবং পরিবারের সদস্যরা সব সময় উৎসাহ দেন। 

রঙিন মাছ বিক্রির জন্য   ‘অ‌্যাকুরিয়াম ফিশ ফার্ম গোপালগঞ্জ’ নামে অনলাইনে একটা পেজ আছে। এই পেজের মাধ‌্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাস্টমার অনলাইনে অর্ডার করেন এবং সেগুলোকে কুরিয়ারের মাধ্যমে তিনি ডেলিভারি দেন বলেও জানান তিনি।

‘অ‌্যাকুরিয়াম ফিশ ফার্ম গোপালগঞ্জ’ অনলাইন পেজে মাছ অর্ডার করেছিলেন ঢাকার শ‌্যামলীর মনিরা বেগম। তিনি বলেন, ‘এই পেজের কিছু মাছ বেশ স্বাস্থ‌্যবান আর সুন্দর। তাই এখানে মাছ অর্ডার করেছিলাম। এই পেজের স্বত্ত্বাধিকারী রেজোয়ান সাশ্রয়ী মূল‌্যে মাছ সরবরাহ করেছেন। এবং মাছ পালনের দিক নির্দেশনাও দিয়েছে।’

রেজোয়ানের ছোট ভাই ফাহিম আহমাদ চৌধুরী জানান, বড় ভাইয়ের এই কাজে সব সময় তাকে সহায়তা করেন তিনি। এতে তার খুব ভালো লাগে।

রেজোয়ানের মা নুরুন নাহার বলেন,  ‘ আমার ছেলের রঙিন মাছের প্রতি খুব ঝোঁক। সে বাজে কাজে সময় নষ্ট করে না জন্য ভালো লাগে। মাছই তার বন্ধু। তার খারাপ বন্ধু বা আড্ডা নেই। শখের বসে শুরু করে সে এতটা দূর পর্যন্ত যেতে পারবে আগে ভাবিনি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যখন ফার্ম দেখতে আসে ভালো লাগে।’

রেজোয়ান আহমাদ চৌধুরী জানান, রঙিন মাছগুলো যখন পানির মধ্যে ছুটোছুটি করে তখন মন ভালো হয়ে যায়। মনের মধেও অন‌্যরকম একটা সুখবোধ কাজ করে তার। ভবিষতে বড় পরিসরে রঙিন মাছ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়