ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ই-কমার্সের সামাজিক সুবিধাসমূহ

সালাউদ্দিন আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৬, ২৮ মার্চ ২০২১  
ই-কমার্সের সামাজিক সুবিধাসমূহ

জীবনের প্রতিটি পদে পদে ই-কমার্সের ভূমিকা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি দেশ ও সমাজের জন্য সুফল বয়ে আনছে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির গুরুত্ব কত এবং এর সুবিধাসমূহ কী কী সেগুলো নিয়েই আজকের আলোচনা ।

ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা : যদি বাজারে আপনার দোকান থাকে তাহলে আপনার সেবা প্রদানের ভৌগোলিক এলাকা সীমিত হয়। একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পুরো পৃথিবী আপনার খেলার মাঠ হতে পারে। আবার ফেসবুক বা এফ- কমার্সের আবির্ভাবের কারণে মানুষ এ নিয়ে বেশি জানতে পারছে। যেমন- মোবাইল ডিভাইসগুলোতে ই-কমার্স ভুগোলের বাকি সীমাবদ্ধতাকে দূর করেছে। এতে করে অল্প সময়ে দেশীয় পণ্য বিশ্বে ছড়িয়ে পরছে।  এতে করে স্থানীয় পণ্যের মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আয় করা সম্ভব হচ্ছে। শুধু তাই নয় এর মাধ্যমে বৈশ্বিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও মানব সমাজে ভালো কিছু করার সুযোগ রয়েছে।

আপনার পণ্য বিক্রিতে ক্রেতাদের ভূমিকা : অধিক গ্রাহকের পণ্যের রিভিউ বা পর্যালোচনা বিবেচনা করে অন্যরাও তা কিনতে আগ্রহী হচ্ছে। এছাড়াও ক্রেতা ও পণ্য রেটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব। যেমন- নতুন ক্রেতারা আপনার পণ্য ভালো ও কার্যকর বলে মনে করে। ক্রেতাদের প্রশংসা, প্রতিক্রিয়া ও পণ্যের রেটিংসমূহ আপনার ব্যবসার নতুন ক্রেতাদের পণ্য ক্রয় করতে সহায়তা করে।

নিজপণ্যের জন্য বাজার সম্প্রসারণ : অনেক সময় ক্রেতা ও বিক্রেতাদের একে অপরকে একত্রে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পরে। তবে ব্যবসা যদি ই-কমার্সের আওতায় আনা যায়, তাহলে তাদের  যোগাযোগ সহজ হয়। ক্রেতারা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো অনুসন্ধান করতে পারেন। এতে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে ক্রেতারা ঝামেলা ছাড়াই সবধরনের পণ্য খুঁজে পেতে পারেন।

কর্মপরিধি : একটি কার্যকর ই-কমার্স ব্যবসার মাধ্যমে ক্রেতাদের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা পূরণ হয়। এক্ষেত্রে অবশ্যই ক্রেতা অনুযায়ী বিভিন্ন বিক্রয় চ্যানেল চালু করতে হবে। এভাবে ক্রেতাদের সেবা প্রদান করে বাজারে নিজ প্রতিষ্ঠানের পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি ও পরিমাপ করা যায়। 

কার্যকর গ্রাহক সেবা : ই-কমার্স ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে আপনার ব্যবসা ও পণ্য সম্পর্কে সকল তথ্য সরবরাহ করে। এতে রয়েছে গ্রাহকদের দ্রুত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সুবিধা। এটি অবিলম্বে পণ্য সরবরাহ করার মাধ্যমে গ্রাহকদের বিশ্বস্থতা জয় করতে সক্ষম হয়। উন্নত যোগাযোগ ও পণ্য দ্রুত ডেলিভারির মাধ্যমে ক্রেতাকে সন্তুষ্ট করতে পারে।
রাজস্ব বৃদ্ধি : খরচ কমানো ও বিক্রয় বৃদ্ধি এসব ব্যবসাকে মুনাফা অর্জনে সহায়তা করে। ই-কমার্স ব্যবসা ৩৬৫/২৪/৭ (এক বছরে প্রত্যেক সপ্তাহে চব্বিশ ঘন্টা) খোলা থাকার কারণে সারা বছর রাজস্ব খাতে ভূমিকা রাখে।

ব্যবসায়িক লেনদেনের দক্ষতা : ব্যবসার প্রক্রিয়াসমূহের স্বয়ংক্রিয়তা তার অপারেটিং প্রসেসগুলোকে (পরিচালনার প্রক্রিয়াসমূহ) দক্ষ করে তুলতে সাহায্য করে। ই-কমার্স ব্যবসায়িক লেনদেনের কাজ সম্পন্ন করার জন্য ন্যূনতম সময় নেয়, এর ফলে সঠিকভাবে লেনদেনের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

সঞ্চয় প্রবৃদ্ধি : অর্থ সঞ্চয়, মধ্যস্বত্ব ও ব্যবসার খরচের প্রক্রিয়া সাধারণত ক্রেতার উপর নির্ভর করে। যেহেতু মধ্যস্বত্ব নির্মূল করা হয়, তাই ক্রেতাদের মধ্যস্বত্বের খরচ বহন করতে হয় না।  গতানুগতিক ব্যবসায় গ্রাহকদের আকৃষ্ট এবং প্রতিযোগীদের মোকাবেলা করতে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কম দামে পণ্য ও পরিসেবা সরবরাহ করে। কিন্তু ই- কমার্স এসবের ঝুঁকি কম থাকে।

লেনদেনের দক্ষতা : ক্রেতা ও ভোক্তার মাঝে প্রচলিত উপায়ে লেনদেন সাধিত হলে দুটি পক্ষের সংযোগ হয়। অপরপক্ষে ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনাকাটায় বহুমাত্রিক সংযোগ নিশ্চিত হয়। এখানে ক্রেতা, উৎপাদক বা সরবরাহকারী, ব্যাংক, পেমেন্ট প্রসেসর, শিপিং এজেন্ট ইত্যাদি পক্ষসমূহ পারস্পরিক সংযোগ তৈরি করে। যা মুক্ত ও কল্যাণকর অর্থনীতির জন্য দরকারি।

নতুন ক্রেতাকে সংযুক্ত করে : এটি উন্নয়নশীল দেশ ও গ্রামীণ এলাকার মানুষ উভয়কে পণ্য, পরিসেবা ও তথ্য দিয়ে থাকে। এছাড়াও অন্যান্য ক্রেতাদের তথ্য সংগ্রহ করতে সহায়তা করে। যা আগে এত সহজলভ্য ছিল না।

সরকারি সেবা প্রদানের সুবিধা : ই-কমার্স জনসাধারণকে সেবা প্রদানের সুবিধা প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল ও ডাক্তার বা নার্সদের সঙ্গে অনলাইনে পরামর্শের জন্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিসেবাসমূহ ব্যবহার করা। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, টেলিফোন বিল ইত্যাদি প্রদানের জন্য আজকাল সরকার ও জনগণের মাঝে লেনদেনের বিনিময়ে সেবা আদান-প্রদান হচ্ছে।

চাকরির সুযোগ প্রদান : ই-কমার্স সমাজে চাকরিগ্রহীতা ও চাকরিদাতার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে।  ইন্টারনেটে জীবনবৃত্তান্ত পোস্টের মাধ্যমে অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে সক্ষম হচ্ছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানও ছাত্রছাত্রীদেরকে বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ই-বাণিজ্য বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত বা নেটওয়ার্ক সরবরাহ করে।

সম্পর্কে আন্তরিকতা বৃদ্ধি : ই-কমার্সের মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের কাছে উপহার ও শুভেচ্ছা ভাউচার পাঠাতে পারে। এভাবে এটি সমাজে মানুষের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক উন্নত করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

তথ্য সম্পদ প্রদান : ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষ যেকোনো তথ্য পেতে সক্ষম হয়।  যেমন- পর্যটন এলাকা থেকে কম খরচে বিভিন্ন পণ্য সম্পর্কে বৈশ্বিক তথ্য পেতে পারে।  শুধু ক্লিকের মাধ্যমে মানুষ তার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে পারছে।  ই-কমার্স অনলাইনের মাধ্যমে ছাত্র-সমাজকে শিখতে ও জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম করে। শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময়ে প্রকল্পসমূহ ও তথ্য ডাউনলোড করতে পারেন। ডাক্তার ও নার্স ইন্টারনেটের মাধ্যমে পেশাদার তথ্য পেতে পারেন। এ থেকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাথে নিজেদেরকে আপডেট করতে পারেন। এটি ডাক্তারকে তার রোগীদের কম খরচে ভালো স্বাস্থ্যসেবা দিতে সহায়তা করে।

লেখক: স্বত্বাধিকারী, বিডিম্যানগ্রোভ.কম।

ঢাকা/সিনথিয়া

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়