ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

রাঙামাটির ঐতিহ্য ঝুড়ি ব্যাগেই রুমা আজ সফল উদ্যোক্তা

শিরীন সুলতানা অরুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ১০ জুলাই ২০২১  
রাঙামাটির ঐতিহ্য ঝুড়ি ব্যাগেই রুমা আজ সফল উদ্যোক্তা

রুমা আক্তার, জন্ম নোয়াখালীর হাতিয়াতে হলেও বিয়ের পর স্বামীর চাকরিসূত্রে রাঙামাটিতেই পরিবারের সঙ্গেই বসবাস। বিএ দ্বিতীয় বর্ষে থাকা অবস্থায় ২০১৭ সালের মে মাসে পিডিপির চাকরিজীবী নাজমুল হুদা নাহিদের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তার। বর্তমানে তিনি রাঙামাটি কলেজে মাস্টার্স প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন। এরই মাঝে সংসার ও পড়াশোনা সামলিয়ে রুমা হয়ে উঠেছেন ই-কমার্স ব্যবসায়ী ।

কারণ, নিজের একটা পরিচিতির দরকার ছিল রুমার। ইচ্ছে ছিলো চাকরি করার। কিন্তু নানা পরিস্থিতির কারণে তা হয়ে ওঠেনি। অল্প বয়স থেকেই নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে ভালো লাগতো তার। তিনি মনে করতেন কাজে ব্যস্ত থাকার মাধ্যমেই জীবনে ভালো কিছু করা সম্ভব। এসব চিন্তা থেকেই করোনাকালীনে অবসর সময়কে কাজে লাগাতে অনলাইনে শুরু করেন নিজের উদ্যোগ ।  

যেহেতু তিনি রাঙামাটিতে থাকেন এবং সেখানকার ঝুড়ি ব্যাগগুলোর চাহিদাও অনেক। এভাবেই রুমা এমন পণ্যের সোর্সিং নিয়ে চমৎকার ধারণা খুঁজে পান। ফেসবুক পেজ ‘Rumaisha Collection’-এর মাধ্যমে শুরু হয় তার উদ্যোক্তা জীবনের অগ্রযাত্রা । তার পেজের সিগনেচার পণ্য রাঙামাটির ঝুড়ি ব্যাগ। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে পিনন পার্স,শাল,তাঁতের ড্রেস ইত্যাদি ।

রুমা আক্তার বলেন, ‘ব্যবসার শুরুটা মোটেও সহজ ছিলনা। ৮ মাসের বাচ্চা, বৃদ্ধ শ্বশুর শাশুড়ি এবং সংসার সামলিয়ে ব্যবসা সামলানো বড়োই কঠিন ছিলো। তারপর সময় মতো পণ্যের সোর্সিংটাও করতে পারতাম না করোনার জন্য। এরপর সঙ্গে ছিল মানুষের সমালোচনা। কেউ বলতো বাচ্চার যত্ন নিচ্ছিনা ঠিকমতো এবং সারাদিন মোবাইল নিয়ে থাকি। আবার কেউ বলতো অভাবে পড়ে গেছি মনে হয় তাই ব্যবসা শুরু করেছি।

শুরুর দিকে রাঙামাটি টেক্সটাইল মার্কেটগুলো থেকে পাইকারিতে ঝুড়ি নিয়ে বিক্রি করেছি। করোনা পরিস্থিতিতে মার্কেটগুলোতে তেমন বিক্রি ছিল না।  পুরো রাঙামাটির ট্রেক্সটাইল মার্কেট নিরব হয়ে গিয়েছিল। তাদের একমাত্র ক্রেতা ছিলাম আমি। দোকানিরা খুব আনন্দে আমাকে ঝুড়ি ব্যাগগুলো দিতো। সবার মুখে একটাই কথা ছিল, করোনাতে দিদি আপনি আমাদের অনেক সার্পোট দিয়েছেন। কিছু না হোক ঝুড়ি তো বিক্রি করতে পারছে, এটা তাদের কাছে অনেক খুশির ব্যাপার ছিল’।

তিনি আরও বলেন, ‘একদিন এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ফেসবুক গ্রুপ উইতে (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) যুক্ত হই। সেখান থেকেই রাজীব স্যার এবং নিশা আপুর মাধ্যমে তৈরি হয়েছে ব্যবসার মূল ভিত্তি। তাদের প্রতি আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। উইর মত প্লাটফর্ম পেয়েছি বলে নিজেকে প্রকাশ করতে পেরেছি। ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন কিছু অভিজ্ঞতা, যা মোটেও আমার ছিল না। পুরোটাই রাজীব স্যার এর দিকনির্দেশনা মেনে কাজ করেছি।  আর এভাবেই স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছি।’

রুমা স্বপ্ন দেখেন নিজস্ব কারখানায় কারিগর দিয়ে ঝুড়ি ব্যাগ তৈরি করার। সেই সঙ্গে তার উদ্যোগকে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে দেখতে চান। তিনি চান দেশের ৬৪ জেলা পেরিয়ে তার পণ্য পৌঁছে যাক বিদেশের মাটিতেও। এভাবেই সততা ও ধৈর্য নিয়ে ব্যবসায় এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।   

লেখক: স্বত্ত্বাধিকারী-এস এস এগ্রো প্রোডাক্ট, জেলা প্রতিনিধি উই (রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) এবং জেলা কন্ট্রিবিউটর লেখক, উদ্যোক্তা/ ই-কমার্স পাতা, রাইজিংবিডি ডটকম।

রাঙামাটি/সিনথিয়া/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়