ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মেয়েটির পরনে লাল শাড়ি

রণজিৎ সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০০, ১৯ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মেয়েটির পরনে লাল শাড়ি

অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার

রণজিৎ সরকার : ঈদে ঢাকা শহর ফাঁকা। অনেকেই গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে গেছে। আমি যাইনি। ঢাকাতেই আছি। বন্ধুরা কেউ নেই। সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে একা একা হাঁটছি। হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখে অবাক হলাম। পরনে লালপেড়ে শাড়ি। মাথার খোঁপায় গোঁজা একটি লাল গোলাপ। কপালে লাল সবুজের টিপ। দুই কানে লাল পাথরের দুল। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপিস্টিক। হাতে একগাছা কাচের লাল চুড়ি। হাত নাড়ালেই ঝনাৎ ঝনাৎ করে বাজে।

 

মেয়েটি লালে লাল বরণের পরি মনে হচ্ছে আমার কাছে। লাল জিনিসের প্রতি খুব দুর্বল আমি। আমার পরনের প্রায় সব পোশাক লাল। মেয়েটার পরনের শাড়ি দেখে তার কথা মনে পড়ে গেল আমার। ১লা বৈশাখ উপলক্ষে একজনকে একটা শাড়ি দিয়েছিলাম।

 

কিন্তু দুঃখের বিষয় ১লা বৈশাখে সে শাড়িটা পরেনি। আজ পর্যন্তও পরেনি, আমার জানা মতে। আমি তাকে কখনো জিজ্ঞেস করিনি, শাড়িটা কেন পরনি? আমি ভেবে নিয়েছি, শাড়িটা তার পছন্দ হয়নি। জীবনের প্রথম কাউকে শাড়ি দিলাম। সে পরল না।  অথচ ও শাড়ি পাওয়ার পর বলেছিল- শাড়ি পরে কত কিছু করবে। কিছুই করেনি আজও। অথচ অন্যের কাছ থেকে কোনো জিনিস পেলে, সে জিনিসের ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়। আমি দেখি। মন খারাপ হয়। ভীষণ মন খারাপ হয় আমার।

 

গোপনে দিয়েছিলাম। গোপন থাক। মেয়েটিকে শাড়ি পরা দেখে তার কথা একটু বেশি মনে পড়ে গেল আমার। সে যদি আমার দেওয়া শাড়িটা পরত। আমি যদি তার পাশে থাকতাম। পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটতাম দুজন। কি যে ভালো লাগত আমার। যাক, সে সৌভাগ্য হয়নি। সেজন্য কোন দুঃখ নেই আমার। এই মেয়েটির মাঝে তাকে খুঁজে পাচ্ছি।

 

মেয়েটি হেঁটে যাচ্ছে পূর্ব দিকে। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। পেছনে আমি। হেঁটে যাচ্ছি। মেয়েটিকে অনেক ভালো লাগছে আমার। কিন্তু কেন যেন সন্দেহ হচ্ছে আমার। সে কি আসল কোনো মেয়ে, না কি অন্য কিছু। কথা বলতে ইচ্ছে করছে আমার। কিন্তু সাহস হচ্ছে না। যদি কিছু বলে বসে। তারপর চেয়ে পেছনে থেকে দেখি।

 

আরো অবাক হচ্ছি। মেয়েটি আসলে একা কেন। মেয়েটি আবার কিছু দূর যাওয়ার পর দাঁড়াল। আমিও কিছু দূরে দাঁড়ালাম। ভাবলাম, মেয়েটির হয়তো কাছের কোনো মানুষ আসবে।

 

সেজন্য অপেক্ষা করছে। আর তাকে দেখানোর জন্য এত সুন্দর করে সেজে এসেছে। আশপাশ দিয়ে হাতেগোনা কিছু লোক পাশ দিয়ে চলাফেরা করছে। মেয়েটি কারো সঙ্গেই কথা বলছে না। আমি যেভাবে মেয়েটিকে ফলো করছি। অন্য কেউ তেমন ফলো করছে না। যে দুই চারজন আছে। তার এক-দুইবার তাকিয়ে চলে যায়। কোনো কারণ বুঝতে পারছি না আমি। হঠাৎ কে যে আমার নাম ধরে ডাকল, ‘এই ফারুক।’

 

আমি তাকালাম। দেখি আমাদের এলাকার মাহাবুব ভাই। তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঘুরতে এসেছে। আমি এগিয়ে গেলাম। কাছে গিয়ে বললাম, ঈদ মোবারক। ঈদে বাড়ি যাননি?’
মাহাবুব ভাই বললেন, ‘ঈদে বাড়ি গেলে কি এখানে দেখতে পারতে। তুমি যাওনি কেন?’
আমি বললাম, অফিস করতে হচ্ছে ভাইয়া।
ভাবি বললেন, ‘বাসায় এসো।’
চেষ্টা করব ভাবি।
ভাতিজার ডান হাত ধরে বললাম, কী খাবে তুমি।
ভাতিজা মাথা নাড়াল।
ভাবি বলল, ‘দ্বীপ, কিছু খাবে না।’
মাহাবুব ভাই বললেন, ‘ফারুক, আমরা একটু সামনের দিকে যাই।’
মাথা নেড়ে বললা, ঠিক আছে, ভাইয়া।
ওরা সামনের দিকে চলে গেল।

 

আমি সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির দিকে তাকালাম। দেখি একটা ছেলের সঙ্গে মেয়েটি কথা বলছে। আমার খুব ঈর্ষা হতে লাগল। ওই ছেলেটি কেন মেয়েটার সঙ্গে কথা বলবে। ওর সঙ্গে আমি কথা বলব। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। আমি দুর্বল মনের মানুষ। আবার ভাবলাম, মেয়েটি যার জন্য অপেক্ষা করছিল হয়তো সেই ছেলেটা এসেছে। ওরা কী কথা বলছে, দূর থেকে শুনতে পাচ্ছি না। কথাগুলো শোনার খুব ইচ্ছে হচ্ছে আমার। তবু সাহস হচ্ছে না। দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু পর ওই ছেলেটা চলে গেল। মেয়েটি দাঁড়িয়ে রইল। আমার দিকে তাকাল। আমি অবাক হলাম। ধীরে ধীরে মেয়েটি কাছে এল আমার। তারপর দুই হাতে তালি দিয়ে বলল, ‘অনেক সময় ধরে তো আমাকে দেখছিস। পছন্দ হয়েছে। নিয়ে যাবি আমাকে?’

 

আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এতক্ষণে বুঝতে পারলাম, এটা মেয়ে না, এটা হিজড়া। মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দিলাম। হঠাৎ শুরু হলো বৃষ্টি। আমি দিলাম খামারবাড়ির দিকে দৌড়...

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জুলাই ২০১৫/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়