ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

গণতন্ত্রের মানসপুত্রের মৃত্যু আজও রহস্যময়

টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৮, ৪ ডিসেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গণতন্ত্রের মানসপুত্রের মৃত্যু আজও রহস্যময়

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী

শাহ মতিন টিপু  :  হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে বলা হয় গণতন্ত্রের মানসপুত্র। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবর্তক এবং স্বাধীন বাংলার প্রস্তাবক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে এই জনপদের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তিনি ছিলেন বৃটিশ ভারতের সবচেয়ে মানবতাবাদী, গণতান্ত্রিক নেতা। বাংলার মানুষের অনেক ঋণ সোহরাওয়ার্দীর কাছে। জিন্নাহর ঘোষিত ডাইরেক্ট একশনের ফলে এবং ৪৭ এ দেশভাগের সময় উদ্ভুৎ দাঙ্গায় সোহরাওয়ার্দী নিজের জীবন বিপন্ন করে দাঙ্গা থামানোর চেষ্টা করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত লোকেদের সেবা করতে করতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন।
৪৭ এ সমগ্র পাকিস্তানে একমাত্র বাংলায় সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে মুসলিমলীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। অথচ জিন্নাহ সোহরাওয়ার্দীকে বাদ দিয়ে অনুগত লিয়াকত আলি খানকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে পাকিস্তানে মুসলীম লীগ সরকার প্রতিষ্ঠা করে। আর সোহরাওয়ার্দী ক্ষমতার প্রতি নুন্যতম আগ্রহ না দেখিয়ে মনযোগ দিয়ে দাঙ্গা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছিলেন। এজন্যই তাকে ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’ নামে অভিহিত করা হয়।

 

বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবকে বাংলার নেতা হিসাবে তিনিই প্রস্তুত করেছিলেন। শেখ মুজিবকে সাথে নিয়ে ৪৬-৪৭ এর অশান্ত দিনগুলোতে তিনি দাঙ্গা প্রতিরোধ করেছেন। ৪৭ পরবর্তি সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিতে ২৮ বছরের তরুণ শেখ মুজিবকে ঢাকায় পাঠান। উপমহাদেশের বরেণ্য এই রাজনৈতিক নেতার ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

 

স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি ১৯৬৩ সালে দেশের বাইরে যান এবং লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অবস্থানকালে ৫ ডিসেম্বর, ১৯৬৩ তে তিনি মারা যান। তার মৃত্যু আজো অনেকের কাছে রহস্যমণ্ডিত। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জন্ম ৮ সেপ্টেম্বর ১৮৯২ সালে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে।

 

তিনি ছিলেন বিচারপতি স্যার জাহিদ সোহরাওয়ার্দির কনিষ্ঠ সন্তান। জাহিদ সোহরাওয়ার্দি কলকাতা হাইকোর্টের একজন খ্যাতনামা বিচারক ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যবর্গ তৎকালীন ভারতবর্ষের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের প্রথা অনুসারে উর্দু ভাষা ব্যবহার করতেন। কিন্তু সোহরাওয়ার্দি নিজ উদ্যোগে বাংলা ভাষা শিখেন এবং বাংলার চর্চা করেন। কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করার পর যোগ দেন সেইন্ট জ্যাভিয়ার্স কলেজে। সেখান থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে তিনি স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর তিনি তার মায়ের অনুরোধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে আরবি ভাষা এবং সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯১৩ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতক অর্জন করেন। এ ছাড়া এখানে তিনি আইন বিষয়েও পড়াশোনা করেন এবং বিসিএল ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯১৮ সালে বার এট ল ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর ১৯২১ সালে কলকাতায় ফিরে এসে আইন পেশায় নিয়োজিত হন এবং মাত্র ২৯ বছর বয়সে বেঙ্গল আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

 

১৯২০ সালে তিনি বেগম নেওয়াজ ফাতেমাকে বিয়ে করেন। বেগম নেওয়াজ ফাতেমা ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আবদুর রহিমের কন্যা।

 

রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে তিনি যোগ দেন চিত্তরঞ্জন দাসের স্বরাজ পার্টিতে। ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতা পৌরসভার ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস । ১৯২৭ সালে সোহরাওয়ার্দী পদত্যাগ করেন। ১৯৩৬ সালের শুরুর দিকে তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুসলিম পার্টি নামক দল গঠন করেন। ১৯৩৬ এর শেষের দিকে এই দলটি বাংলা প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাথে একীভূত হয়। এই সুবাদে তিনি বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল মুসলিম লীগ তথা বিপিএমএল এর সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালের শেষ দিক পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। ১৯৪৩ সালে খাজা নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রীসভায় তিনি একজন প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন।

 

১৯৪৬ এর নির্বাচনে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের বিপুল বিজয়ে তিনি এবং আবুল হাশিম মূল কৃতিত্বের দাবীদার ছিলেন। ১৯৪৬ সালে বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে পাকিস্তান আন্দোলনে তিনি ব্যাপক সমর্থন প্রদান করেন। ১৯৪৭ এর আগস্টে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরে মুসলিম লীগের রক্ষনশীল নেতারা খাজা নাজিমুদ্দিনের নেতৃত্বে শক্তিশালী হয়ে উঠেন। এর আগে ১৯৪৭ সালের ৫ আগস্ট খাজা নাজিমুদ্দিন জিন্নাহর পরোক্ষ সমর্থনে মুসলিম লীগের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হন।

 

খাজা নাজিমুদ্দিন পূর্ববাংলার মূখ্যমন্ত্রী হবার পর বেশ কয়েকবার সোহরাওয়ার্দীকে ভারতীয় এজেন্ট এবং পাকিস্তানের শত্রু হিসেবে অভিহিত করেন। সোহরাওয়ার্দীকে পাকিস্তানের আইনসভার সদস্য পদ থেকে অপসারিত করা হয়।

 

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে `পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ` প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে পরে `মুসলিম` শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।

 

প্রতিষ্ঠালগ্নে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হন আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সহ-সভাপতি হন আতাউর রহমান খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আলী আহমদ। টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও এ কে রফিকুল হোসেনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে, পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনটির নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। এর সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

 

১৯৫৩ সালে তিনি একে ফজলুল হক এবং মাওলানা ভাসানীর সাথে একত্রে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন পায়। এরমধ্যে ১৪৩টি পেয়েছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ `মুসলিম` শব্দটি বর্জন করে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এরপর মোহাম্মদ আলী বগুড়ার মন্ত্রীসভায় সোহরাওয়ার্দি আইনমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণয়নে তার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। ১৯৫৬ সালে চৌধুরি মোহাম্মদ আলির পদত্যাগের পর তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালে সংখ্যা-সাম্যের ভিত্তিতে একটি শাসনতন্ত্র গৃহীত হয়। উর্দুর সঙ্গে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হয়। কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ১৩ জন এমএনএ থাকা সত্ত্বেও রিপাকলিকান পার্টির সহযোগিতায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী হন।

 

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যেকার অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে তিনি পদক্ষেপ নেন। কিন্তু তার এই পদক্ষেপ ব্যাপক রাজনৈতিক বিরোধিতার জন্ম দেয়। ১৯৫৮ সালে ইস্কান্দার মীর্জা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারী করেন। ১৯৫৯ সালে তাকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৬২তে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং করাচি সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ করা হয়। ওই বছরই তিনি মুক্তি পান এবং আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের উদ্দেশ্যে ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট গঠন করেন। স্বাস্থ্যগত কারণে ১৯৬৩ সালে দেশের বাইরে যান এবং লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অবস্থানকালে তিনি মারা যান। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নামকরণ করেন।

 

আজ এই মহান নেতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

 

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রদত্ত বাণীতে বলেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বিকাশ ও এ অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।’ তাকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র আখ্যায়িত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দীর জীবন ও কর্ম আগামী প্রজন্মকে গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা ও জনগণের সার্বিক কল্যাণে উদ্বুদ্ধ করবে।’

 

আবদুল হামিদ বলেন, ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন বিচক্ষণ ও প্রজ্ঞাবান রাজনৈতিক সংগঠক।’ কলকাতায় মেহনতি ও শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে সোহ্রাওয়ার্দী স্বল্পসময়ের মধ্যে নাবিক, রেলকর্মচারী, পাটকল ও সুতাকল কর্মচারী, রিক্সাচালক, গাড়িচালকসহ নানা শ্রেণী পেশার মেহনতি মানুষের প্রায় ৩৬টি ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

 

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জীবন ও আদর্শ আমাদেরকে প্রেরণা জোগাবে। তিনি (সোহরাওয়ার্দী) মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিকাশে আজীবন কাজ করেছেন।’

 

সোহরাওয়ার্দীর দক্ষ পরিচালনায় গণমানুষের সংগঠন আওয়ামী লীগ আরো বিকশিত হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার সুযোগ্য উত্তরসূরি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত হয় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা।’ প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

 

যথাযোগ্য মর্যাদায় অবিসংবাদিত এই নেতার মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শনিবার সকাল আটটায় বাংলাদেশ হাইকোর্ট সংলগ্ন মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মাজারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি এক বিবৃতিতে মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পূণ্য স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

 

এদিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী’র মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার সকাল আটটায় জাতীয় পার্টি-জেপি’র পক্ষ হতে মরহুমের মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, পূষ্পাঘ্য অর্পন ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ ডিসেম্বর ২০১৫/ টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়