ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শিক্ষক দিবস

শুরু হোক অনুসন্ধান: যতীন সরকার

যতীন সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৬, ৫ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শুরু হোক অনুসন্ধান: যতীন সরকার

‘সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত’—এমন একটি কথা পাওয়া যায় বিদগ্ধ ও সুরসিক লেখক প্রমথ চৌধুরীর লেখায়। কথাটিকে অস্বীকার করবার উপায় নেই। তবুও প্রশ্ন উঠতে পারে- তাহলে শিক্ষকদের কাজ কী? স্বশিক্ষিত হয়েই যদি সুশিক্ষিত হতে হয়, তবে তো শিক্ষকের কোনো কাজই থাকতে পারে না।

এমন প্রশ্নের জবাব অবশ্যই সকলের জানা। প্রকৃত শিক্ষকের কাজ হলো—শিক্ষার্থীকে স্বশিক্ষিত হওয়ার পথ দেখিয়ে দেয়া। এই রকম শিক্ষকের সাহায্য ছাড়া কেউ স্বশিক্ষার পথ খুঁজে পেতে পারে না। আবার সুশিক্ষিতও হয়ে ওঠতে পারে না। সে কারণেই সমাজে শিক্ষকরা হন মর্যাদাবান। শিক্ষকরা হন সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। শিক্ষকের জীবিকাও তাই। অন্য অনেক জীবিকার চেয়ে মহৎ বলে গণ্য করা হয়। নিতান্ত দরিদ্র শিক্ষকও অনেক ধনবান মানুষের চেয়ে অনেক বেশি সম্মান পেয়ে থাকেন।

তাই বলে কি দরিদ্র শিক্ষকটি দারিদ্র্যের কামড়ে ক্ষত-বিক্ষত হন না? হন। তবুও তারা খুব সহজেই ‘হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছো মাহান’ বলে আত্মতুষ্টি লাভ করতে পারেন। একথা বোঝার জন্য খুব বেশি বুদ্ধি খরচ করার দরকার পড়ে না।

কিন্তু দরিদ্র শিক্ষকের প্রতি সমাজের মানুষ যে সম্মান দেখায় সেই সম্মানের সঙ্গে মিশ্রিত থাকে করুণা! তবে হ্যাঁ, আমাদের ছেলেবেলায় শিক্ষকদের যে রকম দরিদ্রদশায় কাল কাটাতে দেখেছি এখন তেমন দেখি না। সরকারি উদ্যোগে শিক্ষকদের বেতন আগের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি হয়েছে। আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য অবসর উত্তর পেনশনের ব্যবস্থা ছিল না। এখন আর তেমন নেই। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এখন আর চরম দুর্বিপাকে পড়তে হয় না। বেসরকারি বিদ্যালয়- মহাবিদ্যালয়েও শিক্ষকরা অবসর গ্রহণের আগে কিছু নগদ টাকা পেয়ে থাকেন। তবু অন্য পেশার তুলনায় শিক্ষকতা পেশাকে কোনোভাবেই লোভনীয় বলা চলে না। কেউই সহজে শিক্ষকতা পেশায় আসতে চান না। নিতান্ত দায়ে পড়ে অনেকে শিক্ষকতা পেশা গ্রহণ করেন। দায়ে পড়ে যা গ্রহণ করা হয়, তাতে গ্রহণকারীর মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগা খুবই কঠিন।

তাছাড়া, আজও যখন দেখি যে, বেতনের দাবিতে শিক্ষকদের রাস্তায় দাঁড়াতে হয় কিংবা প্রয়োজনীয় ক্লাশরুম, শিক্ষকের অভাবে সঠিকভাবে শিক্ষাকার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ছাত্র-শিক্ষকের সংখ্যানুপাতিক ভারসাম্য রক্ষিত হচ্ছে না তখন সমস্ত চৈতন্যে নৈরাশ্য এসে ভর করে। এই নৈরাশ্যের মধ্যেও আশার আলো যে একেবারেই চোখে পড়ে না, তা নয়। সর্ব প্রকার কাঠিন্যকে অস্বীকার করেই অনেক স্বহৃদয় শিক্ষিত মানুষকে জীবিকার অবলম্বন হিসেবে শিক্ষকতাকে গ্রহণ করতে দেখি। এরকম শিক্ষকগণই এই পেশাটিকে এখনো গৌরবান্বিত করে রেখেছেন।

অবশ্য এর উল্টো দিকটাও প্রায়শঃ নজরে পড়ে। অনেক শিক্ষকই যে প্রকৃত শিক্ষকসূলভ আচরণ করেন না এমন তো হরহামেশা দেখা যায়। সংবাদপত্রের পাতা খুললেই শিক্ষকদের অনেক অসদাচরণের সংবাদ দেখতে পাওয়া যায়। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষকের যৌনাচারের বিবরণ অনেক সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদ বর্তমানে শিক্ষক ও শিক্ষা সম্পর্কে অনেকের মনে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি করেছে। এই রকম বিরূপতার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় আমাদেরই খুঁজে নিতে হবে। আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস থেকেই শুরু হোক সেই অনুসন্ধান।

শ্রুতিলিখন : স্বরলিপি

শিক্ষক দিবসে হাসান আজিজুল হকের লেখা: 




ঢাকা/শান্ত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়