ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

রোজাদারদের অবশ্যই নামাজ পড়তে হবে

মাওলানা মুনীরুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৯, ২৯ এপ্রিল ২০২১  
রোজাদারদের অবশ্যই নামাজ পড়তে হবে

ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। প্রথম তিনটি গরিব-ধনী প্রাপ্তবয়স্ক সব মুসলমানের ওপর ফরজ। আর শেষের দুটি সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর ফরজ। নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় রুকন বা স্তম্ভ। ঈমানের পরই নামাজের স্থান। নামাজ বারো মাসই আদায় করতে হয়। আর রোজা শুধু মাহে রমজানে ফরজ।

একজন মুমিন মুসলমান বছরজুড়ে নামাজ আদায় করবেনÑ এটাই স্বাভাবিক। এরপর যখন পবিত্র মাহে রমজানের আগমন ঘটবে, তখন নামাজ আদায়ের পাশাপাশি রমজানের রোজাগুলোও পালন করবেন। একজন রোজাদার শুধু রোজা রাখবেন, নামাজ পড়বেন নাÑ এমন কখনো কল্পনা করা যায় না।

নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে প্রচুর আলোচনা রয়েছে। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নামাজ বেহেশতের চাবি।’ চাবি ছাড়া যেমন তালাবদ্ধ ঘরে প্রবেশ করা যায় না, নামাজ কায়েম করা ছাড়া তেমনি বেহেশতে যাওয়া যাবে না।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেওয়া হবে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘মুসলমান ও অমুসলমানের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ।’

অর্থাৎ মুসলমানরা নামাজ পড়েন আর অমুসলমানরা নামাজ পড়েন না। সে হিসাবে যারা নামাজ পড়েন না, তারা নিঃসন্দেহে কুফরিতে লিপ্ত আছে। আর কাফেরের রোজা, জাকাত, হজ কিছুই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। মুমিনের জন্য প্রথম কাজ হলো নামাজির খাতায় নাম লেখানো। কাজেই নামাজ ছাড়া সব আমলই যে বৃথা, এ ব্যাপারে কারো কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।

হাদিস শরিফে আছে, ‘এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করার জন্য দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর জাহান্নামে থাকতে হবে।’ আর রোজার বেলায় যারা সেহরি খেয়ে সময় হওয়ার পূর্বেই রোজা ভেঙে ফেলেন, তাদের উদ্দেশে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি একসময় ঘুমাচ্ছিলাম, হঠাৎ দুইজন আগন্তুক এসে আমার হাত ধরে টেনে তুলে একটি উঁচু পর্বতের কাছে নিয়ে বলল, উপরে উঠুন। আমি বললাম, আমি উঠতে পারি না। তারা বলল, আমরা আপনাকে সাহায্য করব। এরপর আমি পর্বতের চূড়ায় উঠলাম। সেখানে আমি আর্ত-চিৎকার শুনতে পেলাম। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কিসের আওয়াজ?  তারা বলল, এটা হলো জাহান্নামবাসীদের আর্তনাদ। আমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হলো এবং আমি দেখলাম, কিছু মানুষকে পায়ে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, আর তাদের মুখের পার্শ্ব দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আমি বললাম, ওরা কারা?  তারা বলল, এরা হলো তারাই, যারা রোজা রেখে সময় হওয়ার পূর্বেই রোজা ভেঙে ফেলত।’

তাহলে একবার চিন্তা করুন, সারাদিন রোজা রেখেও শুধু একটু গুরুত্ব না দেওয়াতেই যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে যারা মোটেও রোজা রাখেন না, তাদের অবস্থা কী হবে?  আর যারা নামাজ ছাড়া শুধু রোজা রাখেন, তাদের অবস্থাই-বা কী হবে? মোটকথা হলো নামাজ ছাড়া কোনো প্রকার ইবাদতেই কাজ হবে না; যদিও সেটা যত ভালো ইবাদতই হোক। তাই মাহে রমজানের পরিপূর্ণ সওয়াব পেতে হলে রোজা পালনের পাশাপাশি অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে।

মাহে রজমান হচ্ছে, আমল-ইবাদত অনুশীলনের মাস। আমরা যদি এই মাসে নামাজা-রোজা ইত্যাদি আমলের চর্চা করে অভ্যাস করে নিতে পারি, তাহলে বাকি এগারো মাসও আমল-ইবাদতে কাটানো সহজ হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
 

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়