ঢাকা     বুধবার   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কারা হিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১১:৪১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪
কারা হিপি

একটু ঢিলেঢালা পোশাক পরা তরুণ দেখলেই আমরা বলে ফেলি বোহেমিয়ান। আবার বোহেমিয়ানের একটি বিস্তৃত রূপ রয়েছে। এরা সাজ পোশাকে আত্মবিশ্বাসী, ড্যামকেয়ার কিন্তু আচরণে সাধারণত মানবিক। অলংকারে ছক ভাঙা। এমন জীবন ধারার তরুণদের দেখা মেলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেই। যা এসেছে হিপি সংস্কৃতি বা কালচার থেকে।

হিপি বা হিপ্পিদের পোশাক, আচার আচরণ সবকিছুতে ফুটে উঠেছিল কাউন্টার কালচার। বলছি ১৯৬০ এর দশকের শুরুর দিকের এক `ইয়ুথ মুভমেন্ট’ এর কথা। পাশ্চাত্যের একদল তরুণ সমাজে প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃতিকে তোয়াক্কা না করে নতুন জীবন ধারার প্রচলন করেছিল। আন্দোলনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছিল, যদিও এটি কানাডা এবং ব্রিটেন সহ অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

হিপিরা অনেকাংশে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল প্রাচ্যদেশীয় ধর্ম বিশ্বাস এবং আধ্যাত্মিকতায়। ১৯ শতক এবং ২০ শতকের শুরুতে ইউরোপীয় সমাজে বিদ্যমান ‘বোহেমিয়ান’ -র মত বিদ্যমান সামাজিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই হিপ্পির উদ্ভব হয়। গানের মূর্ছনায় ছড়িয়ে দিতো নিজেদের চিন্তা-চেতনা। ১৯৬০ এর দশক জুড়েই সমাজে বিদ্যমান নীতি এবং নৈতিকতার বৈপরিত্য তৈরি করে গড়ে তুলেছিল হিপ্পি আন্দোলন।

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, হিপ্পি আন্দোলনের ঐতিহাসিক যোগসূত্র রয়েছে পারসিয়ান ‘মাজদাকীয়’ সংস্কারের সঙ্গে। যে সংস্কারে কম্যুনাল লিভিং,সম্পদের বণ্টনভিত্তিক ব্যবহার, নিরামিষ ভোজন এবং বন্ধনবিহীন ভালোবাসার প্রাধান্য ছিল। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত টাইম ম্যাগাজিনের একটি আর্টিকেলে দাবি করা হয়েছে যে হিপি সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধ তরুনরা যিশু খ্রিস্ট, হিলেল দ্য এল্ডার, বুদ্ধ, সেন্ট ফ্রান্সিস অব আসিসি, হেনরি ডেভিড থরো, গান্ধী এবং আরো অনেক ব্যক্তির মতাদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত। সামগ্রিকভাবে তারা প্রাকৃতিক ভারসাম্যের প্রতি গুরুত্বদিয়েছিল।

হিপিরা গতানুগতিক সাংগঠনিক ধারার বাইরে গিয়ে শখের বশে করা অপেশাদার সংগীতচর্চা এবং বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারের পাশাপাশি নিত্য-নতুন ঘরানার পোশাক, দলবেঁধে হাইকিং বা ক্যাম্পিং এ যাওয়ার মতো কাজগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছিল। তরুণ সমাজের এই পরিবর্তনের পেছনে ফ্রেডারিক নিৎসে, গ্যোথে, হারমান হেসে এবং এডওয়ার্ড বালৎজারের মত কৃতিমান ব্যক্তিদের চিন্তা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল। 

গানে ফোক এবং রক-এর মিশেল আবহ তৈরি করেছিল হিপিরা। উদাহরণ হিসেবে বব ডিলানের নাম নেওয়া যেতে পারে। জার্মানে তখন শহরায়ন এবং পূর্বপুরুষদের আদিম বিশ্বাসের প্রতি ফিরে যাওয়া প্রচলিত রীতি ছিল। কিন্তু এর বিপরীতে হাজার হাজর তরুণ ডার ভ্যান্ডারফোগেলের মত প্রচলিত সামাজিক প্রথা বিরুদ্ধ মুভমেন্টে অংশগ্রহণ করতে থাকে।  

২০ শতকের প্রথমার্ধে আমেরিকায় এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।  হিপি তরুণেরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং বসবাস করতে শুরু করে। এদের কেউ কেউ আবার ‘স্বাস্থ্যকর খাবারের দোকান’ নামের নতুন ধারণার জন্ম দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা বারবারা এলাকার প্রথম স্বাস্থ্যকর খাবারের দোকান(Health Food Store) ১৯৩৪ সালে হারমান সেক্সআওয়া প্রথম চালু করেন।

১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে আন্দোলনটি ক্ষয় হতে শুরু করে। ১৯৮০-এর দশকে হিপিরা নতুন প্রজন্মের তরুণদের নতুন পথ দেখিয়েছিল। হিপি জেনারেশন থেকে তৈরি হয়ে গেল বিট জেনারেশন। যারা মূলত, সানফ্রান্সিসকো সংস্কার আন্দোলনের সাথে জড়িত তরুণ। কাউন্টারকালচার থেকে নিজেদের কিছুদূরে সরিয়ে নেয়। এদের মধ্যে অ্যালেন গিন্সবার্গ অন্যতম। অ্যালেন গিন্সবার্গ পরবর্তীতে যুদ্ধ-বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। 

হিপিরা যুদ্ধবিরোধি ছিল। তারা পৃথিবীর প্রকৃতি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছিল। এমনকি পৃথিবী দিবস প্রচলন করেছিল। তবে হিপি জেনারেশন সব থেকে বেশি সমালোচিত হয় মাদক গ্রহণের জন্য। সবকিছু ছাপিয়ে হিপিরা বিশ্বের বিস্তৃত সংস্কৃতির উপর প্রভাব ফেলেছিল। উদাহরণস্বরূপ, যৌনতার প্রতি আরও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ মনোভাব তৈরিতে তাদের অবদান রয়েছে।

তথ্যসূত্র: ব্রিটানিকা, উইকিপিডিয়া

/স্বরলিপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়