ঢাকা     সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

ইরাকের মানুষ কী খায়

সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৮, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১২:০০, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪
ইরাকের মানুষ কী খায়

ইরাক মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ। এই দেশ বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা মেসোপটেমিয়ার দেশ। ইরাকের রন্ধনশৈলীর ইতিহাস দশহাজার বছরের পুরাতন। ইরাকের রন্ধনশৈলীর ইতিহাস গড়ে উঠেছে সুমেরীয়, আক্কাডীয়, ব্যবলনীয়, আসারীয় এবং প্রাচীন পারস্যের রীতি অনুযায়ী।

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, ইরাকের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ থেকে  প্রাপ্ত শিলালিপিতে উল্লেখ রয়েছে উৎসবের সময়ে মন্দিরে খাবার প্রস্তুত করার প্রণালি। একে পৃথিবীর প্রথম রান্নার বই বলা হয়। ইসলামের স্বর্ণযুগে বাগদাদ আব্বাসীয় খিলাফাতের রাজধানী ছিল। সে সময়ের ইরাকি রান্নার প্রভাব বর্তমানের ইরাকি রন্ধনশিল্পে রয়ে গেছে। পাশাপাশি ইরাকের পার্শ্ববর্তী ইরান, তুর্কী, সিরিয়া অঞ্চলের রন্ধন ঐতিহ্যের প্রভাবও আছে।

ইরাকি দোলমামূল কথায় আসি। ইরাকের মানুষ খাবারের শুরুতে মেজ্জা নামের সালাদ খায়।  ইরাকিদের খুব প্রিয় খাবার হচ্ছে কেবাব বা কাবাব। যা মাংস রসুন, লেবু এবং মসলায় মাখিয়ে আগুনে ঝলসানো হয়।  তারা খায় বামিয়েহ যা ভেড়া, ঢেঁড়স এবং টমেটোর মিশ্রণে বানানো স্ট্যু । ইরাকিদের আরেকটি খাবারের নাম কুজি। এটি এমন এক ধরনের খাবার যা চাল,আলমন্ড, রেসিন এবং মসলা দিয়ে রান্না করা ভেড়ার মাংস। সবজির পদের মধ্যে রয়েছে দোলমা ও মাহশির। 

ইরাকে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার মত প্রাকৃতিক বিভাজন আছে। উত্তরে উচূভূমিতে এবং দক্ষিণের সমভূমি। ফলে স্থান ভেদে উৎপাদিত ফসল আলাদা। আলজাজিরা বা প্রাচীন আশারিয়ায় গম এবং শীতল আবহাওয়ার আপেলের ভালো উৎপাদন হয়। আল-ইরাক বা প্রাচীন ব্যবলনিয়ার প্রধান ফসল ধান, বার্লি, লেবুজাতীয় ফল এবং খেঁজুর।  ইরাকজুরে সমান জনপ্রিয় খাবার কাঠবাদাম । ইরাকে প্রাপ্ত প্রাচীন লিপিতে ইরাকি ভাষার ৮০০ প্রকারের খাদ্য ও পানীয়ের নাম লেখা আছে। এর মধ্যে ২০ প্রকারের পনির, ১০০ প্রকারের স্যুপ এবং ৩০০ প্রকারের রুটির উল্লেখ পাওয়া যায়। এসব খাবারের উপাদান, আকার-আকৃতি ভিন্ন। ব্যাবিলনে ১৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পাওয়া মাটির লিপিতে  ২৪  প্রকার মাংস ও সবজির ঝোল রান্নার পদ্ধতির উল্লেখ আছে। স্ট্যু বা ঝোল রন্ধনশৈলীর মূলধারায় এখনও টিকে আছে। 

ইরাকিদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার কিছু সাধারণ উপাদান হচ্ছে- বেগুন, টমেটো, শালগম, শিম, শ্যালট, ঢেঁড়স, পেঁয়াজ, ডাল, আলু, বাঁধাকপি, লেটুস, রসুন, মরিচ। শস্যর মধ্যে রয়েছে  চাল, বুলঘুর গম এবং বার্লি। দুই রকম ডালের উল্লেখ পাওয়া যায়। এগুলো হলো মসুর এবং ছোলা। ফলের মধ্যে রয়েছে, জলপাই, খেজুর, এপ্রিকট, তাল, ডুমুর, আঙুর, তরমুজ, বেদানা, আপেল, চেরি, লেবুজাতীয় ফল যেমন কমলা লেবু, লেবু। পনিরের তালিকায় আছে বালাদি, ফেতা এবং হাল্লৌমির নাম। ইরাকিরা খায় বাইজেন্টাইন মাকলি - যা ঠান্ডা অবস্থায় পরিবেশন করা হয়। ঝলসানো বা ভাঁজা কাটা রুটির সঙ্গে খাওয়া হয় এই পদ। পরিবেশনের সময় গোলমরিচ অথবা রসুন,লেবু, ভিনেগার দিয়ে বৈচিত্র্য আনা হয়।  ফাট্টুস নামের এক ধরনের সালাদ খায় ইরাকিরা। যা বাগানের বিভিন্ন সবজি দিয়ে তৈরি করা হয় এবং ভাজা রুটির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। তুরশি হচ্ছে ইরাকিদের ঐতিহ্যবাহি খাবার। এ হলো সবজির আচার যা বলকান ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের রন্ধনশৈলীর অংশ। 

ইরাকি রাইস এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার।ফাসৌলিয়া  খায় ইরাকিরা। এই খাবার শুকনো সাদা শিম, জলপাই তেল এবং সবজি দিয়ে তৈরি স্যুপ। ইরাকিরা মারগাট বামিয়া খায়। যা শুধুই বামিয়া বা ঢেড়স এবং ভেঁড়া বা গোমাংসের টুকরা দিয়ে তৈরি করা। ফেসেঞ্জেন অনেক পুরনো খাবার। সনাতনভাবে এটি হাঁস বা মুরগি দিয়ে তৈরি করা হয়। কিমা - প্রথাগতভাবে দক্ষিণ ইরানে বাৎসরিক আশুরা পালনের সময়ে কিমা প্রস্তুত করা হয়। কিমা হচ্ছে প্রাচীন আক্কাডিয় ভাষার শব্দ যার অর্থ কুচিকুচি করে কাটা। ইরাকিরা আরও যেসব খাবার খায় সেগুলো হচ্ছে, মাকলুবা, মাসগুফ, মারগাট ,বেতিনিজান, বেদানার স্যুপ, শরবত রুম্মান, কুজি, তাশরিব, তাহদিগ, তেপসি বেতিনিজান, মাংসের গোল্লা। ফাস্টফুড হিসেবে খায় ফালাফেল, কুব্বা, কোফতা, ম্যান্টি,সমুসা, চালের খাবার, দোলমা, মুজাদ্দারা, পিলাদ, তাবিত এবং কুজি।

আরবীয় সালাদ, স্যুপ ও স্ট্যু, এবং ভাত জাতীয় খাবারের উপর বিভিন্ন প্রকারের ঝোল পরিবেশন করা ইরাকি রন্ধনশৈলীর প্রধান অংশ।

/স্বরলিপি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়