ঢাকা     সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

কৃষক মায়ের সন্তান গোলরক্ষক ইয়ারজান

আবু নাঈম, পঞ্চগড় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ৯ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৫:০৪, ১০ মার্চ ২০২৪
কৃষক মায়ের সন্তান গোলরক্ষক ইয়ারজান

ডানে কৃষিকাজে ব্যস্ত গোলরক্ষক ইয়ারজানের মা

মা কৃষক। মেয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক ইয়ারজান। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে বড়। ফুটবল খেলার প্রতি ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক ছিল তার।  এক সময় পঞ্চগড় টুকু ফুটবল একাডেমিতে অনুশীলন শুরু করেন। এতে বাবার উৎসাহ ছিল না, প্রতিবেশীরা অনেক সময় কটু কথা শোনাতেন। সে সব কথায় কান দিতেন না ইয়ারজান, কারণ তাকে একজন উৎসাহ দিতেন, তিনি হলেন মা রেনু বেগম। ইয়ারজন এখন বাংলাদেশের হয়ে দেশের বাইরে খেলেন, টেলিভিশনে মেয়েকে দেখা যায়; কিন্তু সেই খেলা দেখার সময় নেই মায়ের। শুক্রবার (৮ মার্চ) মেয়ে যখন নেপালের বিরুদ্ধে খেলছিলেন ইয়ারজান, রেনু বেগম তখন পাশের গ্রামে একটি বাদামের ক্ষেত পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত। 

টিভিতে খেলা না দেখলেও অন্য কারও মাধ্যমে মোবাইলে মেয়ের খেলা পরে দেখেছেন মা রেনু বেগম। জেনেছেন, মেয়ের দল এখন পর্যন্ত ৩ ম্যাচ থেকে ৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান নিয়েছে। 

ইয়ারজান পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামের মেয়ে। তার বাবা আব্দুর রাজ্জাক শারীরিকভাবে অসুস্থ, কোন কাজ করতে পারেন না তিনি। মা রেনু বেগমের উপার্জনে চলে সংসার। তিনবেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না, ঘরের টিনে ভেঙে পড়ার অবস্থা! তারপরেও ইয়ারজান যাতে খেলতে পারে; এইটুকু নিশ্চিত করতে চান মা।

রেনু বেগম বলেন, মানুষের কৃষিজমিতে কাজ করে মেয়েকে বড় করেছি। দৈনিক ২৫০ টাকা মুজুরি পাই। এর মধ্যে ১০০ টাকা মেয়েকে দেই, বাকি ১৫০ টাকা সংসারের অন্যান্য কাজে লাগাই। খুব টানাপোড়নে চলে সংসার। ইয়ারজান ভালো কিছু করতে পারলে একদিন সব কষ্ট দূর হবে।

ইয়ারজানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ছোট থেকেই ফুটবলের প্রতি আগ্রহ ছিল মেয়ের। তবে আমরা কখনো উৎসাহ দেইনি। মানুষও ভালো বলতোনা। তাছাড়া অনুশীলনে পাঠানোর মত ব্যবস্থাও ছিলো না। কিন্তু মেয়ে এসবে তোয়াক্কা করতো না। টুকু ফুটবল একাডেমি অনেক সহযোগিতা করেছে। এখন আমার মেয়ে বিদেশে খেলতেছে। আজকে মেয়ের সাফল্যে গর্বে আমার বুক ভরে গেছে। যখন মেয়ের বিষয়ে কেউ জানতে চায়, তখন খুব ভালো লাগে আমার। আমি চাই আমার মেয়ে ভালো কিছু করুক। 

স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক আখতারুজ্জামান ডাবলু বলেন, ইয়ারজান আমাদের এলাকার কৃতিসন্তান। তার পরিবার একবারেই হত-দরিদ্র। তার মা রেনু বেগমের আয়েই চলে তাদের সংসার। এমন পরিবার থেকে উঠে আসা সহজ বিষয় নয়। ইয়ারজান বর্তমান বাংলাদেশের হয়ে বিদেশে খেলছে যা সত্যি অভাবনীয়। আমরা প্রত্যাশা করছি সামনে জাতীয় দলেও জায়গায পাবে সে। এবং বাংলাদেশের ফুটবলকে ভালো কিছু উপহার দেবে সে। ইয়ারজানের জন্য শুভকামনা রইলো। ইয়ারজানের এই অবস্থান তৈরিতে টুকু ফুটবল একাডেমির অবদান সবচেয়ে বেশি। 

/নাঈম/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়