ঢাকা     রোববার   ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২২ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ইতিহাসের দুর্ভাগা নারী ‘টাইফয়েড মেরি’

সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৭, ২৯ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ০৯:১২, ২৯ নভেম্বর ২০২৪
ইতিহাসের দুর্ভাগা নারী ‘টাইফয়েড মেরি’

মের মেলোন

পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা পরিস্থিতির কাছে হেরে যান। আবার এমন অনেককে খুঁজে পাওয়া যাবে, যার দ্বারা অনেকের ক্ষতি হয়ে যায় কিন্তু সে জানে না বা বোঝে না। এমন একজন মানুষকে নিয়েই এই প্রতিবেদন। তার নাম মেরি মেলোন হলেও বিশ্ব তাকে ‘টাইফয়েড মেরি’ নামে চেনে। 

১৮৬৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরে মেরি উত্তর আয়ারল্যান্ডের কুকসটাউন নামক এক দরিদ্র গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তাকে দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে। জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য মেরি একদিন আয়ারল্যান্ড থেকে নিউইয়র্কে পাড়ি জমান। রান্নার কাজে পারদর্শী ছিলেন মেরি, বিশেষ করে ভালো আইসক্রিম বানাতে পারতেন তিনি। কিন্তু স্বভাবে ছিলেন জেদি প্রকৃতির। নিউইয়র্কে গৃহপরিচারিকার কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু কোনো বাসায় তিন বা চার বছরের বেশি সময় থাকতে পারতেন না। জেদের কারণে তাকে চাকরি ছাড়তে হতো। 

বিংশ শতাব্দীতে নিউইয়র্কে অন্যতম ভয়াবহ রোগ হয়ে উঠেছিল টাইফয়েড। ধনীরা বিশ্বাস করতেন, এই রোগ শুধুই গরীবদের রোগ। নিউইয়র্কে সেবার টাইফয়েড মহামারি আকারে দেখা দেয়। মেরির শরীরে টাইফয়েডের জীবাণু ছিল। তার সংস্পর্শে যারা থাকতেন এবং তার রান্না করা খাবার যারা খেতেন তাদের মধ্যে ৫১ জন টাইফয়েডে আক্রান্ত হন। এই ৫১ জনের মাধ্যমে আরও হাজার হাজার মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। আক্রান্তদের মধ্যে ৩ জনের মৃত্যুর প্রমাণ মেলে।

এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার তথ্য,  ১৯০০ সাল থেকে শুরু করে ১৯০৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ১২ জন লোক টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হন, যাদের বাসায় মেরি মেলোন স্বল্প সময়ের জন্য হলেও গৃহপরিচারিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

১৯০৬ সালের কথা। ধনকুবের চার্লস ওয়ারেনের ওয়েস্টার বে’র বড় বাড়ির ভাড়াটেদের ১১ জনের মধ্যে ৬ জন টাইফয়েডে আক্রান্ত হন। এদিকে জর্জ সপার নামের এক প্রকৌশলী টাইফয়েড মহামারী নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তিনি ওই বাড়ির বিভিন্ন পানির উৎসের নমুনা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। যদিও আশ্চর্যজনকভাবে কোথাও টাইফয়েডের জীবাণু খুঁজে পান না। সপার একটা সময় প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন, ঠিক তখন তার মেরির সাথে পরিচয় হয়। তিনি লক্ষ্য করেন, বাড়ির অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হলেও মেরি সুস্থ আছেন। কৌতূহলবশত তিনি মেরির ইতিহাস ঘাঁটা শুরু করেন। এবং দেখেন যে, মেরি মেলোন গত সাত বছরে প্রায় ছয় বাড়িতে রান্নার কাজ করতেন। ওই সাত বাড়ির প্রায় সব সদস্যই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু মেরি সুস্থ ছিলেন। সপার এবং তার দলের সদস্যরা আরো কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে মেরিই এই মহামারীর মূল হোতা।তাছাড়া  মেরিরও একটি বদঅভ্যাস ছিল, তিনি ঠিকমতো হাত ধুতেন না। 

সপার মেরিকে অনুরোধ করেন, তার শরীরে টাইফয়েডের জীবাণু আছে কিনা-সেই পরীক্ষা করার অনুমতি দেওয়ার জন্য। মেরি ভয় পান এবং না করে দেন। অবশেষে নিউইয়র্ক আদালত মেরিকে আটকের নির্দেশ প্রদান করেন। পুলিশ তাকে বন্দি করে। মেরিকে নর্থ ব্রাদার নামের একটি দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হয়। তার সঙ্গে ছিল শুধুমাত্র একটি কুকুর।  তিন বছর পরে ১৯১১ সালে মানবিক দিক বিবেচনা করে মেরিকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু মুক্ত বাতাসে তিনি বেশিদিন থাকতে পারেননি। কারণ মেরিকে রান্নার কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তার প্রিয় কাজ ছেড়ে থাকতে পারেননি। তাছাড়া মেরি বিশ্বাস করতেন না, তার শরীরে টাইফয়েডের জীবাণু আছে।  এজন্য নাম বদলে মেরি ব্রাউন হয়ে যান এবং আবার রান্নার কাজ শুরু করেন। পরে ওই পরিবারের লোক আবার টাইফয়েডে আক্রান্ত হন। আবারও দোষী সাব্যস্ত হন মেরি। এবার তাকে আবারও নির্বাসনে যেতে হয় নর্থ ব্রাদার দ্বীপে। দিনের পর দিন মুক্তির অপেক্ষায় থেকেও আর মুক্তি পাননি মেরি।

যদিও জর্জ সপার জীবনের শেষদিকে স্বীকার করেছিলেন যে, আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাই মেরিকে খলনায়ক বানিয়েছিল।

ঢাকা/লিপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়