ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাংলাদেশের স্লোগানের দাপট চলছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩৩, ২০ আগস্ট ২০২৪  
বাংলাদেশের স্লোগানের দাপট চলছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে

২০২১ সালের ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের স্লোগান ছিল ‘খেলা হবে’। পাশাপাশিই ছিল ‘জয় বাংলা’। দু’টি স্লোগানেরই জন্মভূমি বাংলাদেশ। সেই ভোটেই পাল্টা আখ্যান তৈরি করতে বিজেপি স্লোগান দিয়েছিল ‘সোনার বাংলা’র। সেই শব্দবন্ধের সঙ্গেও বাংলাদেশের নিবিড় যোগ রয়েছে।

আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে যখন উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ, তখন দেখা যাচ্ছে সিপিএম-বিজেপি স্লোগান দিচ্ছে ‘দফা এক দাবি এক, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ।’ মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই স্লোগান সামনে রেখে সম্প্রতি বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ থাকতে হচ্ছে শেখ হাসিনাকে। কিন্তু এরই পাশাপাশি যে আলোচনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে, তা হল —সাম্প্রতিক সময়ে কি বাংলাদেশের স্লোগানই মূলত দাপট দেখাচ্ছে এই বাংলার রাজনীতিতে? ও পারের স্লোগানে কি ‘ঝাঁজ’ বেশি? না কি নতুন স্লোগান তৈরিতে এ পার বাংলার রাজনৈতিক ঐতিহ্যে মরচে ধরেছে?

রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে শিক্ষাবিদদের বিভিন্ন মত রয়েছে। ব্যাখ্যাও রয়েছে। কিন্তু একটি বিষয়ে সবাই একমত, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের স্লোগানের ‘পশ্চিমবঙ্গীকরণ’ চলছে। আর তা জনপ্রিয়ও হচ্ছে।

বাংলার রাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক স্লোগানের ইতিহাস দীর্ঘ। স্বাধীনতার আগে থেকে তা চলে আসছে। বাংলা তথা বাঙালির দেওয়া স্লোগান জাতীয় স্তরের স্লোগানে রূপান্তরিত হয়েছিল। সে সব স্লোগান কালোত্তীর্ণ হয়ে থেকেছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাতেও সেই ধারা অব্যাহত থেকেছে বছরের পর বছর।

তেভাগা আন্দোলনের সময়ে ‘লাঙল যার, জমি তার’ স্লোগান কৃষক আন্দোলনে কার্যত অগ্নিবর্ষণ করেছিল। ষাট বা সত্তরের দশকে বামেদের রাজনীতি ছিল মূলত জমিকেন্দ্রিক। সেই সময়েও ওই স্লোগান ফিরে এসেছিল। জোতদার জমিদারদের হাত থেকে ‘বেনামি জমি’ দখল করে তা ভাগচা‌ষিদের মধ্যে বিলিবণ্টন করার কর্মসূচিতে তেভাগার স্লোগান ব্যবহার করা হয়েছিল। নকশালবাড়ি আন্দোলনে আবার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন স্লোগানের বঙ্গীকরণ করা হয়েছিল। ‘বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস’ বা চীনা বিপ্লবের লাইন ‘গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরো’ স্লোগান হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। দেওয়ালে দেওয়ালে এ-ও লেখা হয়েছিল, ‘চিনের চেয়ারম্যান, আমাদের চেয়ারম্যান’।

রবীন্দ্রভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য তথা ভাষাবিদ পবিত্র সরকারের বক্তব্য, ‘বাংলাদেশের স্লোগান এ পারে ব্যবহৃত হওয়াটা অন্যায় বলে মনে করি না। এটাকে ভাষাগত ঋণ বলা যেতে পারে। যা কিছু শুভ, তা আমরা গ্রহণ করতেই পারি।’ 

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রশান্ত রায়ের বক্তব্য, ‘পশ্চিমবঙ্গে হয়তো নতুন স্লোগান তৈরির প্রয়োজনীয়তাই পড়ছে না। সে কারণেই নতুন স্লোগান তৈরি হচ্ছে না। তবে আরজি কর-কাণ্ডে যে নাগরিক আন্দোলন দেখছি, তাতে খুব যে রাজনৈতিক স্লোগানের দাপট রয়েছে, তেমন মনে হচ্ছে না।’

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ‘খেলা হবে’ স্লোগান প্রথম শোনা গিয়েছিল বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের নেতা শামিম ওসমানের মুখে। কিন্তু তার এতটাই ব্যবহার পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে যে, পবিত্র সরকার জানতেন সেটি অনুব্রত মণ্ডলের তৈরি করা স্লোগান। আবার প্রেসিডেন্সির প্রশান্ত এত দিন জানতেন, মমতাই ওই স্লোগানের স্রষ্টা।

প্রবীণ তৃণমূল নেতা নির্বেদ রায়ের বক্তব্য, স্লোগান তৈরিতে যে মেধা লাগে, তার সামগ্রিক অবনমন ঘটেছে। সে কারণেই স্লোগান ‘ধার’ নিতে হচ্ছে। 

নির্বেদের কথায়, ‘যে মধ্যবিত্ত অংশ স্লোগান তৈরি করত, নানা কারণে তার একটা অবনমন ঘটেছে। কৃষক বা শ্রমিকের জন্য স্লোগান কখনও সেই অংশ থেকে তৈরি হত না। তৈরি হত মধ্যবিত্ত অংশ থেকেই। সেই জায়গায় একটা ফাঁক তৈরি হয়েছে।’

সূত্র: আনন্দবাজার

ঢাকা/শাহেদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়