ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শেখ হাসিনার বিচার 

ঢাকায় ইতিহাস লেখা হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার উচিত মনোযোগ দিয়ে দেখা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৮, ১৩ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ১৫:০৩, ১৩ জুলাই ২০২৫
ঢাকায় ইতিহাস লেখা হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার উচিত মনোযোগ দিয়ে দেখা

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে সাম্প্রতিক যেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে তা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায় রচনা করছে। একসময় যিনি গণতন্ত্রের রক্ষক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে প্রশংসিত ছিলেন, এখন তিনি অভিযোগের মুখে পড়েছেন—স্মরণকালে দক্ষিণ এশিয়ায় ঘটে যাওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ দমন-পীড়নের নির্দেশদাতা হিসেবে।

ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং ও ফরেনসিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, গত বছর ছাত্র আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা সরাসরি প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দেন। সেই আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে, যা দ্রুতই পরিণত হয় জাতীয় গণআন্দোলনে। এরপর যা ঘটেছে, তা কোনো ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না—বরং ছিল কেন্দ্র থেকে পরিচালিত ভয়াবহ সহিংসতার পরিকল্পনা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে অন্তত এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়।

৫ আগস্ট আন্দোলনের সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন হিসেবে পরিচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—বরং গণতন্ত্রের মুখোশে লুকিয়ে থাকা দীর্ঘদিনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।

নিহতদের বড় অংশই ছিলেন শিক্ষার্থী ও তরুণরা। দিনের আলোয় প্রকাশ্য রাস্তায় তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। যারা বেঁচে গেছেন, তারা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই ভয়ানক দিনের মানসিক ট্রমা।

ফাঁস হওয়া অডিওতে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করেছে ফরেনসিক বিশ্লেষণ। ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে—পুলিশ সদস্যরা আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের টানা গুলি করেছে। এছাড়া, সরকারি নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিরোধীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও দমন করা হয়েছে বলেও প্রমাণ মিলেছে।

রবিবার (১৩ জুলাই) ভারতের ‘দ্য স্টেটসমেন্ট’ পত্রিকায় মতামত বিভাগে প্রকাশিত ‘হাসিনা’স রেকনিং’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘটনার প্রভাব বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে এখন আন্তর্জাতিক আলোচনার বিষয়। প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলো এমন এক বর্বরতার ঘটনায় নীরব থাকতে পারে? আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ই বা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে?

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে রয়েছে এখন। তবে এখনো কোনো দৃশ্যমান রাজনৈতিক স্থিতি বা ন্যায়বিচারের ইঙ্গিত মেলেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের পথ কেবল একটি অবাধ নির্বাচন নয়—প্রয়োজন একটি জাতিগত আত্মজিজ্ঞাসা ও বিচারপ্রক্রিয়া। এই বিচার প্রতিশোধের জন্য নয় বরং প্রয়োজন ভবিষ্যতে যেন আর কোনো নেতা সে যত জনপ্রিয়ই হোক—অবাধ ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে না পারে। 

ঢাকায় এখন ইতিহাস লেখা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উচিত এই ইতিহাস গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখা। কারণ, সরকার কেমন সেটা বোঝা যায় তখনই, যখন জনগণ প্রশ্ন তোলে। আর শেখ হাসিনা সেই পরীক্ষায় মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।

সূত্র : দ্য স্টেটসমেন্ট

ঢাকা/ইভা 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়