ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা ট্রাম্পের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাবেন। রবিবার মেরিল্যান্ডের জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজ-এ সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “আমরা ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট দিচ্ছি, যেটা তারা খুবই প্রয়োজন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।”
সোমবার (১৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প তার আগের অবস্থান থেকে সরে এলেন। এর আগে তিনি ইউক্রেনে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা পাঠানো বন্ধ রেখেছিলেন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হামলা অব্যাহত রাখায়, ট্রাম্প বেশ কিছুদিন ধরেই পুতিনের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করে আসছিলেন।
রবিবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “পুতিন সত্যিই অনেককে চমকে দিয়েছেন। তিনি সারাদিন ভালো কথা বলেন, আর রাত হলে বোমাবর্ষণ করেন। এটা আমার পছন্দ নয়।”
ট্রাম্প জানান, তিনি ইউক্রেনে কতগুলো প্যাট্রিয়ট পাঠাবেন তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেননি, তবে ‘কিছু সংখ্যক পাঠানো হবে কারণ তাদের সুরক্ষার প্রয়োজন’।
ট্রাম্প এমন এক সময় এই মন্তব্য করলেন যখন গত সপ্তাহে তার প্রশাসন নিশ্চিত করেছিল যে, তারা ইউরোপের ন্যাটো মিত্রদের কাছে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এসব অস্ত্র ইউক্রেনে সরবরাহ করা হবে।
ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার রুটিন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে আত্মরক্ষা করতে দীর্ঘদিন ধরেই আরো প্রতিরোধমূলক সরঞ্জাম চাচ্ছিলেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
কীভাবে কিয়েভে অস্ত্র পাঠানো যায় তা নিয়ে এ সপ্তাহে ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুটের সঙ্গে আলোচনা করবেন ট্রাম্প। এদিকে রুটে এমন এক সময় ওয়াশিংটন ডিসিতে সফরে যাচ্ছেন, যখন ট্রাম্প সোমবার রাশিয়াটিকে নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন।
পুতিন যুদ্ধে সংক্ষিপ্ত বিরতি নিতে রাজি হলেও, তিনি নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। রাশিয়া যুক্তি দিয়েছে যে, ইউক্রেন কর্তৃক গৃহীত এই প্রস্তাব কিয়েভকে তার সৈন্যদের পুনর্গঠন ও পুনর্সজ্জিত করার সুযোগ দেবে।
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর, ট্রাম্প কিয়েভের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হ্রাসের পদক্ষেপ নেন। তিনি ওয়াশিংটনের সহায়তাকে মার্কিন করদাতাদের জন্য একটি বোঝা হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে শান্তির পথে সমস্যা হিসেবে অভিযুক্ত করেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় অনুমোদনকৃত অর্থের অস্ত্র পাচ্ছিল ইউক্রেন। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে নতুন করে কিয়েভকে অস্ত্র প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়।
নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে একদিনের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতি তিনি পালন করতে পারেনি। এ অবস্থায় চলতি মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তিনি ইউক্রেনের জন্য প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র পাঠাবেন।
রবিবার ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়, রাশিয়া নিয়ে তার সাম্প্রতিক ঘোষণায় মস্কোর বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকবে কি না। জবাবে ট্রাম্প সরাসরি কিছু না বললেও জানান যে, তিনি পুতিনের ওপর হতাশ।
ট্রাম্প বলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর খুবই হতাশ। আমি ভেবেছিলাম, তিনি যা বলেন তা তিনি সত্যিই মানেন।”
ঢাকা/ফিরোজ