ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বেদুইন-দ্রুজ সংঘাত দমনে হিমশিম খাচ্ছে সিরিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ২০ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ১২:৫৫, ২০ জুলাই ২০২৫
বেদুইন-দ্রুজ সংঘাত দমনে হিমশিম খাচ্ছে সিরিয়া

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণা সত্ত্বেও দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সহিসংতা অব্যাহত আছে। রবিবার (২০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহ থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় সুওয়েইদা প্রদেশে সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায় সশস্ত্র বেদুইনদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

আরো পড়ুন:

শনিবার (১ জুলাই) দ্রুজ যোদ্ধারা সুওয়েইদা শহর থেকে বেদুইন অস্ত্রধারীদের তাড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছে, তবে প্রদেশের অন্যান্য অংশে লড়াই অব্যাহত আছে। 

দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা সৈন্য মোতায়েন করেছেন, কিন্তু সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে দ্রুজদের ওপর হামলায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। উভয় পক্ষের বিরুদ্ধেই নৃশংসতার অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (১৯ জুলাই) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে সিরিয়ায় ‘নিরপরাধ মানুষের ধর্ষণ ও হত্যা’ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

রুবিও লিখেছেন, “যদি দামেস্কের কর্তৃপক্ষ আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেট) ও ইরানের নিয়ন্ত্রণমুক্ত একটি ঐক্যবদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ সিরিয়া অর্জনের যেকোনো সুযোগ সংরক্ষণ করতে চায়, তাহলে তাদের অবশ্যই সরকারি বাহিনী ব্যবহার করে আইএসআইএস ও অন্যান্য সহিংস জিহাদিদের এলাকায় প্রবেশ ও গণহত্যা চালানো থেকে বিরত রাখতে এই সংঘাত বন্ধ করতে সাহায্য করতে হবে।”

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, সিরিয়া সরকারকে অবশ্যই তাদের সামরিক ব্যক্তিদের পাশাপাশি নৃশংসতার জন্য দোষী সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”

শনিবার সন্ধ্যায় সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, সুওয়েইদা শহরে সরকারি বাহিনীর হস্তক্ষেপের পর সংঘর্ষ বন্ধ করা হয়েছে।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সুওয়েইদা প্রদেশের অন্যান্য অংশেও লড়াই অব্যাহত আছে।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েল দ্রুজদের প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করে সরকারি বাহিনী ও দামেস্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে হামলা করেছে।

শনিবার (১৯ জুলাই) সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট শারা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে সংঘাতের অবসানের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছেন। এ সমঝোতার আওতায় ইসরায়েলের সামরিক হামলা বন্ধের বিষয়টিও আছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তিটি দ্রুজ নাগরিকদের সুরক্ষার শর্তে ইসরায়েল অনুমোদন করেছে।

সরকারি বাহিনী লড়াইয়ে আরো বেশি লোকের জড়িয়ে পড়া ঠেকাতে চেকপয়েন্ট তৈরি করছে। কিন্তু শনিবারও শহরের ভেতরে গুলির শব্দ শোনা গেছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির একজন সংবাদদাতা বলেছেন, তারা সশস্ত্র ব্যক্তিদের দোকানপাটে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দিতে দেখেছেন।

শনিবারই ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার সংখ্যালঘুসহ সব সিরিয়ানদের সুরক্ষায় সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের অঙ্গীকারের প্রতি সংশয় ব্যক্ত করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে গিডিয়ন সার বলেছেন, “সিরিয়ায় সংখ্যালঘুদের অংশ হওয়া খুব বিপজ্জনক এবং গত ছয় মাস ধরে এটি বারবার প্রমাণিত হয়েছে।”

সুওয়েইদার দ্রুজ সম্প্রদায় শিয়া ইসলাম থেকে উদ্ভূত কিন্তু তাদের স্বতন্ত্র পরিচয় এবং বিশ্বাস রয়েছে। দামেস্কের বর্তমান সরকারের প্রতি তাদের অনাস্থা রয়েছে। তারা সিরিয়ায় সংখ্যালঘু। প্রতিবেশী ইসরায়েল ও লেবাননেও তারা সংখ্যালঘু।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলের দ্রুজদের সঙ্গে যোগসূত্রতার কারণে সিরিয়ার দ্রুজদের কোনো ক্ষতি প্রতিরোধে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।

সুওয়েইদা দ্রুজ ও বেদুইনদের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা সহিংসতায় রূপ নেয় গত রবিবার, যখন ‘দ্রুজ’ সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর একজন ব্যবসায়ীকে অপহরণের খবর সামনে আসে।

গত রবিবার দামেস্কের মহাসড়কে একজন ড্রুজ ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর সুওয়েদার ড্রুজ এবং বেদুইন উপজাতির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনা মারাত্মক সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে রূপ নেয়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি অব হিউম্যান রাইটস-এর তথ্যানুসারে, এর পর থেকে সহিংসতায় ৯৪০ জন নিহত হয়েছে।

শুক্রবার সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত টম বারাক ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন।

তিনি বলেন, “আমরা দ্রুজ, বেদুইন ও সুন্নিদের অস্ত্র নামিয়ে ফেলা এবং অন্য সংখ্যালঘু সবাই মিলে প্রতিবেশীদের সাথে শান্তি ও উন্নতির একটি নতুন সিরিয়ান পরিচয় গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছি।” 

বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা লিনা সিনজাব সিরিয়া থেকে জানিয়েছেন, দ্রুজদের ওপর সহিংসতা পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

এর আগে চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার টুর্ক বলেছেন, তারা হত্যা, নিপীড়নসহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের রিপোর্ট পেয়েছেন।

স্থানীয় সশস্ত্র দ্রুজ ও বেদুইন ছাড়াও হামলাকারী অনেকে সরকারি বাহিনীর সদস্য ও অনেকের সরকারের সাথে যোগসূত্র আছে বলে তার বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভলকার টুর্ক বলেন, “এই রক্তপাত ও সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।”

শনিবার সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, “তার সরকার সংখ্যালঘুসহ সবার সুরক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। কেউই জবাবদিহিতার বাইরে থাকবে না।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়