ঢাকা     সোমবার   ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ঢাকায় আনিসুল হকের মরদেহ

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ২ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঢাকায় আনিসুল হকের মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকায় পৌঁছেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের মরদেহ। শনিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে তার মরদেহবাহী বিমানটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।

বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার ছোট ভাই সেনা প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক।

তাকে শ্রদ্ধা জানাতে বিমানবন্দরে সর্বস্তরের মানুষ ভিড় করে। দুপুর ১টায় বিমানবন্দর থেকে মরদেহ বের করে বনানী বাসভবনের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। আনিসুল হকের মরদেহ দেখতে তার বাসায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়রের একান্ত সচিব এ কে এম মিজানুর রহমান জানান, লন্ডনের স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় আনিসুল হকের মরদেহবাহী ফ্লাইটটি বাংলাদেশের উদ্দেশে ছেড়ে আসে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা এএসএম মামুন জানান, সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ বিকেল ৩টা থেকে আর্মি স্টেডিয়ামে রাখা হবে। সেখানেই বিকেল ৪টায় আসরের নামাজের পর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তার মরদেহ দেশে আনার বিষয়টি জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান আনিসুল হক। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ আগস্ট তাকে লন্ডনের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার মস্তিস্কের প্রদাহজনিত রোগ ‘সেরিব্রাল বাস্কুলাইটিস’ শনাক্ত করেন চিকিৎসকেরা। এরপর তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিসা দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি ঘটলে গত ৩১ অক্টোবর আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। গত ২৮ নভেম্বর আবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে রিহ্যাবিলিটেশন থেকে আইসিইউতে স্থানান্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ১-৩ ডিসেম্বর তিন দিনের শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে এবং আগামী ৩ ডিসেম্বর রোববার ডিএসসিসি অফিস বন্ধ থাকবে।

১৯৮৬ সালে তিনি নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদী গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। এই গ্রুপের শুধু তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতেই প্রায় ১২ হাজার মানুষ কাজ করছেন। তৈরি পোশাক রপ্তানি ছাড়াও এই গ্রুপের রয়েছে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা, দুটি আইটি কোম্পানি, একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং একটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি যা বিভিন্ন বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেল দেখিয়ে থাকে। এই গ্রুপের একটি টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠার অপেক্ষায় আছে যা শিগগিরই  ‘নাগরিক টেলিভিশন’ নামে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।

ইনডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রসমূহের মালিকদের সংস্থা) প্রেসিডেন্ট ছিলেন আনিসুল হক। তিনি শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনসমূহে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রেসিডেন্ট ছিলেন ২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। বিজিএমইএ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সংগঠন, যা ৩৫০০ তৈরি পোশাক কারখানা ও প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে থাকে। বাংলাদেশের রপ্তানির ৮০% হয় তৈরি পোশাক খাত থেকে। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বিনা শুল্কে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ইউরোপে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের জন্য সেসময় তিনি জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) গঠিত হয়েছে দেশের ২৭৬টি অ্যাসোসিয়েশন ও ৮৪টি চেম্বার অব কমার্স নিয়ে। বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে এফবিসিসিআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত।

বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের চেম্বার অব কমার্সের সমন্বয়ে গঠিত সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কাজ সার্কভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ গতিশীল রাখা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মানুষে মানুষে মেলবন্ধন সৃষ্টি। ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত এই সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট ছিলেন আনিসুল হক।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ ডিসেম্বর ২০১৭/সাওন/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়