ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ২১ ১৪৩১

বুড়িগঙ্গার দূষণ যেন বাড়ছেই

জবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৯, ২৪ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৯:২৪, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
বুড়িগঙ্গার দূষণ যেন বাড়ছেই

নদ-নদীই ছিল জীবন ও জীবিকা নির্বাহের প্রধান অবলম্বন। তাই তো বাংলার সাহিত্য-কবিতায় নদ-নদীর রয়েছে এক অপার মহিমান্বিত অবস্থান। কিন্তু যন্ত্রচালিত শিল্পের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরাই তিলে তিলে ধ্বংস করে দিয়েছি নদীগুলোকে। তেমনি মানুষের নির্মমতার এক জলন্ত উদাহরণ বুড়িগঙ্গা। নদীর এ অবস্থায় দিন দিন কমছে দর্শনার্থীর সংখ্যা।

বুড়িগঙ্গা নদীকে বলা হয় ঢাকার প্রাণ। রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এ নদী। এ নদীটির জোয়ার-ভাটার রূপ দেখে বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়েছিলেন মোগলরা। পদ্মার গতি পরিবর্তনের কারণে স্রোতধারা অনেক দক্ষিণে সরে গেলে পরিত্যক্ত ক্ষীণ ধারাটি বুড়িগঙ্গা নামে পরিচিতি পায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্যামপুরের ডাইং কারখানা, নাব্যতা সংকট, কল-কারখানা, ট্যানারির দূষিত বর্জ্য, কিছু মানুষের অবৈধ দখল, ময়লা-আবর্জনা স্তুপ করে নদীতে ফেলা ইত্যাদি কারণেই প্রতিনিয়ত পানির দূষণ বেড়েই চলেছে। আবার শ্যামপুর ডাইং কারখানাগুলোর যে পানি নদীতে মিশছে, তা আদর্শ মান থেকে অনেক নিচে অবস্থান করছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএ এর এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর সঙ্গে পুরো দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের কয়েক’শ নৌযান সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ব্যবহার করে লাখ লাখ মানুষ ও পণ্য পরিবহন করে থাকে। সদরঘাটের নৌযান থেকে নির্গত দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গা নদী অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নদীটির পানি দিন দিন যে পরিমাণ দূষিত হচ্ছে, সামনের দিনে মানুষের জন্য এখানে আসা কঠিন হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, লঞ্চের মধ্যে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলেও সেখানকার যাত্রীরা নদীর পানিতেই ফেলছে ময়লা। ডাইং কারখানা থেকে অতিরিক্ত ময়লা নির্গত হয়ে থাকে, যা কোনভাবেই বাধা দেওয়া হচ্ছে না। সবাই মিলে সচেতন এবং আইন প্রয়োগ করে বাধা দিলে বুড়িগঙ্গা বাঁচানো সম্ভব হবে।

জানা যায়, এক সময় এ নদীটি মাছে ভরপুর ছিল। এখন সেখানে শুধু বিষাক্ত কালো ও দূষিত পানির খেলা চলে প্রতিনিয়ত। নদী দূষণের ফলে এ বৃহত্তর নগরীর মানুষের কষ্টের শেষ নেই। পঁচা, দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে বুড়িগঙ্গা ব্যবহারকারীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হয় নিয়মিত।

দুর্গন্ধে নাক ভারী হয়ে আসলেও করার কিছুই থাকে না। দুর্গন্ধ মেনে নিয়েই এর সঙ্গে জীবন চালাতে হচ্ছে নদী সংশ্লিষ্ট যাত্রী ও জনসাধারণের। শিশু ও বয়স্করা এ দূষিত নদী পাড়ি দিতে হাঁপিয়ে উঠেন। শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্তরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন।

জাহিদ হাসান শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভূগছেন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন হাঁপানী রোগী। সদরঘাট থেকে কেরানীগঞ্জ যামু নৌকায়। নদীর ময়লা, দূষিত পানির গন্ধে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।’

ছোট ছোট ডিঙি নৌকাগুলোর মাঝিরা হতাশা প্রকাশ করে জানান, পানিতে অতিরিক্ত গন্ধ হওয়ায় দর্শনার্থীরা বুড়িগঙ্গা নদীতে আগের মতো কেউ ঘুরতে আসে না। এতে তাদের সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। তাছাড়া, এ সময়টা পানি কমে যাওয়ায় নিঃশ্বাস নেওয়াটা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সদরঘাটে পারভেজ নামে ভোলাগামী এক লঞ্চ যাত্রী বলেন, কাউন্টার থেকে টিকেট কিনলাম এবং লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষা রয়েছি। এখন ঘাটে খুব কষ্ট হয়। কেননা বুড়িগঙ্গার পানিতে অতিরিক্ত গন্ধ।

নদীর পানি কমতে থাকলেই দুর্গন্ধ আর কালো পানি দেখে নগরবাসী। এ থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে মনজুরুল, জব্বারদের মত সাধারণ খেঁটে খাওয়া মানুষের অভিমত, অচিরেই এসব বর্জ্য যাতে নদীতে প্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। দূষণ কমাতে নদীতে কেউ বর্জ্য ফেলে কি-না, সেদিকে নজর রাখতে হবে।

এছাড়া অনেকেই নদীর কিনারায় বর্জ্য রেখে জমাট বাঁধিয়ে রেখেছে। সেসব বর্জ্য পদার্থ নদীর কিনারা থেকে সরিয়ে নিতে হবে। নদী খনন করতে হবে। কারণ প্রচণ্ড নাব্যতা সংকট রয়েছে। শহরের ময়লা-আবর্জনা নদীতে যাতে না আসতে পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। মানুষদের সচেতন করতে হবে। বুঝাতে হবে- নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে, দেশ বাঁচলে মানুষ বাঁচবে।

/লিমন/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়