ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাহারি নকশার মাটির গহনা তৈরি করেন আঁখি 

ইমরান হোসেন, বরগুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ১৯ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ২১:৪৭, ১৯ জুলাই ২০২৫
বাহারি নকশার মাটির গহনা তৈরি করেন আঁখি 

নিজের তৈরি গহনার সঙ্গে আমতলীর গৃহবধূ আয়শা আক্তার আঁখি

বাহারি নকশার বিলুপ্ত প্রায় মাটির গহনা তৈরি করে জেলা জুড়ে সাড়া ফেলেছেন বরগুনার আমতলীর গৃহবধূ আয়শা আক্তার আঁখি। ঐতিহ্য ধরে রাখতে গত সাড়ে চার বছরের নিরলস পরিশ্রমে এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় এক হাজারের বেশি গহনা তৈরি করেছেন। এরমধ্যে বিক্রি করেছেন সাত শতাধিক। অনলাইনে গহনা বিক্রিতেও সাড়া পাচ্ছেন এই নারী।

বরগুনার আমতলী উপজেলার পশ্চিম চিলা গ্রামের আলমগীর গাজী ও মরিয়ম বেগম দম্পতির মেয়ে আঁখি।

আরো পড়ুন:

মরিয়ম বেগম একজোড়া মাটির কানের দুল কিনেছিলেন বাজার থেকে। ওই দুল ২৫ বছর রাখা ছিল আলমিরাতে। বছর পাঁচেক আগে তিনি দুলটি হারিয়ে ফেলেন।এরপরই মাটির গহনা তৈরির উদ্যোগ নেন আঁখি। নিজের অদম্য চেষ্টায় গহনা তৈরির পদ্ধতিও শিখে নেন এই উদ্যোক্তা। 

আঁখি ২০২১ সালে আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তার বিয়ে হয় উত্তর টিয়াখালীর গাজী মো. সোলায়মানের সঙ্গে। সংসারে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজতে আঁখি শুরু করেন মাটির গহনা তৈরির কাজ। গহনায় নিখুত নকশা ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করেন রং। তার তৈরি করা গহনার মধ্যে রয়েছে কানের দুল, গলার সেট, মালা, হাতের চুড়িসহ নানাবিধ জিনিস।

আঁখি তার তৈরিকৃত গহনা স্বামীর বাড়িতে বসে বর্তমানে অনলাইনে বিক্রি করছেন। শুরুতে কেউ তেমন আগ্রহ না দেখালেও এখন সাড়া পাচ্ছেন। অনলাইনে কারুকাজ দেখে তাকে অডার্র দেন ক্রেতারা। অনেকে তাদের পছন্দের গহনা অনলাইন বা সশরীরে গিয়ে ক্রয় করেন। টেকসই এ গহনার দাম তেমন না। প্রকারভেদে প্রতি সেট গহনা ৭০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন আঁখি। 

আঁখির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তারা জানান, অনলাইনে আঁখির কাছ থেকে বাহারি কারুকাজের মাটির তৈরি গহনা ক্রয় করেন‌ অনেকেই। এগুলো সত্যিই অসাধারণ। ঈদসহ বড় অনুষ্ঠানে মেয়েরা পোশাকের রঙের সঙ্গে মিল রেখে পছন্দসই গহনা অগ্রিম অর্ডার করেন। 

আঁখির স্বামী গাজী মো. সোলায়মান বলেন, “আমি স্ত্রীর এই কাজে সহযোগিতা করি। আঁখি মাটির গহনা বিক্রির টাকা দিয়ে সংসারে সাহায্য করে।” 

আঁখির মা মরিয়ম বেগম বলেন, “বাজার থেকে একটি মাটির গহনা কিনে এনেছিলাম। সেই গহনা গত ২৫ বছর আলমারিতে রাখা ছিল। বছর পাঁচেক আগে সেটি হারিয়ে ফেলি। এরপর আমার মেয়ে মাটির গহনা তৈরির উদ্যোগ নেয়। অনেক কষ্ট করে সে গহনা তৈরির কাজ শিখেছে। এখন স্বামীর বাড়িতে বসে মাটির গহনা তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করছে আমার মেয়ে।”   

উদ্যোক্তা আঁখি বলেন, “বিলুপ্ত মাটির গহনা ধরে রাখতে এই উদ্যোগ নিয়েছি।  নিজের চেষ্টায় গহনা তৈরির পদ্ধতি রপ্ত করেছি। বিভিন্ন কারুকাজ দিয়ে গহনা তৈরি করছি। অনলাইনে মানুষ এই গহনা কিনছেন।” 

তিনি আরো বলেন, “সরকারিভাবে সহায়তা পেলে আমার কাজের পরিধি আরো বৃদ্ধি করা যেত। অর্থ সঙ্কটের কারণে গহনা সেভাবে তৈরি করতে পারছি না।” 

আমতলী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোকনুজ্জামান খান বলেন, “বিলুপ্ত মাটির গহনা ধরে রাখতে আঁখি যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা অত্যান্ত চমৎকার। এটি পরিবেশবান্ধব। অবশ্যই উপজেলা প্রশাসন তাকে সামনে এগিয়ে নিতে পাশে থাকবে।” 

ঢাকা/মাসুদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়