ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

লকডাউনে বাড়ছে ঋণের বোঝা

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৩, ১৯ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ২০:৫১, ১৯ এপ্রিল ২০২১
লকডাউনে বাড়ছে ঋণের বোঝা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। যানবাহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে পেটের তাগিদে লকডাউন উপেক্ষা করে সড়ক ও অলি-গলিতে দেখা মিলছে রিকশাচালক ও ভ্যানচালকদের। লকডাউনের কারণে সাধারণ মানুষ বাসা থেকে কম বের হচ্ছেন। তাই যাত্রী সংকটের কারণে উপার্জন কমেছে রিকশাচালকদের। অপরদিকে, ব‌্যবসা-বাণিজ‌্য কমায় ভ্যানচালকদের রোজগারও কমেছে। ফলে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন রিকশাচালক ও ভ্যানচালকরা।

সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর খিলগাঁও, শাহজাহানপুর, মালিবাগ, বাসাবো, মগবাজার, মুগদা ও কমলাপুর এলাকায় রিকশা ও ভ্যানচালকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

রিকশা ও ভ্যানচালকরা বলছেন, লকডাউনের মধ্যে যে উপার্জন হচ্ছে, তাতে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। লকডাউনের আগে ৪০০-৫০০ টাকা আয় হতো। এখন সারা দিনে ২০০-২৫০ টাকাও আয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এ টাকা দিয়ে বাসাভাড়া ও পরিবারের সদস্যদের জন্য তিন বেলা খাবার জোটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে সংসার চালাতে সুদের বিনিময়ে ঋণ নিতে হচ্ছে। লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়লে না খেয়ে থাকতে হবে।

গোড়ান তিতাস রোড এলাকায় মোটরচালিত রিকশা চালান মো. মোজাম্মেল। বয়স প্রায় ৫০ বছর। স্ত্রীসহ দুই মেয়েকে নিয়ে ৮ মাস আগে ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যেও পেটের দায়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে। তার পরও প্রতিদিন যে টাকা আয় করি তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। লকডাউনের আগে দৈনিক ৬০০-৭০০ টাকা রোজগার করতে পারতাম। লকডাউনের পর থেকে ৩০০ টাকাও রোজগার করতে পারছি না। গত শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এক টাকাও রোজগার করা করতে পারিনি। এখন যে টাকা রোজগার হচ্ছে তা দিয়ে বাসা ভাড়া দেওয়ার পর তিন বেলা খাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব কারণে লকডাউনের মধ্যে ২ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে।’

মগবাজার এলাকায় রিকশা চালান হালিম মিয়া। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে থাকেন মধুবাগ এলাকায়। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে রাস্তায় মানুষ খুব বেশি বের হচ্ছে না। তাই আয়-রোজগার কম। আজকে খালি গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কারণে গাড়ি উল্টে রেখেছে পুলিশ। কখনো কখনো জরিমানা দিয়ে খালি হাতে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। তাই, সংসার চলাতে যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন, তা রোজগার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছি।’

শাহজাহানপুর এলাকার ভ্যানচালক জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ‘লকডাউনের কারণে দোকানপাট বন্ধ। কাজকর্ম না থাকায় রাস্তায় ভ্যান চালাতে পারছি না। গত দুই সপ্তাহ ধরে কোনো আয় রোজগার নেই। হাতে থাকা পুঁজি শেষ। ঋণ নিয়ে কোনোমতে চলছি।’

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও  বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘লকডাউনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। এসব মানুষের খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকলে লকডাউন হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, করোনার সঙ্গে সঙ্গে অভাবেও মানুষের জীবনের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই দ্বিতীয় দফা লকডাউনের অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে হলে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের সাহায্য দরকার হবে। নয়তো আর লকডাউন মানুষ মানবে না।’

ঢাকা/এনটি/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়