মাছের নাম মেনি
মহাসিন আলী || রাইজিংবিডি.কম
মেনি মাছ । ছবি : মেহেরপুর প্রতিনিধি
মহাসিন আলী, মেহেরপুর : বিলুপ্ত প্রায় ৫৪ প্রজাতির দেশি মাছের মধ্যে মেনি মাছ অন্যতম। নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়া, ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে অন্যান্য মাছের সঙ্গে এই মাছটিও বিলুপ্তির পথে।
এক সময় গ্রাম-গঞ্জের মানুষ খাল-বিল, ডোবা-নালায় জমে থাকা পানি সেচে ছোট মাছ ধরত। প্রাকৃতিক ও মানুষের সৃষ্ট বিপর্যয়ের কারণে সে সব মাছের অনেক প্রজাতিই এখন আর দেখতে পাওয়া যায় না।
বিলুপ্তপ্রায় মেনি মাছকে কেউ কেউ ভেদা মাছও বলে থাকেন। আবার কেউ বলেন রায়না মাছ। মাছটি খেতে বেশ সুস্বাদু। এ মাছটি একসময় বাংলাদেশের জলাশায়ে প্রচুর পরিমাণ পাওয়া যেত। বর্তমানে এদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে।
মেনি মাছ মিঠা পানির মাছ। মেনি মাছের ইংরেজী নাম Gangetic leaffish, বৈজ্ঞানিক নাম Nandus nandus. মাছটির দেহের রং কালচে সবুজ। দেহ পার্শ্বীয়ভাবে চাপা এবং দেহের দু’পাশে হলুদ সবুজাভ ডোরা দাগ থাকে। পাখনা সবুজাভ থেকে হলুদাভ বর্ণের হয়ে থাকে। দেহ আঁইশ দ্বারা আবৃত থাকে। এর লেজ গোলাকার এবং মুখ তুলনামূলকভাবে বড়। এরা প্রায় ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
খাল-বিল, হাওড়-বাওড় এবং নদীতে এরা বাস করে। পানির তলদেশে কর্দমাক্ত পরিবেশে বসবাস করে। বর্ষকালে প্লাবিত ধানক্ষেত বা পাটক্ষেতে এদেরকে পাওয়া যায়। খাদ্যাভ্যাসে এরা সাধারণত মাংশাসী ধরনের। এরা জলজ পোকা-মাকড়, পোকার লার্ভা ও ছোট মাছ খেয়ে থাকে। এরা এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে প্রজনন করে থাকে।
খুলনা সরকারি ব্রজলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. এ কে এম নজরুল কবীর বলেন, ‘প্রাকৃতিক ও মানুষের সৃষ্ট কারণে দেশের মিঠা পানির ৩০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং ৫৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায়।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ সচেতন হলে- ফসলি জমিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করলে এবং প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ না ধরলে ও কারেন্ট জাল ব্যবহার না করাসহ নদ-নদীতে কল-কারখানার বর্জ্য না ফেলা হলে দেশের মিঠা পানির ২৬০ প্রজাতি মাছের অনেকগুলো টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।’
মেহেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মেজবাহুল হক বলেন, ‘দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষার্থে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মাছের জন্য বেশি বেশি ও দীর্ঘ মেয়াদী অভয় আশ্রম করতে হবে। এছাড়া নদী বা বিল পাড়ে মাছের হ্যাচারি করতে পারলে ছোট-বড় সব ধরনের দেশি মাছের প্রজনন করা সম্ভব।’
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জুন ২০১৪/টিপু
রাইজিংবিডি.কম