ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা এবং আমরা-তাহারা

এম. এম. কায়সার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ১০ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২০:১৯, ১১ জুলাই ২০২১
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা এবং আমরা-তাহারা

- কোপা আমেরিকার ফাইনাল ম্যাচ কোথায় হচ্ছে? 
ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে। 
-ফাইনালে কারা? 
ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। 
আর এই ম্যাচ নিয়ে রক্তারক্তি 
হচ্ছে বাংলাদেশে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়!

ফাইনালের আগে এখন পর্যন্ত রিও ডি জেনেরিওতে বাড়তি কোনো নিরাপত্তার কথা তেমন শোনা যায়নি। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এই ফাইনাল নিয়ে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা এড়াতে ১১৬টি বিট পুলিশের দল মোতায়েন করা হয়েছে। 

এটা ফাইনাল শুরুর আগের খবর। ফাইনাল ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রোববার (১১ জুলাই) সকাল ৬টায়। সেদিন ভোররাত থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের আরও ৪০টি দল মোতায়েন করা হবে। 

জেলা পুলিশ এই তথ্য জানিয়েছে। 

একটু জানিয়ে রাখি, রিও ডি জেনেরিও থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব ১৫ হাজার ২৮০ কিলোমিটার। বিমানযাত্রায় সময় লাগে পুরো একদিনের বেশি।

- কী বুঝলেন? 

খেলা হচ্ছে রিও ডি জেনেরিওতে। আর মারামারি হচ্ছে ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়! কোপা আমেরিকার ফাইনালের প্রিভিউয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সমর্থকদের এই মারামারির খবর ছাপা হয়েছে আর্জেন্টিনার পত্রিকায়ও। খেলা অন্য দেশের। খেলছেও অন্য দেশ। খেলা হচ্ছেও অনেক দূরের দেশে। অথচ সমর্থনের নামে মারামারি করছি আমরা। তাও আবার এমন মারামারি যে পুলিশ পাহারা বসাতে হচ্ছে!

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা তো আগেও খেলতো। বাংলাদেশ তো সেই খেলা আগেও দেখতো। কিন্তু এ নিয়ে রক্তারক্তি হতো কি? বড় জোর রকের আড্ডায় অথবা ক্লাসরুমের বারান্দায় তর্ক চলতো। টক-ঝাল-মিষ্টি, আনন্দ-উৎসবের সেই বিতর্ক জুড়ে থাকতো সভ্যতা-ভব্যতার সুর। 

কিন্তু আজ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে তর্ক এবং সমর্থনের সুরে যে দাঙ্গা আর মাস্তানির মুড। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচের আগে যখন সবাই হলুদ আর আকাশীর ধ্রুপদী আনন্দ সুখের অপেক্ষায়; তখন আমরা দেখছি অন্য ছবি। 

ব্রাজিলের জার্সি গায়ে কপালে ব্যান্ডেজ, রক্ত ঝরছে। আর্জেন্টিনার আকাশি জার্সি পরে নাকে ব্যান্ডেজ, মুখে আঁচড়। ভাবখানা এমন যে, এখানে আমরা মারামারি করলে মাঠে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা জিতে যাবে!

অথচ মাঠে যে দু’দল খেলছে, তারা ম্যাচের আগে কতোই না নির্ভার। উপরের ছবিটাই দেখুন। লকার রুমে বসে হাসছেন মেসি ও নেইমার। ফটোশপে করা হলেও এটাই কিন্তু ফুটবলের সত্যিকারের ছবি। শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই, দ্বন্দ্ব, প্রতিযোগিতা সবকিছুই কেবল ঐ মাঠের ৯০ মিনিট বড়জোর ১২০ মিনিটের জন্য। খেলা শেষের বাঁশি বাজতেই জয়ী ও বিজিতের হ্যান্ডশেক। 

এটাই তো স্পোর্টসের স্পিরিট। ফুটবল সামান্য কেবল একটা খেলা। অবশ্যই আনন্দের। কখনোই হিংস্রতার নয়। অবশ্যই উপভোগের। কখনোই উপহাসের নয়। অবশ্যই মুর্চ্ছনার। কখনোই মারামারি নয়।
 
এবং কখনোই কোনো অবস্থাতে তা জীবনের চেয়ে বড় কিছু নয়।

ঢাকা/ইয়াসিন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়