ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পরাজয়ের পাহাড় ডিঙিয়ে জয়সূর্যের দেখা পেল অস্ট্রেলিয়া

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৭, ৭ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ২২:৩৫, ৭ আগস্ট ২০২১
পরাজয়ের পাহাড় ডিঙিয়ে জয়সূর্যের দেখা পেল অস্ট্রেলিয়া

রান নেওয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিল না অ্যান্ড্রু টাইয়ের। কিন্তু অ্যাস্টন টার্নারের ইচ্ছা ছিল না শেষ ওভারে ম্যাচ নিয়ে যাওয়ার। জয়ের জন্য দরকার মাত্র ১ রান। মোস্তাফিজুর রহমানের স্লোয়ার পেছনের পায়ে ভর করে নিখুঁত ডিফেন্স করেছিলেন টাই। কিন্তু টার্নারের ডাকে সাড়া না দিয়ে পারলেন না।

মেহেদী হাসান নন স্ট্রাইক প্রান্তে বল পাঠানোর আগে কাঙ্খিত রান পেয়ে গেলেন টাই। টাই ও টার্নারের মুখে এক চিলতে হাসি। অস্ট্রেলিয়া শিবিরে স্বস্তির নিশ্বাস। বুক থেকে যেন নেমে গেল লাগাতার পরাজয়ের বিশাল বোঝা! টানা তিন টি-টোয়েন্টি হেরে পরাজয়ের পাহাড়ে আড়াল ছিল অস্ট্রেলিয়া। অবশেষে জয়সূর্যের দেখা পেল। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে প্রথমবারের মতো ৩ উইকেটে তারা হারাল বাংলাদেশকে।

জাস্টিন ল্যাঙ্গার এর আগের প্রতি ম্যাচ শেষে শিষ্যদের নিয়ে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমের কাছে গিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আজকে কাজটা করেছেন মাহমুদউল্লাহ। তিন ম্যাচ পর হলেও এমন দিনটা দেখা লাগল মাহমুদউল্লাহদের।

২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে মিরপুরেই বাংলাদেশকে ১২৭ রানে থামানোর পরও ১০ রানে ম্যাচ হারে অস্ট্রেলিয়া। এবার আবারও আগে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ। কিন্তু স্কোরবোর্ডে পুঁজি মাত্র ১০৪ রান। এ রানটাও কঠিন হয়ে গিয়েছিল অতিথিদের জন্য। ৬৫ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারায় তারা। সেখান থেকে অ্যাগার ও টার্নারের ৩৪ রানের জুটি তাদেরকে নিয়ে যায় কাঙ্খিত গন্তব্যে। অ্যাগার ২৭ রান করে হাল ছেড়ে দিলেও টার্নার জয় ছিনিয়েই মাঠ ছাড়েন। 

দুর্বোধ্য মোস্তাফিজ আজ যেন আরও ভয়ঙ্কর। এবার শুধু রান আটকে ডট বল করেই খুশি হননি। এবার উইকেট পেলেন ২টি। মেহেদী বরাবরের মতো এবারো নতুন বলে এনে দিলেন সাফল্য। মাঝের ওভারেও ধাক্কা দিলেন অজি শিবিরে। ধারাবাহিক আক্রমণে নাসুম আহমেদও পেলেন উইকেটের স্বাদ। শরিফুল ইসলাম শেষে পেলেন উইকেটের দেখা। কিন্তু সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা ছিল যার ওপর, সেই সাকিবই হতাশ করলেন। বাঁহাতি স্পিনার ৪ ওভারে ৫০ রান দিয়ে ডুবালেন দলকে। তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে বোলিংয়ের রেকর্ডের দিনে বাংলাদেশকে এই দ্বিপাক্ষিক সিরিজে প্রথমবার হারাল অস্ট্রেলিয়া।  

বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ইনিংসের চতুর্থ ওভারে। আগের ম্যাচে মোস্তাফিজের ৪ বলে ব্যাটে বল না লাগিয়ে খলনায়ক হয়েছিলেন ড্যান ক্রিস্টিয়ান। আজ সেই ক্রিস্টিয়ান সাকিবকে উড়ালেন পাঁচটি ছক্কা। প্রথম তিন বলে তিন ছক্কা। পরের বলটি টাইমিং হয়নি। শেষ দুই বলে ক্রিস্টিয়ানের ব্যাট যেন সেনাপতির তরবারি। তার বলে ১৫ বলে ৩৯ রানের ছোট্ট ক্যামিওই যেন বাংলাদেশকে ছিটকে দেয় ম্যাচ থেকে। আগের ম্যাচের খলনায়ক আজ ‘ওয়ালটন মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের স্কোরবোর্ডে যদি মাত্র ৪ চার ও ও ৩টি ছক্কা দেখতে পান, তাহলে নিশ্চিত বুঝে নিতে হবে আদর্শ উইকেট ছিল না। হ্যাঁ, উইকেট টি-টোয়েন্টির আদর্শ ছিল না। কিন্তু যেমন ছিল সেখানে ১২০ বলে ১২০ রান হবে তাও মেনে নেওয়া যায় না। ফলে রান না আসার জন্য শুধুমাত্র উইকেটকেই দায়ী করতে হবে, তাও বেমানান।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ব্যাটিং করেছেন তা রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ। নিজেদের চিরচেনা উইকেটে স্ট্রাইক রোটেট করতে না পারার ব্যর্থতা যেন প্রকট আকারে বাড়ছে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ইনিংসে ছিল ৪৭ ডট বল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে যথাক্রমে ৫৫ ও ৫০টি। চতুর্থ ম্যাচে ছাড়িয়ে গেল আগের সব রেকর্ড। এবার ১২০ বলে ৬২টি ডট বল!

অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের প্রশংসা করতেই হবে। তবে এমন আহামরিও ছিল না যে ইনিংসের অর্ধেকেরও বেশি বল ডট খেলতে হবে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২৮ রান করা নাঈম বল খেলেছেন ৩৬টি। চারটি চারের দুইটি তার ব্যাট থেকে আসে। বাকি দুইটির একটি সাকিব ও মেহেদীর ব্যাটে। সাকিব ২৬ বলে করেন মাত্র ১৫ রান। আফিফ ও মেহেদীর স্ট্রাইক রেট ছিল শুধুমাত্র একশর উপরে। আফিফ ১৭ বলে ২০, মেহেদী ১৬ বলে ২৩ রান করেন। বাকিরা কেউই দায়িত্ব সামলাতে পারেননি।

স্কোরবোর্ডে ১৫-২০ রান বেশি হলে ম্যাচের ফল ভিন্ন হতে পারত। তবে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব ও সামর্থ্য নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠল আবারো।

ঢাকা/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়