ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘থ্রি সি’তে পাকিস্তানের ভারত বধ

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:১৩, ২৫ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ০১:৩২, ২৫ অক্টোবর ২০২১
‘থ্রি সি’তে পাকিস্তানের ভারত বধ

কখনো বিরাট কোহলিকে দেখেছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানের নান্দনিক শটে মুগ্ধ হতে। মোহাম্মদ রিজওয়ান তাকে বাধ্য করেছেন। ভুবনেশ্বর কুম্বারের লেন্থ বলটা একটু নিচু হয়ে পুল করে মিড উইকেট দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠালেন পাকিস্তানের ওপেনার। কোহলি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন রিজওয়ানের দিকে। ওই প্রথম ভারতের অধিনায়কের মুখে কোনো কথা নেই! এটা নিশ্চয়ই ক্রিকেটীয় সৌন্দর্য্য।

ভারত-পাকিস্তান মানেই ‘ব্লকবাস্টার’ শো। সেটা যে ফরম্যাট আর মঞ্চেই হোক না কেন। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ থাকায় দুই দলের দেখা হয় বৈশ্বিক কিংবা মহাদেশীয় আসরে। কালেভাদ্রে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের মুখোমুখি লড়াই হয়ে উঠে ঝাঁঝালো। বৈশ্বিক মঞ্চে রোববার মিললো সেই ঝাঁঝালো স্বাদ। কিন্তু ম্যাচটায় ভারত ছিল কিনা সেটা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন তোলা যায়।

কারণ পাকিস্তান যে ভারতকে উড়িয়েছে ১০ উইকেটে! পাঠক ভুল পড়ছেন না, সত্যি-ই পাকিস্তান ১০ উইকেটে ভারতকে হারিয়েছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৭ বার ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আগের ৫ বারের মুখোমুখিতে ভারতকে কোনোদিনও হারাতে পারেনি পাকিস্তান। সেই পাকিস্তানই এবার ভারতকে ১০ উইকেটের হারের লজ্জা দিলো!

যেনতেন স্কোর তাড়া করেনি পাকিস্তান। ১৫২ রান ছুঁড়ে দিয়েছিল কোহলিরা। বাবর আজমের ক্ল্যাসিকাল ইনিংস ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের বুদ্ধীদিপ্ত ব্যাটিংয়ে স্রেফ এলোমেলো হয়ে যায় ভারত। বাবর আজম ৫২ বলে ৬৮ রান করেছেন। রিজওয়ান ৫৫ বলে করেছেন ৭৮। আর বল হাতে ৩১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের নায়ক শাহীন শাহ আফ্রিদি।

ম্যাচ শেষে বাবর আজম জানিয়েছে, আজীবন মনে রাখবেন এই ম্যাচ। তার ভাষ্য, ‘আজীবন ম্যাচটা মনে রাখবো। শুধু রেকর্ডের জন্য নয়। আমরা ভারতকে প্রথমবার হারিয়েছি সেজন্য। দলের প্রত্যেকের জন্য এ জয়টা দরকার ছিল। আমি চাই প্রত্যেকে নিজেদের অবদান মনে রাখুক। টুর্নামেন্টটা সবে শুরু হলো। এরকম জয় সামনে ভালো করতে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।’

লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই ধারাবাহিকতায় খেলেছেন রিজওয়ান ও বাবর। কোনো জড়তা নেই। সিঙ্গেল, ডাবলস নিচ্ছেন চোখের পলকে। যখন বাউন্ডারি দরকার তখন আদায় করে নিচ্ছেন। কোনো বোলারকে থিতু হতে দেননি। আগ্রাসী মনোভাব নয়, বরং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটাও যে হিসেব করে খেলা যায় তা দুজন করে দেখিয়েছেন।

রিজওয়ানের পছন্দের শট পুল। সেই পুল থেকে আদায় করেছেন ৫৬! ৭৯ রানের ৫৬ রানই পছন্দের শটে পেলে আর কি লাগে। বাবর আজম ফ্লিক আর কভার ড্রাইভ খেলতে পছন্দ করেন। ফ্লিকে ১৪ রানের সঙ্গে কভার ড্রাইভে পেয়েছেন ১২ রান। তাতে কাজটা হয়ে উঠে মধুময়। দুই ব্যাটসম্যানই ৬টি করে বাউন্ডারি মেরেছেন। বাবর ছক্কা মেরেছেন ২টি। রিজওয়ান ১টি বেশি।

দুই দলের রান রেট তারতম্য করলে দেখা যায় ভারত যেখানে ৭-৮ করে রান নেওয়ার পাশাপাশি ২-৩ করে এগিয়েছে, সেখানে পাকিস্তান গড় ৬ রান করে তুলেছে। নিশ্চিতভাবে তাদের টার্গেট ছিল ২টি ওভার। যেখানে ১০-১৫ বা তারও বেশি করবেন। সেভাবেই তারা এগিয়েছে।

অষ্টম ওভারের পর শিশির ম্যাচে প্রভাব ফেলা শুরু করে। তখন স্পিনারদের জন্য বোলিং কঠিন হয়ে যায়। ভারতের দুই স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী ও রবীন্দ্রর জাদেজার জন্যও কাজটা কঠিন হয়। তাদের টার্গেট করেই আগায় রিজওয়ান, বাবর। বরুণের ১৩তম ওভারে ১৬ রান ও জাদেজার ১৪তম ওভারে ১১ রান পায় পাকিস্তান। ব্যাস টার্গেট ৬৭ থেকে এক লাফে নেমে আসে ৪০ রানে। ১৮ বলে যখন ১৭ রান লাগতো তখন রিজওয়ানে এলোমেলো ভারত। সামির প্রথম তিন বলে ছক্কা, চার, চার। এরপর ১ রান নিয়ে প্রান্ত বদল করেন। অধিনায়ক বাবর পঞ্চম বলে ২ রান নিলে কাঙ্খিত ১৭ রান পেয়ে যায় পাকিস্তান। তাতেই ইতিহাস। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম জয়। তাও প্রথম ম্যাচেই।

জয় হলো থ্রি‘সি’–এর। কাম, কুল ও ক্যালকুলেটিভ হয়েও যে টি-টোয়েন্টিতে জয় পাওয়া যা তা ‘বাবরিজ’ বুঝিয়ে দিয়েছেন।

ইয়াসিন/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়