ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিশ্বাস, নিয়ন্ত্রণ, উপভোগ মিরাজ-আফিফ জুটির বোঝাপড়ার ভিত

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ২৩ মার্চ ২০২২   আপডেট: ১১:৩৮, ২৩ মার্চ ২০২২
বিশ্বাস, নিয়ন্ত্রণ, উপভোগ মিরাজ-আফিফ জুটির বোঝাপড়ার ভিত

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের ‘ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট’ এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে ব্যাটিং অর্ডারে যতই ধস নামুক না কেন দলীয় স্কোর দুইশ হবেই। শুধু বলার জন্যই বলা নয়, পরিসংখ্যান সেই কথাই বলছে। দুই একবার ব্যতিক্রম তো হবেই। না হলে উন্নতি, শুধরানোর জায়গা থাকে না।

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে ভরসার নাম লোয়ার অর্ডার ব্যাটিং, যেখানে আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ দলের ঝান্ডা উড়িয়ে যাচ্ছেন। লোয়ার অর্ডারে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৩০ ইনিংসে জুটি বেঁধেছেন খালেদ মাসুদ ও মোহাম্মদ রফিক। ১৯৯৫ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত তাদের জুটির রান ৫০৪। এরপর আব্দুর রাজ্জাক-মাশরাফি জুটির রান ৪২২, খালেদ মাহমুদ ও খালেদ মাসুদ করেছেন ৪০৩ রান। মাহমুদউল্লাহ ও মাশরাফির ২০ ম্যাচে অবদান ৩৯০।

পরের জায়গাটাই দখল করে নিয়েছেন আফিফ ও মিরাজ। মাত্র ৩ ম্যাচে তাদের রান ৩১৮। ব্যাটিং গড় ১৫৯.০০। ওয়ানডে ক্রিকেটে সপ্তম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭৪ রানের জুটিও তাদের। আর ৪ রান তাদের নামের পাশে যুক্ত হলে বিশ্বরেকর্ড হয়ে যেত।

১৭৪ রানের ইনিংস দিয়েই মিরাজ ও আফিফ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাদের দিয়ে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখতে পারে বাংলাদেশ। এর আগে জিম্বাবুয়ের হারারেতে দুজনের ব্যাট থেকে এসেছিল ৫৮ রানের জুটি। সবশেষ ওয়ান্ডারার্সে দল যখন বিপদে, তখন ঝকঝকে ৮৬ রানের জুটি গড়েন।

বয়সে ও ক্রিকেটে আফিফের চেয়ে এগিয়ে মিরাজ। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট, যুব বিশ্বকাপ সব খেলেই তারা এসেছেন জাতীয় দলে। ওয়ানডে ক্রিকেটে মিরাজ পায়ের নিচে জমিন খুঁজে পেয়েছেন বছরখানেক হলো। এর আগে তার জায়গা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। আফিফও সুযোগ পেয়ে বিশ্বাস অর্জন করে নিজের জায়গা শক্ত করেছেন। তাদের দুজনকেই এখন ভবিষ্যতের কাণ্ডারি মনে করছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

আফিফ এখন ওয়ানডেতে ব্যাট করছেন সাত নম্বরে, আটে মিরাজ। শুরুর দিকের ব্যাটসম্যানরা ভালো করতে না পারলেই কেবল তারা লম্বা জুটি গড়ার সুযোগ পান। নয়তো শেষ দিকে দুজনের ভূমিকা পাওয়ার হিটিং। তবে যতবার তারা সুযোগ পেয়েছেন, ততবারই দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে ইনিংস বড় করেছেন। আফিগানিস্তানের বিপক্ষে ১৭৪ রান করেছিলেন, যখন দল ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়েছিল। আফিফ করেছিলেন ৮৬ রান, মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ঝকঝকে ৮১ রান। ওয়ান্ডারার্সে দল যখন আবার বিপদে তখন তারা যোগ করেন ৮৬ রান। এবার আফিফ ৪১ ও মিরাজ ৩৮ রান করেন।

দুজনের এই লড়াকু মনোভাব, বোঝাপড়ার ভিত দাঁড়িয়ে বিশ্বাস, উপভোগ ও নিয়ন্ত্রণের ওপর। পারস্পরিক সম্মান, নুতন কিছু শেখা, ভুল ধরিয়ে দেওয়া, শুধরে নেওয়া সব কিছুর মিশ্রণে গড়ে উঠেছে এই বোঝাপড়া। মিরাজ গতকাল গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সতীর্থ আফিফকে। পাশাপাশি নিজেদের জুটির রহস্যও বলেছেন। 

মিরাজ বলেছেন, ‘আফিফ খুব ভালো ক্রিকেট খেলছে এবং খুব ভালো ক্রিকেটার আমি মনে করি। ওর বোধ খুবই ভালো। ও যেখানে ব্যাট করে, সেখানে অনেক কিছু দেওয়ার আছে। আফগানিস্তান সিরিজে যে ম্যাচ জিতেছিলাম, সেখানে অনেক ভালো ব্যাট করেছে। ওর ব্যাটিং দেখে আমারও অনেক আত্মবিশ্বাস এসেছে। ও সবসময় যেটা করে, সাবলীল থাকার চেষ্টা করে। যখন ব্যাটিং করে, ওই মুহূর্তটাকেই উপভোগ করার চেষ্টা করে। অনেক দূরের চিন্তা করে না। ’

আফিফের কাছ থেকে মানসিকভাবে শক্তিও পান তিনি, “আমি মাঝেমধ্যে একটু দূরের চিন্তা করি। তখন ও আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে যে, ‘ভাই, বেশি চিন্তা করার দরকার নেই। বর্তমানে থেকে যে ক্রিকেট চলছে, যে অবস্থান আছে, সেটা উপভোগের চেষ্টা করি।’ এসবই কথা হয়।”

নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে মিরাজ বলেন, ‘ওর সঙ্গে রানিং বিটুইন দ্য উইকেটও ভালো হয়। গেম প্ল্যানিং নিয়ে আমরা সবসময় কথা বলতে থাকি ম্যাচের ভেতর। ও আর আমি যেখানে ব্যাটিং করছি, এটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দেখবেন, ওর ৩০ রান ও আমার ২০ রান দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ও সেভাবে মানসিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছে, আমিও সেভাবেই প্রস্তুত হচ্ছি। আমাদের বোঝাপড়া খুব ভালো।’

ক্ষুদ্রের সমষ্টিতেই বৃহতের সৃষ্টি! মিরাজ ও আফিফের এই পথ চলা হতে পারে ভবিষ্যতের জন্য বড় কিছু। লোয়ার অর্ডার থেকে তারা একদিন উঠবেন মিডল অর্ডারে। যেখানে তারা হয়ে উঠবেন বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন।

ঢাকা/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়