ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিসিবির হিট ম‌্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া যেভাবে চাঙ্গা রাখছে ক্রিকেটারদের

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০২, ৭ জুন ২০২৩   আপডেট: ১৯:০৪, ৭ জুন ২০২৩
বিসিবির হিট ম‌্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া যেভাবে চাঙ্গা রাখছে ক্রিকেটারদের

প্রচণ্ড গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। বাতাসে আর্দ্রতা অস্বাভাবিক কম থাকায় গরম প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে বেশি পোড়াচ্ছে মানুষকে। সূর্যের কড়া তাপ যেখানে জনজীবন বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে সেখানে মিরপুরের সবুজ গালিচা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্রিকেটাররা।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজকে সামনে রেখে নিয়মিত অনুশীলনে ব‌্যস্ত তারা। প্রচণ্ড গরমে ক্রিকেটাররা রানিং করে ফিটনেস ঠিক রাখছেন। স্কিল ট্রেনিংয়ে ঝরাচ্ছেন ঘাম। গরমের ঝাঁজ টের পেলেও ক্লান্ত হচ্ছেন না। বিশ্রাম দিয়ে দিয়ে চলছে তাদের প্রস্তুতি।

ক্রিকেটারদের এই হাঁপিয়ে না ওঠার পেছনে বড় কারণ বিসিবির হিট ম‌্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া। যা তৈরি করেছে বিসিবির মেডিকেল বিভাগ। তাদের পরামর্শেই চলছে ক্রিকেটারদের অনুশীলন। সেসব নিয়ে বুধবার গণমাধ‌্যমের মুখোমুখি হলেন বিসিবির মেডিকেল বিভাগের প্রধান দেবাশিষ চৌধুরী। হিট ম‌্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়ার অ‌্যাদোপান্ত জানালেন তিনি।

‘ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে আমরা ডিহাইড্রেশন প্রিভেন্ট করার জন্য প্রি-হাইড্রেশন করতে বলি। অর্থাৎ খেলার আগের দিন থেকেই ওদের নিজেদের হাইড্রেশন স্ট্যাটাসটা ধরে রাখতে হবে। তাপমাত্রার যে সরাসরি হিটটা, সেটা কমানোর জন্য আমরা সুযোগ পেলেই ঘন ঘন বিরতির ব্যবস্থা করি। ওই সময় ছায়া বা বড় ছাতার নিচে ওদের থাকতে বলি। ঘন ঘন পানি বিরতি দেওয়ার ফলে ওদের হাইড্রেশন ও ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ওদের সারা শরীরের অনাবৃত স্থানগুলো মুছে দেওয়া হয়। যখনই ওরা ভেতরে চলে আসে, তখনই আমরা শরীরের বিশেষ বিশেষ জায়গায় আমরা বরফ দিয়ে থাকি। বরফ দেওয়ার মাধ্যমে শরীরের কোর হিটটাকে আমরা কমানোর চেষ্টা করি। এছাড়া আইস বাথেরও ব্যবস্থা আছে।’

‘তবে এ ধরনের হিটের কারণে যে পরিমাণে কোর টেম্পারেচার বৃদ্ধি পায়, সেটি বেশ কয়েক দিন পর্যন্ত থেকে যায়। চামড়ার তাপমাত্রা কমে গেলেও, ভেতরে আরও অনেক দিন থাকতে পারে। এজন্য খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।’

আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট শুরু ১৪ জুন থেকে। মিরপুর শের-ই-বাংলায় কড়া তাপমাত্রায় খেলতে হবে পাঁচ দিনের টেস্ট। লম্বা সময়ের জন‌্য ক্রিকেটাররা যেন মাঠে থেকে সেই চ‌্যালেঞ্জ নিতে পারে সেভাবেই তাদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।

‘শর্টার ভার্শনের খেলার সুবিধা হচ্ছে পরের দিন আমরা রেস্ট পাচ্ছি। হিট ম্যানেজমেন্ট আমরা করতে পারছি। কিন্তু লংগার ভার্শনে আমাদের ৫ দিন টানা মাঠে থাকতে হচ্ছে। তখন ম্যানেজমেন্ট একটু কঠিন হয়ে যায়। সব মিলিয়ে আমাদের ফিজিও, ট্রেইনার যারা আছে তারা এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ। আমাদের ক্রিকেটাররাও নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখছে। সবার সম্মিলিত চেষ্টায়ই আমরা চেষ্টা করছি হিট রিলেটেড ইনজুরিগুলো কাটিয়ে নেওয়ার জন্য।’

‘শুধু তাপমাত্রা নয়, এই সময়ে আরেকটা বিষয় হচ্ছে আর্দ্রতা। বাতাসের এই আর্দ্রতা স্বাস্থ্যের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর। এই সময়টাতে ট্রপিক্যাল দেশগুলোতে হিট ইনডেক্স এতোই বেড়ে যায় যে অনেক লম্বা সময় ধরে আউটডোরে খেলতে গেলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। যেহেতু খুব ব্যস্ত সূচি, আমাদেরকে এর মধ্য দিয়েই যেতে হবে। তাই এজন্য খেলার আগে ও প্রস্তুতির ওপরেই নির্ভর করবে পারফরম্যান্স।’

‘খেলোয়াড়রা যখন ক্যাম্প সিচুয়েশনে থাকে তখন ওদের খাবারের বিষয়টা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। ওরা যখন বাসায় থাকে খাবারের প্ল্যানটা ওদের নিজেদেরই করতে হয়। সৌভাগ্যজনকভাবে আমাদের সঙ্গে যে ট্রেনাররা কাজ করে, ওরা এ ধরনের হিট স্ট্রেস বা হিট রিলেটেড ইনজুরিগুলো ম্যানেজমেন্টের বিষয়ে অভিজ্ঞ।’

‘অবশ্যই হাইড্রেশন ও নিউট্রিশন বড় ভূমিকা রাখে, হিট স্ট্রেস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। তো মূলত যে খাবারগুলোর মধ্যে জলীয় অংশ বেশি আছে, সেগুলো আমরা বেশি ব্যবহার করতে বলি। এই সময়ে স্বাভাবিক খাদ্য তালিকার বাইরে প্রচুর পরিমাণে ফল ও সবজি যোগ করা হয়। এর বাইরে পানির ব্যাপারটা আমরা বারবার বলে থাকি যে, তৃষ্ণা পেলে পানি খাওয়া যাবে না। তৃষ্ণা পাওয়ার আগেই পানি খেতে হবে। অর্থাৎ ডিমান্ড ফিডিং করা যাবে না। এটা ক্লক ফিডিং করতে হবে। অর্থাৎ এক ঘণ্টা পরপর পানি খেতে হবে। এটা তৃষ্ণার ওপর নির্ভর করবে না। যখনই আমাদের তৃষ্ণা পেয়ে যাবে, আমাদের ধরে নিতে হবে আমরা প্রায় দুই লিটারের মতো ডিহাইড্রেটেড হয়ে গেছি। তাই এজন্য এ ধরনের কিছু টিপস ক্রিকেটাররাও জানে। ওদেরকে বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের ট্রেইনাররাও আছে। সার্বক্ষণিকভাবে ওরা ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক, স্ল্যাশ বা বরফ দিয়ে চেষ্টা করছেন হিট স্ট্রেসটা ম্যানেজ করার।’

টেস্ট চলাকালীন মধ‌্যাহ্ন বিরতি ও চা পানের বিরতি পান ক্রিকেটাররা। এছাড়া ১৫ ওভার শেষে ড্রিংকস ব্রেকও পান। ড্রিংকস ব্রেক আলোচনার মাধ‌্যমে বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগও আছে। এজন‌্য ম‌্যাচ রেফারির সঙ্গে সিরিজ শুরুর আগে কথা বলবে দুই দলের কোচ, ম‌্যানেজাররা। ক্রিকেটারদের বিশেষ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সুযোগও আছে। সেই সুযোগটি নিতে পারে দুই দল।

ইয়াসিন/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়