ঢাকা     সোমবার   ১৭ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ৩ ১৪৩১

গতির ডানা মেলে টেস্ট রোমাঞ্চে ডুব নাহিদ রানার

ইয়াসিন হাসান, সিলেট থেকে: || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ২১ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৫:৫৮, ২১ মার্চ ২০২৪
গতির ডানা মেলে টেস্ট রোমাঞ্চে ডুব নাহিদ রানার

আবাহনীর হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলার অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন নাহিদ রানা। প্রথম তিন রাউন্ডে ছিলেন সাইডবেঞ্চে। কিন্তু রোববার সন্ধ্যায় তার মুঠোফোনে হুট করে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের ইনচার্জ শাহরিয়ার নাফিসের ফোন। ফোনের ওপার থেকে এলো খুশির বার্তা, ‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট স্কোয়াডে তোমাকে রাখা হয়েছে। দলের সঙ্গে যোগ দিতে মঙ্গলবার যেতে হবে সিলেট।’

ওই এক ফোনে আনন্দের সীমা ছাড়িয়ে যায় নাহিদ রানার ভুবনে। পেছনে ফিরে দ্রুতগতির পেসার ডুব দেন নিজের বিস্ময়কর ক্রিকেট যাত্রায়। ২০২০ সালে প্রথম ক্রিকেট বলে বোলিং শুরু। এক বছর পর বিভাগীয় দলের হয়ে জাতীয় লিগে অভিষেক। অভিষেক মৌসুমে সাদামাটা থাকলেও তার ভেতরের বারুদ সম্পর্কে জেনে গিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তাই পরের বছরে তাকে ঘিরেই রাজশাহী বিভাগ সাজায় পরিকল্পনা।

নাহিদ পেছনে ফিরে তাকাননি। এক মৌসুমে ৩২ উইকেট নিয়ে আলো ছড়ান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট তুলে চলে আসেন লাইমলাইটে। এরপর কেবল এগিয়ে যাওয়া। সাফল্যের মই বেয়ে কেবল উপরে উঠা। দেশকে প্রতিনিধিত্বের যে স্বপ্ন নিয়ে ছয় আউন্সের বলটা হাতে তুলে নিয়েছিলেন ২০২০ সালে। চার বছরের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে সেই স্বপ্ন পূরণ হবার পথে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শুক্রবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট খেলতে নামবেন নাহিদ।

কেন নাহিদ আলাদা? চার বছরেই কিভাবে জাতীয় দলে চলে এলেন? সেই প্রশ্নর উত্তরে এবং তাকে বিশ্লেষণ করতে একটি শব্দই যথেষ্ট, গতি। দ্রুতগতির বোলার শব্দটা শুনলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস চতুষ্টয়ের ছবি ভেসে উঠে। সঙ্গে ব্রেট লি, শোয়েব আক্তারের বিধ্বংসী রূপ সামনে চলে আসে। তারা প্রত্যেকে ছিলেন গতির রাজা। নিজেদের দিনে ভয়ংকর। ব্যাটসম্যানদের জন্য হুমকি। নাহিদ রানা গতির সেই পতাকার বাহক। গতির ডানা মেলে টেস্ট রোমাঞ্চে ডুবে আছেন।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার নাহিদ। গতিই তার বোলিংয়ের বড় অস্ত্র। গত বিপিএলে ১৪৯.৭ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে। সঙ্গে ১৪৫-১৪৭ কিলোমিটার নিয়মিত বোলিং করে নিজের সামর্থ্য ফুটিয়ে তোলেন সবার সামনে। সেখান থেকেই নাহিদ এখন জাতীয় দলের দুয়ারে। তাকে দলে নেওয়ার পেছনে বড় কারণ গতি তা বলতে দ্বিধা করেননি নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক, ‘এই মুহূর্তে নাহিদই সম্ভবত দেশের সবচেয়ে গতিময় বোলার।’

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার বোলিং পারফরম্যান্স ঈর্ষণীয়। ১৫ ম্যাচে ২১.৯২ গড়ে ৬৩ উইকেট। নাহিদ রানার সঙ্গে এই টেস্টে আছেন আরেক পেসার মুশফিক হাসান। দুই পেসারই বেশ সম্ভাবনাময়। তবে নাহিদ গতিতে এগিয়ে থাকায় তাকে নিয়েই টিম ম্যানেজমেন্টের স্বপ্নটা বিশাল। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কথায় কিছুটা আঁচও পাওয়া গেল, ‘‘তারা প্রত্যেকেই উদ্দীপ্ত এবং বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময়। ১৪০ কি.মির গতিতে বোলিং করতে পারে। তবে তারা প্রত্যেকেই তরুণ, শক্তিশালী। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ার দুজন ভালোভাবে শুরু করেছে। প্রচুর বোলিং করেছে তারা। আমি দুজনের যেকোনো একজনকে এই ম্যাচে দেখার অপেক্ষায় আছি। হয়তো দুজনকেও।’

নাহিদ রানার বোলিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ দিক তার অ্যাকশন। একেবারেই সহজাত বোলিং অ্যাকশন। শরীরের গঠন লম্বা। তবে লিকলিকে। হাই আর্ম অ্যাকশন হওয়াতে বল ছোঁড়ার সময় বাড়তি গতি পান। শরীরের শক্তি কাজে লাগাতে পারেন দারুণভাবে। সরাসরি ক্রিকেট বলে অনুশীলন শুরু করায় বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলা হয়নি তার।

২০২০ সালে যখন ক্লেমন ইনডোরে অনুশীলনের জন্য ভর্তি হন তখন সহজাত অ্যাকশনেই বোলিং করতেন। কোচ আলমগীর কবির তার অ্যাকশনে পরিবর্তন আনেননি। বরং নাহিদ রানার অ্যাকশনই ঘষেমেঝে ঠিক করেছেন। এ নিয়ে আলমগীর কবির বললেন,‘ওকে আমরা যেভাবে পেয়েছি সেভাবেই রেখেছি। কারণ ওর অ্যাকশনের কারণে বাড়তি গতি জেনারেট করে। এটা ওর জন্য ভালো হয়েছে।’

তবে এই অ্যাকশন ক্ষতির কারণও হতে পারে। পেসারদের ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করতে হয়। নাহিদ রানাকে ইনজুরির সঙ্গে অ্যাকশনের লড়াইটাও করতে হবে। এজন্য তাকে যত্নে ব্যবহারের পরামর্শ আলমগীর কবিরের। রোমাঞ্চে ডুবে থাকা নাহিদ জানেন, নিজের যত্ন নিতে পারলেই লম্বা রেসের ঘোড়া হতে পারবেন তিনি। এজন্য করণীয় কি এরই মধ্যে জেনে নিয়েছেন, ‘আমি যতটা সম্ভব ফিট থাকতে চাই। ফিট থাকতে পারলে আমি খেলতে পারব।’

যে ভাবনায় নাহিদকে জাতীয় দলে নেওয়া হয়েছে। যে পরিকল্পনায় তাকে বিবেচনা করা হয়েছে দ্রুতগতির বোলার সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে দিতে চান, ‘আমি চেষ্টা করবো আমার সেরাটা দেওয়ার। স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলে খেলার। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পথে। আমার লক্ষ্য মূলত একটাই, সুযোগ পেলে দলকে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’

স্কোয়াডে আছে চার পেসার। সৈয়দ খালেদ, শরিফুলের সঙ্গে নাহিদ এবং মুশফিক। আদর্শ কম্বিনেশন কেমন হতে পারে সেই সম্পর্কে ধারণা দিতে চাইলেন না হাথুরুসিংহে,‘প্রত্যেকেই খেলতে পারে। তবে আমরা একাদশে দুজন বা তিনজনকে যুক্ত করতে পারি। আদর্শ কম্বিনেশন নির্ভর করছে আমাদের শক্তি এবং প্রতিপক্ষের সীমাবদ্ধতার ওপর।’

বাবা-মার দেওয়া কঠিন শর্ত (এসএসসির পর ক্রিকেট), কন্টকাকীর্ণ পথ ছাড়ানো, নিজের চড়াই-উতরাইয়ের নানা স্তর পেরিয়ে নাহিদ রানা জীবনের সবচেয়ে বড় মাহেন্দ্রক্ষণের রোমাঞ্চে ডুবে আছেন। সাদা ধবধবে পোশাক, লাল বল হাতে ২২ গজে ছুটছেন; এমন স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেওয়ার অপেক্ষায়।

সিলেট/ইয়াসিন/বিজয়

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়